ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স

ব্যাংকিং ও বীমা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা এবং ক্যারিয়ার

রাজধানীর একটি ব্যাংকে ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন একজন গ্রাহক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

একটি দেশের আর্থিক কাঠামো বহুলাংশে ওই দেশের ব্যাংকিং বীমা ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখে। অন্যদিকে বীমা ব্যবস্থা বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশেষ করে কভিড-পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং বীমা ব্যবস্থা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কভিড মহামারী আমাদের আর্থিক ব্যবস্থায় এক আমূল পরিবর্তন এনেছে। ব্যাংক বীমা খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন পরিবর্ধন সাধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাতে দক্ষ জনবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে। কারণ এখন ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবা প্রদানের দিকে মনোযোগী হয়েছে।

তাই গতানুগতিক ব্যাংকিং বীমা জ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই ব্যাংকিং বীমা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা এখন সময়ের দাবি। তাই প্রযুক্তিবিদ্যা এবং ব্যাংক বীমা বিষয়ে জ্ঞান থাকা সম্যক প্রয়োজন। অবস্থায় একজন প্রযুক্তিবিদের যেমন ব্যাংকিং বীমা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন, তেমনিভাবে ব্যাংকিং বীমা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জন প্রয়োজন। যুগের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংক বীমা খাতে এখন ব্লক চেইন, ফিনটেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

আজকের বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রত্যেকেই আর্থিক কৌশল এবং নীতির ওপর নির্ভর করে। ছোট স্টার্টআপ থেকে শুরু করে বড় করপোরেশন, কর্নার শপ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সুপারমার্কেট চেইন, আইন সংস্থা থেকে বীমা কোম্পানিতাদের সবারই অর্থ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। প্রযুক্তির চলমান পরিবর্তন এবং ব্যবসায়িক শিল্পে যে বিপ্লবই ঘটুক না কেন, শত শত বছর ধরে স্থির একমাত্র জিনিসটি হলো ব্যাংক খাতে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা।

অন্যদিকে বীমা খাতও যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এটি দেশের বেকার সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের অর্থায়নে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের স্নাতকদের প্রায় ৪৭ শতাংশ বেকার, যেখানে ভারত পাকিস্তানে হার অনেক কম। একজন বেকার স্নাতক আর্থিক সহযোগী হিসেবে বীমা খাতে তার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। বীমা কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা পরিচালনা বা হিসাব সংরক্ষণ অন্য যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন। গতানুগতিক লেখাপড়া করে বীমা শিল্পে সুদক্ষ হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম। পেশাগত শিক্ষা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ছাড়া বীমা শিল্পের প্রসারতা বা আধুনিকায়ন প্রায় অসম্ভব। তাই বীমার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সহজ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া উচিত। বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণসহ বীমার বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন করা আবশ্যক। এতে বীমার প্রসারতা বাড়বে। দক্ষ পেশাদার জনবল তৈরি হবে।

পরিশেষে, ব্যাংক বীমা খাত আরো আধুনিক যুগোপযোগীভাবে গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন উদ্ভাবন প্রয়োজন। আর তা করতে পারে বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি। তাই ব্যাংকিং বীমা বিষয়ে জ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা আমাদের ব্যাংক বীমা খাতকে দেশের অর্থনীতিতে তথা বিশ্বপরিমণ্ডলে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।

 

অধ্যাপক . আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন