পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের পর্ষদ কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় পরিকল্পনায় সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানিটির এ সংশোধিত প্রস্তাবে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেন শেয়ারহোল্ডাররা। এক মূল্যসংবেদনশীল তথ্যে বিষয়টি জানিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটি।
তথ্য অনুসারে, কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও নতুন উৎপাদন লাইনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির কথা বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে তাদের সংগৃহীত ৭৫ কোটি টাকার তহবিল ব্যয় পরিকল্পনায় সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেএমআই হসপিটালের আইপিও প্রসপেক্টাসে অনুমোদিত অর্থ ব্যয় পরিকল্পনা অনুসারে জমি ক্রয় ও জমি উন্নয়নের জন্য ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় করার কথা রয়েছে। কোম্পানিটি এজন্য ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইপিও তহবিল সংগ্রহ পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে এ অর্থ ব্যবহার করার কথা ছিল। এরই মধ্যে ৩৪ ডেসিমল জমি কিনেছে কোম্পানিটি। ভবন ও নির্মাণ ক্ষেত্রে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হয় কোম্পানিটির আইপিও প্রসপেক্টাসে। এজন্য কোম্পানিটি মাত্র ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করতে চায়। প্রসপেক্টাসে ভবন ও নির্মাণ ব্যয়ের জন্য এক বছর সময় দেয়া হলেও কোম্পানিটি এ সময় বাড়িয়ে দুই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রস্তাব করেছে। প্রসপেক্টাসে এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির কারখানা ও যন্ত্রপাতি উন্নয়নের জন্য ২৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে এ প্রকল্পে ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া কোম্পানিটি পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য সাধারণ সুবিধা বাড়ানোর জন্য প্রসপেক্টাসে এক বছরের মধ্যে ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় করার অনুমোদন পেয়েছিল। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে এ প্রকল্পে কোম্পানিটি ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করবে। ঋণ পরিশোধের জন্য ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছিল কোম্পানিটিকে। এ ঋণ এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। প্রসপেক্টাসে কোম্পানিটিকে আইপিও খাতে ব্যয়ের জন্য ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এ খাতে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এর বাইরে একই সময়ের মধ্যে বীমা, শুল্ক ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ খাতে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করবে কোম্পানিটি।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির এজিএমে একই সঙ্গে সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য ঘোষিত সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল সদ্যসমাপ্ত বছরের ৩০ নভেম্বর। ২০২১-২২ হিসাব বছরে জেএমআই হসপিটালের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ২৫ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ৫০ পয়সা। এ বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩৮ টাকা ৮৪ পয়সায়। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১ টাকা ৪৯ পয়সায়।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জেএমআই হসপিটালের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৯ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৪ পয়সা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৪৯ পয়সায়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৩১ মার্চ থেকে ডিএসইতে লেনদেন শুরু করেছে জেএমআই হসপিটাল। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।