করিডোর

আমি পুরোদস্তুর শিল্পী হতেই চেয়েছি

ছবিমেলা শূন্যতে প্রদর্শিত শিল্পী জুয়েল এ রবের আঁকা ‘ফ্রোজেন সং’ প্রজেক্টের দুটি চিত্রকর্ম

জুয়েল রব একজন ভিজুয়াল আর্টিস্ট। মালয়েশিয়া, ভারত, ফ্রান্স, নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ দেশ-বিদেশের নানা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। ২০১৮ সালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সুবীর চৌধুরী কিউরেটরিয়াল গ্র্যান্ট অর্জন করেন

শৈশব শিল্প

আমাদের ছোটবেলাটা শুরু হয়েছিল পত্রিকা আর বিটিভিতে কার্টুন দেখে। বইমেলায় গেলে বাবা কমিক বই কিনে দিতেন। স্কুলেও যেসব বাংলা বা অন্যান্য বই ছিল, সেখানে শিল্পী হাশেম খান থেকে শুরু করে আরো অনেকের ড্রয়িং ছিল। সেসবই এক ধরনের ভালোলাগা তৈরি করত ছোটবেলায়। সেই সঙ্গে চারু কারু নামে একটা বিষয় ছিল আমাদের। সেখান থেকেই মূলত জয়নুল আবেদিন, এসএম সুলতান সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এরপর ধীরে ধীরে পরিধিটা বাড়ে।

স্বচ্ছন্দের মাধ্যম

এখন আর্টের যে ভাষা সেখানে মাধ্যম তেমন ম্যাটার করে না, ম্যাটার করে বিষয়। একই ধরনের জিনিস বিভিন্ন মাধ্যমে গেলে সেটার ভিজুয়াল বদলে যায়। অনার্স-মাস্টার্সের সময়ে আমাকে পেইন্টিং করতে হতো, কিন্তু যখন সমকালীন চর্চায় ঢুকলাম দেখলাম মাধ্যম ধরে শিল্পকর্ম করা এখন আর গণনায় আসে না। আমি মূলত পেইন্টিং, ড্রয়িং, অডিও ভিজুয়াল, ইনস্টলেশন আর্ট, ভিডিও আর্ট করি, পারফরম্যান্স আর্ট নিয়ে কাজ করি। অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়েও কাজ করছি। পাশাপাশি ২০১৪-তে শুরু করেছি কিউরেশন প্র্যাকটিস।

প্রিয় শিল্পী কাজ

সংখ্যাটা অনেক, যারা আমাকে প্রচণ্ডভাবে উত্সাহিত করেন। এসএম সুলতানের কাজ আমার অনেক ভালো লাগে। জয়নুল আবেদিনের কথা অবশ্যই বলব। এছাড়া সফিউদ্দীন স্যার আর কিবরিয়া স্যারও আছেন। বাইরের দেশের শিল্পী বলতে সালভাদর দালি আমাকে খুব টানে। পারফরম্যান্স আর্টিস্ট উলের কথাও বলতে হবে। সময়ে বাংলাদেশের নাইম মোহাইমেন, মাহবুব রহমান, তৈয়বা বেগম লিপি, ইয়াসমিন জাহান নূপুর, নাজমুন নাহার কেয়া, প্রমথেশ দাস পুলকের কাজ দেখেও অনেক বেশি উত্সাহিত হই।

কাজ-প্রদর্শনী-পুরস্কার

২০১৭ সালে ভেনিস ইন্টারন্যাশনাল পারফরম্যান্স আর্ট ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করি। ২০২১ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী ছবিমেলা শূন্যতে কাজ করেছি। সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ২০১৭ সালে ডকুমেন্টার ১৪তম সংস্করণে গবেষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি। জার্মানির কাসেল শহরে পাঁচ বছর পরপর বসে আয়োজন। সেবার যৌথভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল জার্মানি গ্রিসে। ২০২২ সালে ডকুমেন্টার ১৫তম প্রদর্শনীতেও আমি সম্পৃক্ত ছিলাম বৃত্ত আর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে। ২০১৯ সালে বেঙ্গল থেকে আমি সুবীর চৌধুরী কিউরেটরিয়াল গ্র্যান্ড অর্জন করি, যা বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চালু করা বাংলাদেশের প্রথম কিউরেটরিয়াল গ্র্যান্ড। এখন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে আমার কিউরেশনে রিভার ডেল্টা শিরোনামের নদীবিষয়ক গবেষণা শিল্পকলা প্রদর্শনী। আমি পুরোদস্তুর শিল্পী হতেই চেয়েছি। সায়েন্সে পড়াশোনা করেও চারুকলায় ভর্তিও হয়েছি পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে। চর্চা করতে এসে দেখি শিল্পী হতে গেলে আরো অনেক কিছু দরকার হয়। কারণ আমাদের উদ্যোক্তার অনেক অভাব। সরকারের আন্তরিকতা বাজেটে কমতি না থাকলেও সরকারি পর্যায়ে যে কয়েকটা প্রদর্শনী করা হচ্ছে সেখানে যারা দায়িত্বশীল তাদের বিচার করার ক্ষমতার মধ্যে অনেক ঘাটতি আছে। সেখান থেকেই আমি ভাবি, শুধু নিজেকে গড়ে তুললে হবে না। আমি যে সমাজে বসবাস করি, তাদের সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নমূলক কিছু করলে উত্কর্ষ সাধন করা সম্ভব। তাই ২০১৪ সাল থেকে একটা সংস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমার মূলত স্বপ্ন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা, যেখান থেকে আমাদের শিল্পীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করতে পারবেন এবং নিজের শেকড়ের কথা বুঝাতে পারবেন। 

আর্টক্যাম্প-রেসিডেন্সি

দেশীয় আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে আমি অংশ নিয়েছি। ২০২১ সালে পুনে, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু ঢাকায় গ্যেটে আর্ট ইনস্টিটিউটের আয়োজনে স্মার্টার ডিজিটাল রিয়ালিটি রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। ২০১৯ সালে কোরিয়ায় এশিয়ান কালচারাল কাউন্সিলে রেসিডেন্ট কিউরেটর হিসেবে ছিলাম। গোয়ায় এইচএইচ আর্ট স্পেসেও ছিলাম ২০১৬ সালে।

 

গ্রন্থনা: শর্মিলা সিনড্রেলা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন