
সদ্যপ্রয়াত পোপ ষোড়শ
বেনেডিক্ট ভ্যাটিকানের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব। সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ধর্মীয়
পদে থেকে তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অনেক বিরূপ পরিস্থিতি। যার অনেকটাই উঠে এসেছিল
‘দ্য টু পোপস’ ছবিতে। ফারনান্দো মেইরেলেসের পরিচালনায় মুক্তি পায় ২০১৯ সালে।
বেনেডিক্ট গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ উপলক্ষে তার দায়িত্ব ছাড়ার ঘটনাটি বারবার আলোচনায় এসেছে। তার পদত্যাগ এ কারণে অনন্য যে, ১৪১৫ সালে পোপ সপ্তম গ্রেগরির পদত্যাগের ৬০০ বছর পর একই ঘটনার সাক্ষী হয় ভ্যাটিকান।
পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট। ছবি: রয়টার্স
বড় বাজেট ও বায়োপিকের
চিত্রনাট্যের জন্য হলিউডে পরিচিত অ্যান্থনি ম্যাকার্টেন। ‘দ্য টু পোপস’-এ বেনেডিক্টের
সঙ্গে তিনি বেছে নিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিসকে।
বুয়েন্স আয়ার্সের আর্চবিশপ ছিলেন হোর্হে মারিয়ো বার্গোগলিও। জেসুইট পাদ্রী হিসেবে আর্জেন্টিনায় ক্যাথলিক মতবাদের দ্রুত প্রসারে তিনি ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে জোসেফ র্যাটজিঙ্গার বেড়ে ওঠেছেন ক্যাথোলিক একাডেমিক হিসেবে। মিউনিখ ও ফ্রেইসিঙের আর্চবিশপ ছিলেন তিনি। পোপ দ্বিতীয় জন পলের অধীনে ভ্যাটিক্যানের ধর্মতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ২০০৫ সালে পোপ বেনেডিক্ট হিসেবে নির্বাচিত হন র্যাটজিঙ্গার। তার মেয়াদেই চার্চের বিরুদ্ধে শিশু হয়রানির অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি বারবার এর বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। ২০১০ সালে পাদ্রীদের জন্য প্রণয়ন করেছেন নতুন নীতিমালা। তবু ২০১৩ সালে হঠাৎ বয়স ও স্বাস্থ্যহানিকে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তার পদত্যাগের পর পোপ ফ্রান্সিস হিসেবে নির্বাচিত হন হোর্হে মারিয়ো বার্গোগলিও।
‘দ্য টু পোপস’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স
সিনেমাতে বেনেডিক্ট
ও ফ্রান্সিস চরিত্রে দেখা যায় যথাক্রমে অ্যান্থনি হপকিন্স ও জোনাথান প্রাইসকে। শুরুটা
হয়েছে পোপ দ্বিতীয় জন পলের মৃত্যু দিয়ে। পোপ নির্বাচনে বেনেডিক্ট জয়ী হলেও তখন দ্বিতীয়
অবস্থানে ছিলেন ফ্রান্সিস। এর সাত বছর পর পাদ্রিদের দ্বারা শিশু নিগ্রহণের ঘটনা বিশ্বজুড়ে
হৈচৈ তোলে। চার্চের বিরুদ্ধে ওই ঘটনার ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
বার্গোগলিও আর্চবিশপের
পদ থেকেই পদত্যাগপত্র জমা দেন, কিন্তু ভ্যাটিকান তার সিদ্ধান্তে সাড়া দেয়নি। ফলে বার্গোগলিও
সশরীরে ভ্যাটিকান পৌঁছেন পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার জন্য। সেখানে বর্তমান ও হবু দুই পোপ
মুখোমুখি হন। তাদের মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ধর্মীয় বেশকিছু
মতবাদে তাদের পার্থক্য ছিল। তবে সত্যিকার অর্থে তখন দুজনের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছিল
তা জানার জো নেই। কিন্তু ম্যাকার্টেনের লেখায় চমকপ্রদভাবে ওঠে এসেছে দুই পোপের অবস্থান।
এই আলোচনার পর বছর না ঘুরতেই পদত্যাগ করেন পোপ বেনেডিক্ট, পোপের দায়িত্ব নেন ফ্রান্সিস। সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, দুই পোপ একসঙ্গে আর্জেন্টিনা ও জার্মানি মধ্যকার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দেখছেন।
‘দ্য টু পোপস’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স
ক্যাথোলিক খ্রিষ্টধর্মের
সর্বোচ্চ পদ পোপ। একসঙ্গে দুই পোপ থাকার নজির নেই। ফলে দুই পোপ নামটাই বৈপরীত্যপূর্ণ।
এতদিন পূর্ববর্তী পোপের মৃত্যুর পর পরবর্তী পোপ নির্বাচিত হতেন। কিন্তু বেনেডিক্ট পদত্যাগ
করে স্বতন্ত্র অবস্থান 'পোপ এমিরেটাস' গ্রহণ করেন। কার্যত পদত্যাগ করলেও খ্রিষ্ট দুনিয়ার
জন্য এটা নতুন অভিজ্ঞতা। লেখকের কল্পনাশক্তির মিশেল ঘটলেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার
টানাপোড়েন চিত্রিত হয়েছে সফলভাবেই।
বক্স অফিস ও সমালোচকদের
কাছে থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল ‘দ্য টু পোপস’। চিত্রনাট্যের জন্য লাভ করে হলিউড
ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস ও ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসে একাধিক
বিষয়ে মনোনয়নও পায়।