
মহামারীর কারণে টানা তিন বছর বন্ধ থাকার পর শুরু হলো ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল। গতকাল বাংলা একাডেমিতে পর্দা উঠেছে এ আয়োজনের দশম আসরের, যা হয়ে উঠেছে দেশী-বিদেশী লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের মিলনমেলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ২০২১ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ, ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী একেএম খালিদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা। এছাড়া লিট ফেস্টের তিন পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায ও আহসান আকবারও উপস্থিত ছিলেন।
নোবেলজয়ী গুরনাহ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমি বাংলাদেশে এসেছি। এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। অনুষ্ঠানের শুরুটা আমার কাছে চমকপ্রদ লেগেছে। সেই সঙ্গে লিট ফেস্টের সব ইভেন্টে এমন কিছু দেখব বলে প্রত্যাশা করছি, যা আগে দেখিনি।’
বাংলাদেশের সঙ্গে পৈতৃক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘আমার মায়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ। আমার দাদি মাদারীপুর জেলার। সারা জীবন তিনি মাদারীপুরের ভাষায় কথা বলেছেন, যার ফলে আমি চমৎকার এ ভাষা শুনে বড় হয়েছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ, বাংলা ও বাঙালি আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এখন নিউইয়র্ক বা ভেনিসে গিয়ে বাংলা ভাষা শুনে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।’
এ সময় ইতালির অভিবাসন ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এ ভারতীয় লেখক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করে। এদের বেশির ভাগই তরুণ। যে পথ পাড়ি দিয়ে তারা ইতালি পৌঁছেছে, সে গল্পগুলোও শুনেছি। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে অভিবাসী হওয়ার গল্পগুলো খুবই স্পর্শকাতর।’
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা নতুন এক বাংলাদেশ দেখছি। দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বে নেতৃত্বের স্থানে রয়েছে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ জিডিপি ও সব সামাজিক পরিমাপকের দিক দিয়েও বাংলাদেশ নিজেকে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে তুলে ধরেছে। অতএব বাংলাদেশের উদযাপন করার মতো অনেক অর্জন আছে।’
প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী একেএম খালিদ বলেন, ‘ঢাকা লিট ফেস্ট দেশী-বিদেশী চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিকদের মিলনমেলা। এ আয়োজন আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে দ্যুতি ছড়াবে। সামনের দিনে আরো জোরালোভাবে এ আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
এ সময় ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ মহামারীতে হারানো প্রিয়জনদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক আলোচনা, বিতর্ক ও সৃজনশীলতার স্ফুলিঙ্গ দেখা যাবে। কী ঘটবে আগে থেকে ধারণা করা খুব কঠিন। আমরা আশা করি, এ নবস্ফুলিঙ্গ এখানে জেগে উঠবে। কীভাবে জানি না, তবে হবে অবশ্যই।’
ঢাকা লিট ফেস্টের প্রযোজক ও পরিচালক সাদাফ সায বলেন, ‘মহামারী আমাদের একে অন্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। মহামারী আমাদের শিখিয়েছে যে আমাদের একে অন্যকে কত প্রয়োজন। মহামারী আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে নতুন করে বাঁচতে হবে।’
আরেক পরিচালক আহসান আকবার বলেন, ‘আমরা জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কী, কিন্তু আমরা সেটি সাজাতে পারি। আগামী চারদিন ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজনে আমরা একে অন্যের কাছ থেকে শিখব।’ আয়োজকরা জানান, চারদিনের এ আয়োজনে থাকবে কথোপকথনের বৈচিত্র্যময় মিশ্রণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সেশন, শিশু ও তরুণদের জন্য বিশেষ আয়োজন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সংগীত, নাট্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
২০১২ সালে শুরু হওয়া সাহিত্যিকদের এ মিলনমেলা মহামারীর কারণে তিন বছর বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর গতকাল আবার শুরু হলো এ আয়োজন। উদ্বোধনী দিনে মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল ও রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফেস্টের আনুষ্ঠানিকতা।
দশম লিট ফেস্টে আরো আসছেন ২০২২ সালের বুকার পুরস্কারজয়ী কথাশিল্পী গীতাঞ্জলী ও শেহান করুণাতিলাকা। আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী আরো অনেক বিখ্যাত লেখক উপস্থিত থাকবেন এতে। ৮ জানুয়ারি শেষ হবে এবারের আয়োজন।