এভিয়েশন

এভিয়েশনে উচ্চশিক্ষার নতুন দিগন্ত

শফিকুল ইসলাম

লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

আকাশের শুরু থেকে শেষ, মহাকাশ ছাড়িয়ে আরো বহু দূরে। মহাকাশের বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকেবাণিজ্যিক উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে সামরিক বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন, রকেট, স্যাটেলাইট কিংবা মিসাইলসব কিছুই পেতে হবে। রূপক অর্থে এটাই যে লক্ষ্য, তা বলে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে লেখা স্পেস অ্যান্ড বিয়ন্ড বাক্যটি। অবশ্য আমেরিকার বিখ্যাত লেখক রেমন্ড আলমিরান মন্টগোমারির চুজ ইউর ওউন অ্যাডভেঞ্চার সিরিজের একটি বইও রয়েছে নামে। লেখক বলতে চেয়েছেন, ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

দেশের এভিয়েশন মহাকাশ জগতের ভবিষ্যৎ স্বপ্নযাত্রা কেমন হবে, তা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই রচনা করবেন। নিজস্ব গবেষণাগারে দেশীয় প্রযুক্তিতে উড়োজাহাজ তৈরি কিংবা নিজেদের তৈরি স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করে মহাকাশে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের অবস্থান জানান দেয়ার স্বপ্নে বিভোর শিক্ষার্থীরা। তাদের হাত ধরেই স্বপ্নযাত্রার শুরু হবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।

অ্যারোস্পেস বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মহিমা আলম লোপা বলেন, এভিয়েশন শিল্পে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা রয়েছে, প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছি এখানে। আমরা নিজেরাই নিজেদের এয়ারক্রাফট, মিসাইল তৈরির স্বপ্ন দেখি। আমাদের নিজস্ব তৈরি করা সামরিক সারঞ্জাম থাকবে।

দেশে এভিয়েশন বিষয়ে প্রথম স্নাতক ডিগ্রি দেয়া শুরু হয় ২০০৭ সালে। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শুরু হয়েছিল বিষয়ে পড়াশোনা। কিন্তু এভিয়েশন অ্যারোস্পেস বিষয়ে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিএসসি ইন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স অব বিজনেস স্টাডিজ ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট এভিয়েশন সেফটি অ্যান্ড অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশনমোট তিনটি ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এলাকায় বিমান বাহিনীর তৈরি ভবনে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। গত বছরের জুলাইয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কোর্সের একাডেমিক সেশন। লালমনিরহাটে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জমি অধিগ্রহণ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন। এছাড়া স্নাতকোত্তর কোর্সগুলো পরিচালিত হচ্ছে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্নাতক পর্যায়ে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এভিয়োনিকস দুটি বিভাগে পড়ার সুযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ন্যূনতম .৫০ জিপিএ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ৩০ জন করে দুই বিভাগে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পায়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দেয়া হয় পাঁচটি ডিগ্রি। এগুলো হলোএমএসসি ইন এভিয়েশন সেফটি অ্যান্ড অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন, এমএসসি ইন স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইন স্পেস সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট, এলএলএম ইন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস ল।

উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ জনবল গড়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিএসসি ইন এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং (অ্যারোনটিক্যাল এভিয়োনিকস); এমএসসি ইন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এমএসসি ইন এভিয়োনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে। ড্রোন বিষয়ে গবেষণার জন্য চালু হবে এমএসসি ইন অটোনমাস সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি অনুষদের অধীনে ৪৫টি বিভাগে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন নয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক মানের এভিয়েশন মেইনটেন্যান্স ইনস্টিটিউট, বিশ্বমানের এভিয়েশন শিল্পের সহযোগিতায় উড়োজাহাজ নির্মাণ, মেরামত পরিচালনায় স্বনির্ভর হবে দেশ।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উড়োজাহাজ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এগিয়ে চলছে স্যাটেলাইট তৈরির কাজও। এর অন্যতম গবেষণা প্রজেক্ট পিকো-স্যাটেলাইট ফর বাংলাদেশ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের (এনওএএ) আবহাওয়া স্যাটেলাইট বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায়। সময় আমাদের দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে স্যাটেলাইটটির তোলা ছবি অডিও সিগন্যালের মাধ্যমে লালমনিরহাট ক্যাম্পাসে স্থাপিত গ্রাউন্ড স্টেশন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। পিকো-স্যাটেলাইট দিয়ে বাংলাদেশেই তাত্ক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি বা ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে জানান প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর ইনভেস্টিগেটর, স্পেস কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেভিগেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. সামিন রহমান। প্রজেক্টের প্রিন্সিপ্যাল ইনভেস্টিগেটর সুপারভাইজার অধ্যাপক . নাজমুল উলার তত্ত্বাবধানে ৩২ জন শিক্ষার্থী শিক্ষক একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন একটি আশা নিয়ে, একদিন গ্রাউন্ড স্টেশনেই, নিজেদের তৈরি স্যাটেলাইটের বিভিন্ন ছবি সংরক্ষিত হবে।

বিএসএমআরএএইউর এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন এয়ার কমডোর (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এভিয়েশন অ্যারোস্পেস বিষয়ে শিক্ষার সঙ্গে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। খাতের শিক্ষা গবেষণায় দেশ এগিয়ে যাবে। হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই শুনবেন বাংলাদেশ দেশের তৈরি রকেট উেক্ষপণ করবে, নিজস্ব উড়োজাহাজ তৈরি করবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীরাই নিজস্ব স্যাটেলাইট বানাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি অবশ্যই হবে, ইনশাআল্লাহ। এভাবেই আমরা স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতার আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সোনার বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ২০৪১ রূপকল্পের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন