এভিয়েশন

স্বপ্নের ক্যারিয়ার

দেশে এভিয়েশন নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের ছবি: মাশফিকুর সোহান

এভিয়েশন শিল্প অর্থনৈতিক সামাজিক অগ্রগতির নিরিখে তাত্পর্যপূর্ণ। এটি মানুষ, দেশ সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। বিশ্বায়ন, শিল্পায়ন এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য স্থানীয় অর্থনীতি উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক একীকরণেও এটি ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন সম্প্রসারণের প্রবণতার সূচকগুলোর মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল সবচেয়ে এগিয়ে। গত দুই দশকে এয়ার ট্রাভেল চাহিদা বাংলাদেশে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্লোবাল এয়ার ট্রাভেল চাহিদার সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজের যাতায়াত বেড়েছে দশমিক শতাংশ, অভ্যন্তরীণ যাত্রীর তুলনায় আন্তর্জাতিক যাত্রী বৃদ্ধি পেয়ে দশমিক শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজের যাত্রীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে তিন গুণ হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল হবে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ পরিবহন বাজার। বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্প সম্প্রসারণের বিশ্বব্যাপী প্রবণতা থেকে নিঃসন্দেহে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই প্রয়োজন হবে দক্ষ জনবল। হাতছানি দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

এভিয়েশন শিল্পে সম্ভাবনার পাশাপাশি আমাদের দেশে -সংক্রান্ত শিক্ষা গ্রহণের যে সুযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে ধারণা না দিলে হয়তো ক্যারিয়ার গড়ার পথগুলো সহজে অনুমেয় হবে না। তাই দেশের প্রেক্ষাপট জানাও জরুরি। দেশে অ্যারোনটিক্যাল এবং অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। খুব সহজভাবে বলতে গেলে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে উড়োজাহাজ নিয়ে পড়াশোনা, গবেষণা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ যেগুলো আমাদের প্রতিনিয়ত যাতায়াতের কাজে ব্যবহার হয়। যেমন এক বা দুই আসনবিশিষ্ট প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ, গুরুতর অসুস্থ রোগীর পরিবহন সেবার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ব্যবহূত মিলিটারি উড়োজাহাজ, পণ্য পরিবহনের জন্য কার্গো উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, হালের ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ইত্যাদি। আর অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে মহাকাশযান নিয়ে পড়াশোনা, যেখানে প্রধান লক্ষ্য থাকে স্যাটেলাইট বানানো এবং মহাকাশে প্রতিস্থাপন, রকেট উড্ডয়ন, মিসাইল উেক্ষপণ ইত্যাদি। লক্ষ্য ভিন্ন হলেও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনার বিষয়বস্তু প্রায় একই থাকে, যেখানে একজন শিক্ষার্থী চতুর্থ বর্ষে এসে অপশনাল কোর্স নির্বাচন এবং রিসার্চ ওয়ার্ক প্রজেক্টের মাধ্যমে তার পছন্দ অনুযায়ী ফিল্ডঅ্যারোনটিক্যাল বা অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে এতক্ষণে নিশ্চয়ই একটু ধারণা তৈরি হয়েছে। এবার আবার ক্যারিয়ারে ফিরে যাই।

এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেসের ক্ষেত্র বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক এয়ারলাইনসগুলোয় প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স, টেকনিক্যাল সার্ভিসেস মেইনটেন্যান্স ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদি সেকশনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দক্ষ কর্মীর অভাবে বাণিজ্যিক এয়ারলাইনসগুলোকে এখনো বিদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর ভরসা করতে হয়। আরেকটি বড় কারণ হলো ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বড় অংশ এয়ারলাইনস থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে উচ্চ বেতনে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন নামকরা এয়ারলাইনসে কাজ করতে চলে যায়। স্নাতক পাস করার পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শর্ট কোর্সে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সংশ্লিষ্ট অফিসার হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া মহাকাশ গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করেছে, যেখানে অ্যারোস্পেস এবং এভিয়োনিকস বিষয়ে স্নাতক স্নাতকোত্তরদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তাছাড়া সিভিল এভিয়েশনে এয়ারক্রাফট ইন্সপেক্টর, অ্যারোড্রোম ম্যানেজার, অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেটর ইত্যাদি সেকশনে কাজ করার জন্য অ্যারোস্পেস এবং অ্যাভিওনিকস স্নাতকদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

এভিয়েশন শিল্পে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। পাইলট, কো-পাইলট ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, উড়োজাহাজ এবং এভিয়োনিকস মেকানিকস, বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক, পরিবহন নিরাপত্তা স্ক্রিনার, এয়ারফিল্ড অপারেশন বিশেষজ্ঞ, বৈমানিক প্রকৌশলী, গেস্ট রিলেশনস এক্সিকিউটিভ, ফেয়ার ফিলিং এক্সিকিউটিভ, রিজার্ভেশন এক্সিকিউটিভ, এয়ার টিকিট এক্সিকিউটিভ, ট্রাভেল ডেস্ক এক্সিকিউটিভ, ভ্রমণ সমন্বয়কারী, প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট ম্যানেজার, লাইন ক্যাপ্টেন এবং নেভিগেটর। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পদ হলোএয়ারক্রাফট ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলার বা টেকনিশিয়ান, বিমানচালক, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, কোয়ালিটি কন্ট্রোল পার্সোনেল, গ্রাউন্ড স্টাফ, এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার, এয়ারপোর্ট অপারেশন ম্যানেজার, এভিয়েশন মেইনটেন্যান্স টেকনিশিয়ান, ফ্লাইট স্টুয়ার্ড, স্টুয়ার্ডেস (এয়ারহোস্টেস) এবং এয়ার টিকিটিং স্টাফ। এভিয়েশন সেক্টরের কর্মজীবনে ভালো করার জন্য কারিগরি দক্ষতা এবং প্রকৌশল বিষয়ে দক্ষতা থাকার বিকল্প নেই।

 

সাইয়াফ বিন রায়হান

সহকারী অধ্যাপক

অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন