স্বপ্ন ও বাস্তবতার সেতু অ্যাভাটার

আসরার আবেদিন

সাইফাইয়ের সুবর্ণ সময় এটা নয়। দর্শক অপেক্ষায় থাকে প্রযুক্তির বদৌলতে সাজানো সুপারহিরো সিনেমার জন্য। কিন্তু এর মধ্যেও ভালো করে ফেলে দুয়েকটা সাইফাই। ঠিক এক বছর আগে দেনি ভিলেনোভের ডুন সে কাজটি করতে পেরেছিল। এদিকে এ বছর নতুন করে ফিরলেন জেমস ক্যামেরন। ১৩ বছর পর তিনি আনলেন অ্যাভাটারের সিকুয়াল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। ২০০৯ সালে অ্যাভাটারের একটি সাধারণ গল্পকে সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা ভিজুয়াল দিয়ে উপস্থাপন করেছিলেন। সে কারণেই এটি হয়ে উঠেছে সর্বকালের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা। 

এর প্রথম সিনেমাটি মুক্তি পেতে না পেতেই একটি মাইলফলক তৈরি করেছিল। অন্যান্য সিনেমার জন্য এটি হয়ে উঠেছিল অনুসরণীয়। একটা সময় জর্জ লুকাসের স্টার ওয়ারস যে জায়গা ধরে রেখেছিল, অনেকটা সে জায়গাই নিয়ে নেয় অ্যাভাটার। অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার ও মুক্তি-পরবর্তী সময়ের খরা কাটিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। প্রথম ১৪ দিনেই আয় করেছে ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু ২০০ কোটি ডলারে নির্মিত এ সিনেমার মুনাফা পেতে হলে বাজেটের অঙ্ক পার করতে হবে। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত খরচই ওঠেনি সিনেমার। সেখান থেকে প্রশ্ন উঠতেই পারে, পুরো বিষয়টি আসলে ক্যামেরনের স্বপ্ন, নাকি মরীচিকা?

ভ্যারাইটিতে ওয়েন গিলবারম্যান এ নিয়ে বলেছেন, ‘ক্যামেরন যখন সিকুয়ালটি নির্মাণের কথা বলেন, সে সময় আমার মনে হয়েছিল তার মাথা ঠিক আছে কিনা। এ কথা আমার মনে হয়েছিল, কেননা টাইটানিকের মতো একটি জনপ্রিয় ও চিরায়ত সিনেমার নির্মাতা এমন সিদ্ধান্ত কেন নেবেন।’ ওয়েন বলতে চেয়েছেন, এ গল্প লম্বা করার প্রয়োজন ছিল না।

কিন্তু ক্যামেরন সিনেমাটির সিকুয়াল নির্মাণ করলেন। শুরুতে সাড়া কম পেলেও ধীরে ধীরে ব্যবসা ভালোই করেছে কিন্তু দর্শক, এমনকি সমালোচকরাও বলেছেন সিনেমায় গল্প খুঁজে পাচ্ছেন না বা যেটুকু গল্প আছে, তা খুব সাধারণ। সে পুরনো গল্পকেই টেনে লম্বা করেছেন ক্যামেরন। ঠিক এমন কিছু দেখার জন্য তারা থিয়েটারে যাননি। সিনেমাটি ব্যবসায় ভালো করছে এবং এর অন্যতম কারণ ভিজুয়াল। এর বাইরে সিনেমাটি তেমন কিছু দিতে পারেনি। দ্য গার্ডিয়ানে মার্ক কারমন্ডে লিখেছেন, ‘ধীর গতির, রয়েছে হাস্যরসের অভাব। একমাত্র প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে নির্মিত সিনেমাটি এর পূর্ববর্তী সিনেমার তুলনায় নানা দিক থেকে পিছিয়ে আছে। রয়েছে নানা ভুলভ্রান্তি।’ জেমস ক্যামেরন অবশ্য এসব স্বীকার করবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা তিনি সিনেমাটি নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী।

অ্যাভাটারের এ সিকুয়ালের ক্ষেত্রে গল্প বা সিনেমার কোনো শুরু বা শেষ নির্দেশ করা যায় না। মনে হয় একটা জায়গা থেকে শুরু হয়েছে, যেটা অজানা কিংবা তার কোনো পূর্বসূত্র দেয়ার প্রয়োজন নেই। সিনেমাটি শেষ হয় এমন একটা জায়গায়, যার পরে অনেক কিছুই থাকতে পারে। অর্থাৎ," সত্যিকার অর্থে কোনো পরিণতি দেয় না। কিন্তু এর মধ্যেই উঠে আসে পরিবার, দলবদ্ধতা, সময় থেকে এগিয়ে যাওয়ার মতো নানা বিষয়। বিশেষত, যে সময়ের গল্প ক্যামেরন বলেছেন, সেখানেই পারিবারিক বন্ধনের মতো বিষয়গুলো তিনি রেখেছেন বা সময়টাকে তিনি সেভাবেই দেখেন। 

গড়পড়তা গল্পের অভিযোগ বাদে ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ নিয়ে দর্শক ও সমালোচকরা কম বেশি সবাই প্রশংসা করেছেন। কেননা, ক্যামেরনের অ্যাভাটার ফ্র্যাঞ্চাইজির মূল আকর্ষণ ছিল এর দৃশ্যায়ন, চিত্রায়ণ। সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা ক্যামেরন তার নতুন সিনেমায়ও দর্শককে নিয়ে যেতে পেরেছেন ভিন্ন এক দুনিয়ায়। যদিও এবারের সিনেমার গল্প খুবই সরল বলে মনে করেন দর্শকরা। তবে ভিজুয়ালেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ক্যামেরন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্যামেরন আর্থিক সফলতা পেয়েছেন কিন্তু সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। হলিউড রিপোর্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সফলতার বিষয়টি আমি অর্থ-সম্পদ দিয়ে বিবেচনা করি না। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও কাজের মধ্যে একটি যোগাযোগ থেকে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। সঙ্গে যুক্ত হয় স্থান। এগুলোই ব্যক্তিকে সমৃদ্ধ করে।’ 

এখান থেকেই বলা যায়, সিনেমার নতুন দুনিয়া তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে। কেননা, অ্যাভাটারের সিকুয়াল কতটা ব্যবসা করল, সেটা মুখ্য নয়। ক্যামেরনের জন্যও হয়তো ছিল না। তিনি নিজে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। বলা প্রয়োজন, অ্যাভাটারের পরিকল্পনা ক্যামেরন করেছিলেন টাইটানিক নির্মাণেরও আগে। কিন্তু অপেক্ষা করেছিলেন প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার। ফলে সিনেমা কতটা ব্যবসা করল, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে এবং এভাবে ক্রমাগত গল্পটিকে বাড়িয়ে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা যায়, ক্যামেরন সেটা প্রমাণ করেছেন। 

 তাই যে ‘অ্যাভাটার’ একদিন স্বপ্ন ছিল, তা আজ বাস্তব। এমনকি, সিনেমায় যা স্বপ্ন ছিল, আগামী দিনে তা বাস্তব হবে, তাই দেখিয়েছেন ক্যামেরন। বলা যায়, অ্যাভাটার আসলে স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যকার এক সেতু।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন