বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের ভূমিকা

ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম

মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের একটি গৌরবময় ইতিহাস। দীর্ঘ প্রতিকূল সময় পাড়ি দিয়ে রক্ত সাগর পেরিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মতো একটি শিশুরাষ্ট্রের প্রতি সে সময় যারা বন্ধু হয়ে হাত বাড়িয়েছিল তাদের মধ্যে জাপান অন্যতম। অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্রের উদাহরণ দিতে গেলে সবার আগে জাপানের কথাই উঠে আসে। সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা খাতে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পেছনে জাপানের ভূমিকা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। জাপান বাংলাদেশের মধ্যে আস্থা সহযোগিতার একটি শক্তিশালী বন্ধন দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল জাপান।

বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি জানানোর পরই শুরু হয় অর্থনৈতিক কারিগরি সহায়তা, সাংস্কৃতিক বিনিময় পারস্পরিক সফর কার্যক্রম, বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মৈত্রীর নবযাত্রা। গত দশ বছরে বাংলাদেশের যে অবিশ্বাস্য আর্থসামাজিক অগ্রগতি হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মহলে একটি উন্নয়নের অলৌকিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিগত পাঁচ দশকের সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়ন থেকে বলা যায়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাপানসহ দাতা দেশগুলোর সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অনেক বাধা অতিক্রম করে বিস্ময়কর উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায়, জাপানের কৌশলগত কূটনৈতিক এজেন্ডায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুক্তবাজার বাণিজ্যমুখী অর্থনীতির একটি দেশ। ধীরে ধীরে অঞ্চলের সবচেয়ে সম্ভাব্য লাভজনক বাজার হিসেবে বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সুলভ শ্রম এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্রুতগতিসহ ১৭ কোটি গ্রাহকের বাজার বাংলাদেশকে কৌশলগত কারণে জাপান বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।

এছাড়া জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আর্থসামাজিক থেকে শুরু করে বেসরকারি ব্যক্তিগত সম্পর্ক পর্যন্ত বিস্তৃত। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে একে অন্যকে সমর্থন করার মাধ্যমে সম্পর্কটিকে আরো শক্তিশালী করেছে। বিশেষ বাণিজ্যিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় জাপানের বাণিজ্য সম্প্রসারণ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরো প্রসারিত করবে। ফলে অঞ্চলের অর্থনীতিতে জাপান তার কৌশলগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

এজন্যই জাপানের অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরকে জাপানিরা দেখছে দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার যোগসূত্র স্থাপনকারী বন্দর হিসেবে। জাপানি কূটনীতিকদের বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

জাপানি বিনিয়োগে বাস্তবায়নাধীন আরেকটি মেগা প্রকল্প হলো রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় নির্মীয়মাণ প্রকল্পটিতে জাইকার অর্থায়ন ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে লক্ষ্যের চেয়েও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ। জাপানের বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ আঞ্চলিক বিনিয়োগ বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগের আগ্রহের কারণে সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে বিদেশী বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে জাপান এক বিলিয়ন ইউএস ডলারের বিনিয়োগ করেছে। ফলে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জাপান বাংলাদেশে অটোমোবাইল কারখানা স্থাপনের চিন্তা করছে, যেটি আড়াইহাজারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেই হবে। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সফলতার ভিত্তিতে চট্টগ্রামের মিরসরাই কক্সবাজারের মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকায় আরো দুটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে। আর শিল্পাঞ্চল উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন গতিশীল হবে।

১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে, জাপানি খাদ্য পণ্যসহায়তা দেশের খাদ্য ঘাটতি কমাতে এবং প্রয়োজনীয় আমদানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাদ্য ভারসাম্য সংকট মেটাতে সাহায্য করেছিল। ১৯৭৩ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশকে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া শুরু করে জাপান। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং শিল্প উৎপাদন অবকাঠামো সম্প্রসারণ সম্পর্কিত কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে জাপানের প্রকল্প সাহায্যের পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। ১৯৮০ সালের মধ্যে জাপান বাংলাদেশেরএকক বৃহত্তম দাতাদেশ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত জাপান বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৬,৮৭,৫৯১ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।

বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প, টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপানের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ দৃশ্যমান। জাপানের এসব বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমাগতভাবে উন্নত করতে সাহায্য করেছে এবং প্রত্যক্ষভাবে অর্থনৈতিক উন্নতির সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জাপানের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, পরিবহন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাপান আমদানি-রফতানি ব্যবসা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতেও সহায়তা দেয়।

জাপান বাংলাদেশকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন, বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীলকরণ, সামাজিক উন্নয়ন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। অনেকে উন্নয়ন বলতে শুধু ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নকে বুঝে থাকেন, কিন্তু উন্নয়ন বলতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বুঝিয়ে থাকে।

জাইকা মূলত ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রাযুক্তিক সহায়তা প্রদান করে। কিন্তু জাপান কোনো দেশ বা সমাজকে নিজ থেকে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়নে সহায়তা করে না। যদিও জাপানের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়নের অফুরন্ত শক্তি রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়নের তেমন কোনো শক্তি নেই। এই শক্তিহীনতা বাংলাদেশকে অন্য দেশের প্রতি নির্ভরশীল করে তুলছে। সেজন্য বাংলাদেশকে অন্য দেশের পরিকল্পনা প্রাযুক্তিক সহায়তা নিয়ে ভৌত অবকাঠামো গড়তে হচ্ছে।

অর্থাৎ অর্থ-সম্পদ হলো দেশের, কিন্তু পরিকল্পনা প্রযুক্তি হচ্ছে বিদেশের।

জাপান বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার এবং সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কারণ জাপান বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সামাজিক সেবা জাপানের অন্যতম একটি গুণ, যা তাকে অন্যান্য দেশের চেয়ে অনন্য করে তুলেছে। জাপানের বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ থাকে সামাজিক নিরাপত্তা সেবা খাতে।

দক্ষিণ এশিয়ায় জাপানের কৌশলগত-কূটনৈতিক এজেন্ডায় বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুক্তবাজার, বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতি এবং ধীরে ধীরে অঞ্চলে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় লাভজনক বাজার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। জাপান বাংলাদেশকে একটি সামাজিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবদান রাখছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অধীনে অর্জিত আর্থসামাজিক উন্নতির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সম্প্রদায়ের দ্বারাও প্রশংসিত হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বচিন্তার পথিকৃৎ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একক দাতা রাষ্ট্র হিসেবে জাপানের এই অবদান বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা পরিশেষে রূপকল্প ২০৪১-এর ৬০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনে সহায়তা করবে। বিদ্যুৎ খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাপান বাংলাদেশকে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করছে। এর মধ্যে প্রধান প্রকল্প মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬০০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প জাইকার সহযোগিতায় অর্জন করা হবে। প্রকল্প সফল করতে এরই মধ্যে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) জাইকার কাছ থেকে . বিলিয়ন ডলার লোন সহায়তা নিয়েছে। এটি মূলত একটি সহজ শর্তে ঋণ, যার বার্ষিক মুনাফা মাত্র .%, সময়কাল ৩০ বছর এবং ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডের সুবিধা দেয়া হয়েছে।

প্রকল্প সম্পন্ন হয়ে গেলে প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমবে এবং নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সক্ষমতাসহ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা যায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে নতুন নতুন কলকারখানার বিকল্প নেই এবং জাপানের সহায়তার ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের সমধিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে জাপান ইন্টারন্যাশনাল জাইকা ২০০৯-২০১০ সালে এসটিপিতে একটি বাস্তবায়ন মূল্যায়ন সমীক্ষা পরিচালনা করে, যাঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট স্টাডি’ (DHUTS-1) নামে পরিচিত। এটি অগ্রাধিকার সড়ক যোগাযোগ প্রকল্প হিসেবে মেট্রো লাইন--এর সুপারিশ করেছিল। জাইকা ২০১০-১১ সালে এমআরটি লাইন--এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে। যা  DHUTS-2 নামে পরিচিত। এমআরটি লাইন- হলো বিশাল পরিবহন চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সামগ্রিক গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (DMRTDP), এমআরটি লাইন--এর আনুষ্ঠানিক নাম ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২- একনেক দ্বারা অনুমোদিত হয় এবং ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩- জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার জাইকা থেকে ,৭৩,৭৫৭ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন ঋণ নেয়ার জন্য সম্মতি জানায়।

জাপানি এফডিআইয়ের লভ্যাংশ বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন এবং ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে। তবে জাপানের এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সমুদ্র বিমানবন্দর ছাড়পত্রে বিলম্ব, অদক্ষ মানবসম্পদ, ট্যাক্সসংক্রান্ত সমস্যা অর্থ প্রত্যাবাসন এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এর অন্যতম। ধরনের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের সক্ষমতা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করছিলেন। সেখানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য জাপানের সক্রিয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সাহায্যের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক সফরের পর থেকে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়। সময়ের পরিক্রমায় সেই সম্পর্ক আরো মজবুত হয়েছে। আগামীতেও বন্ধন অটুট থাকবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

. মো. জাহাঙ্গীর আলম: সহযোগী অধ্যাপক, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন