দুই বছরে দেড় কোটি ইউনিট

২০২৫ সাল নাগাদ ভারতে আইফোন উৎপাদন তিন গুণ বাড়বে

বণিক বার্তা ডেস্ক

তিন বছরের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করছে অ্যাপল। এতে ভারতে আইফোন উৎপাদনের হার তিন গুণ বেড়ে যাবে। বিষয়ে অবগত তিনটি আলাদা সূত্রে তথ্য জানা গিয়েছে। খবর টেকটাইমস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর তারা ভারতে যে পরিমাণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সেটি তিন গুণ বাড়তে পারে। আরেকজন ম্যানেজার জানান, স্থানীয় পর্যায়ে ফক্সকন, পেগাট্রন, উইস্ট্রনসহ সব উৎপাদনকারীকে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি অ্যাসেম্বলি লাইন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভারতে স্বল্প দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। বৈশ্বিকভাবে সরবরাহ চেইনের দিক থেকে ভারতকে বর্তমানে অন্যতম দেশ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। মিন্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্লেষকরা মোবাইল ডিভাইসের বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের অভিমত, এতে আগামী দুই বছরে উৎপাদন কোটি ২০ লাখ থেকে কোটি ৫০ লাখ ইউনিটে পৌঁছতে পারে।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান টেকআর্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফয়সাল কাওসা এক ব্যাখ্যায় জানান, প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফার দশমিক শতাংশ ভারত থেকে এসেছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদনের অবদান ছিল ৭২ শতাংশ। বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ভারতে ৭১ লাখ ইউনিট আইফোন বিক্রি হবে।

কাওসা আরো বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন হার আরো বাড়বে। ফলে সে সময় ভারতে কোটি ৫০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন অ্যাসেম্বল করা হবে। টাটা গ্রুপের মতো আরো প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাজারে প্রবেশ করছে। ফলে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় উৎপাদন দ্রুতগতিতে বাড়বে। ২০১৭ সালে ভারতে প্রথম আইফোন উৎপাদন শুরু হয়। বাজার বিশ্লেষকরা জানান, প্রবৃদ্ধির কারণে ভারতে যেসব স্মার্টফোন তৈরি করা হবে সেগুলো স্থানীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বেশি সহজলভ্য হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন ইন্ডিয়ার (আইডিসি) অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাভকেন্দার সিং মিন্টকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, দুই বছরের মধ্যে ভারতে এক-দেড় কোটি ইউনিট আইফোন উৎপাদন হতে পারে বলে আমরা আশা করছি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০২৩ সাল নাগাদ ভারতে আইফোন প্রো সিরিজের ডিভাইসগুলোও অ্যাসেম্বল বা জোড়া লাগানো শুরু করতে হবে। কেননা এখানে যে পরিমাণ ডিভাইস উৎপাদন হবে ভারতের বাজার সেগুলো একা ব্যবহার করতে পারবে না।

২০২২ সালে অ্যাপল ভারতে ৬৫-৭০ লাখ ইউনিট আইফোন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইডিসির পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তথ্য জানা গিয়েছে। অন্যদিকে টেকআর্কের কাওসা পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতে আইফোন ব্যবহারকারী কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ভারতকে আইফোন উৎপাদনের বিশ্বের অন্যতম দেশে পরিণত করতে অ্যাপলের পরিকল্পনাকে প্রতিফলিত করছে এসব উদ্যোগ। কেননা কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি চলমান ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যেও তাদের সরবরাহ চেইনে পরিবর্তন আনতে কাজ করছে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চীনে অ্যাপলের সবচেয়ে বড় আইফোন উৎপাদন কারখানায় কর্মীদের বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। সে সময় বিক্ষোভরত কর্মীদের একটি ভিডিও ফুটেজ ফাঁস হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, শত শত কর্মী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের হাতাহাতিও করতে দেখা গিয়েছে।

অক্টোবরে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে অ্যাপল পাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকন কারখানায় লকডাউন জারি করে এবং কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরপর ফক্সকন ভালো বোনাসের আশ্বাস দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়। তাইওয়ানভিত্তিক ফক্সকন হচ্ছে অ্যাপলের প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ঝেংঝুর কারখানায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আইফোন ?পাদন হয়। গত অক্টোবরে করোনা প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় কর্মীরা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেন এবং অভিযোগ করেন, তারা প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা চিকি?সাসেবা পাচ্ছেন না। অনেকে চাকরি ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামে চলে যান। এরপর ফক্সকন কর্মীদের ধরে রাখতে চেষ্টা করে এবং নতুন শ্রমিকদের ভালো বেতন বোনাসের আশ্বাস দিয়ে নিয়োগ দেয়।

বিক্ষোভের পরপর ফক্সকনের ফ্ল্যাগশিপ আইফোন উৎপাদনকারী কারখানা থেকে নভেম্বরে ডিভাইস সরবরাহ কমার পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে অ্যাপলের বাজার হিস্যা কমার বিষয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত খবরের তথ্যানুযায়ী, বিক্ষোভের পর অনেক কর্মী কারখানা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কারণে নভেম্বরে যে পরিমাণ আইফোন সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটি প্রভাবিত হতে পারে। ফক্সকনের কারখানাটি আইফোন উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ সংঘর্ষে নভেম্বরে যে পরিমাণ আইফোন উৎপাদনের কথা ছিল তার ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছে ফক্সকন। আইফোন ১৪ প্রোসহ অন্যান্য প্রিমিয়াম মডেল উৎপাদনের একমাত্র কারখানা এটি।

ইন্টারেক্টিভ ইনভেস্টরের বিনিয়োগপ্রধান ভিক্টোরিয়া স্কলার বলেন, চীনে ফক্সকনের কারখানায় কর্মীদের বিক্ষোভের কারণে নভেম্বরে আইফোন সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে। এছাড়া আসন্ন ছুটির মৌসুমে অ্যাপল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন