শেষ আটে আজ ব্রাজিলের মুখোমুখি ক্রোয়েশিয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জাপান-কোরিয়া আসরে রোনালদো, রিভালদো আর রোনালদিনহোর ম্যাজিকে পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে ব্রাজিল। সেই থেকে প্রতিবারই হেক্সা মিশনে নামছে লাতিন দেশটি। কাতারে আরেকটি হেক্সা মিশনে এসেছে সেলেসাওরা। সেই মিশনে অনেক দূর এগোনো তিতের দলটি শিরোপা থেকে আর তিন জয় দূরে, সামনে তিনটি হার্ডল। আজ কোয়ার্টার ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।

মুখোমুখি লড়াই আর বিশ্বকাপের রেকর্ড বিবেচনায় আজ তারকাখচিত ব্রাজিলই ফেভারিট হিসেবে নামছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রোয়াটরা অদম্য একটি দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন নেইমার তার সহযোদ্ধারা।

আজ পঞ্চমবারের মতো মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া। এর মধ্যে বিশ্বকাপের লড়াই ছিল দুটি। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে - গোলের জয় তুলে নেয় সেলেসাওরা। তার আগে ২০০৬ সালে ব্রাজিল জিতেছিল - গোলে। সব মিলিয়ে চারবারের মুখোমুখিতে ব্রাজিল তিনবার জিতেছে, বাকি ম্যাচটি ড্র হয়। তাদের সর্বশেষ লড়াই হয় সাড়ে চার বছর আগে। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে দুই দল প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়। সেবার ব্রাজিল জয়লাভ করে - গোলে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল খেলেছে।

সর্বশেষ লড়াইয়ে অংশ নেয়া ক্রোয়াট ডিফেন্ডার দেজান লভরেন দলেও আছেন। ক্রোয়াট ডিফেন্সে এসেছে বড় রদবদল। অভিজ্ঞ লভরেনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী জসকো গার্ডিওল। দুজন চলতি আসরে দুর্দান্ত খেলছেন। মধ্যমাঠে অতন্দ্র সেনানী হয়ে খেলে যাচ্ছেন মডরিচ। অন্যদিকে, ব্রাজিল দলেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। নেইমারের সঙ্গে আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রাফিনহা, রিচার্লিসন। আর বেঞ্চে তাদের যে মেধাবী খেলোয়াড়রা অপেক্ষায় থাকেন, সেই তালিকাও যেকোনো দলের জন্য ঈর্ষণীয়। ক্রোয়েশিয়ার নতুন রূপ পাওয়া ডিফেন্সের সঙ্গে লড়াইয়ে কি আজ জিততে পারবে ব্রাজিলের শক্তিশালী আক্রমণভাগ?

ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্রোয়াটদের কোনো জয় নেই। তাই কাতার আসরে সেমিফাইনালে যেতে হলে আজ তাদের তুলে নিতে হবে ঐতিহাসিক জয়।

২০ কোটি মানুষের দেশ ব্রাজিলের ফুটবল ঐতিহ্য বহুদিনের। লাখ লাখ ফুটবলারের দেশটি একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপের ২২টি আসরেই খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অন্যদিকে, মাত্র ৪০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ খেলছে ১৯৯৮ সাল থেকে। ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স আসরে তারা প্রথম অংশগ্রহণেই চমক দেখায়। ওই আসরে তৃতীয় হয় ইউরোপের ছোট দেশটি। এমনকি দলটির তারকা স্ট্রাইকার ডেভর সুকার গোল করে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট।

২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চার আসরের মধ্যে তিনবার অংশ নিয়ে প্রতিবারই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় ঘটে ক্রোয়েশিয়ার। যদিও রাশিয়ায় তারা পৌঁছে যায় শিরোপার লড়াই পর্যন্ত। কিলিয়ান এমবাপ্পে, আতোয়াঁ গ্রিজম্যানদের শৌর্যের সঙ্গে অবশ্য শিরোপার লড়াইয়ে পেরে ওঠেননি মডরিচ, পেরিসিচরা। ফাইনালে হার মানে চেকার্ড ওয়ানসখ্যাত দলটি।

দক্ষিণ কোরিয়াকে - গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে শেষ আটে নাম লিখিয়েছে ব্রাজিল। তিতের দল প্রথমার্ধেই চার গোলের লিড নেয়। অর্ধে তাদের আরো তিন-চারটি গোল হতে পারত। ওই ম্যাচে ভিনিসিয়ুস, নেইমার, রিচার্লিসন, লুকাস প্যাকেতা স্কোরশিটে নাম লেখান। দ্বিতীয়ার্ধে পাইক সিউং-হো কোরিয়ার জন্য সান্ত্বনাসূচক গোল করেন।

অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়া শেষ আটে উঠেছে জাপানের সঙ্গে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই করে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট এরপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা - গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষায় হার মানে জাপান। গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ তিনটি পেনাল্টি শট সেভ করে ক্রোয়াটদের জয়ের নায়ক।

কাতারের মাঠে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের অন্যতম সেনানী ভিনিসিয়ুস। যখন কাতারে পা রাখেন তখন তিনি একাদশে সুযোগ পাওয়া নিয়েও নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু এখন আর সেই অনিশ্চয়তা নেই। এমনকি আজকের কোয়ার্টার ফাইনালে তার জায়গা নিয়ে কেউ প্রশ্নও তুলবেন না।

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে এক গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস, তার অ্যাসিস্ট দুটি। সাফল্যের জন্য তিনি ব্রাজিল কোচ তিতে রিয়াল কোচ কার্লো অ্যানচেলত্তিকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। এমনকি রিয়াল সতীর্থ আজকের প্রতিপক্ষ লুকা মডরিচকেও কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি তিনি। মডরিচকে নিয়ে ভিনি বলেন, মাঠে মাঠের বাইরে তিনি সবসময়ই আমাকে শেখান। আমাকে প্রতিদিনই কিছু না কিছু শেখান। তিনি দেখতে চান আমি উন্নতি করছি কিনা। তিনি আমার কাছে একটা দৃষ্টান্ত, যিনি ৩৭ বছর বয়সেও উঁচু পর্যায়ে খেলে যাচ্ছেন, যা কিনা অনেকটা বিরল। তার বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি বলে আমি অনেক খুশি, সেরা দলটিকেই জিততে দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন