প্রস্তাব মূল্যায়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি

বিদ্যুতের দাম সমন্বয় নিয়ে বিইআরসির দ্বিধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাবের বিষয়ে তারা নাকি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। বিইআরসি (অধ্যাদেশ) ২০০৩ সংশোধন করে গেজেট আকারে প্রকাশের পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিষয়টি পরিষ্কার হতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় থেকে এখনো চিঠির উত্তর পাওয়া যায়নি বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ পায় ডিসেম্বর। এর আগে বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বাড়াতে কমিশনে প্রস্তাব পাঠায়। অধ্যাদেশটি সংশোধন করে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় এখন নিজের হাতে নিয়েছে। ফলে কমিশন বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিজেই নেবে কিনা সে বিষয়ে জানতে কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে।

বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বিইআরসি আইন সংশোধনের আগে যেহেতু বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে আবেদন দাখিল করেছে। ফলে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার হতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এখনো বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের লিখিত কোনো জবাব পাইনি। তবে আমরা আমাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

এদিকে, আইন সংশোধনের পর বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের বিষয়ে বিইআরসি আগের মতো প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে ছাড়া সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। বিইআরসি আগের মতো দাম নির্ধারণ করতে পারবে।

বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাব এরই মধ্যে যাচাই-বাছাই শুরু করেছে কমিশন। প্রক্রিয়া শেষ হলে চলতি মাসের যেকোনো দিন গণশুনানির ঘোষণা দিতে পারে বিইআরসি। তবে এবার দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের পরিবর্তে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে বলে আইনের সংশোধনীতে বলা হয়েছে।

অধ্যাদেশ জারির আগে বিদ্যুতের পাইকারি খুচরা পর্যায়ে দাম সমন্বয়ের একক এখতিয়ার ছিল বিইআরসির। চলতি মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২২ জারি হওয়ার পর বিইআরসির পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ও দাম বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষমতা পায়।

বিইআরসির আইন সংশোধনের পর বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাব মন্ত্রণালয় নাকি কমিশন নির্ধারণ করবে, সেই বিষয়টি জানতে চাইলে ডিসেম্বর তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য সমন্বয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিইআরসি আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাবে। বিইআরসি জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনস্থ। সরকারের আইন সরকার সংশোধন করেছে। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করে যাব।

গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট টাকা ১৭ পয়সা থেকে টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করে বিইআরসি। ওই আদেশের এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির আবেদন করে কমিশনে। সুনির্দিষ্টভাবে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রস্তাব জানা না গেলেও বেশির ভাগ বিতরণ কোম্পানি ১৮-২০ শতাংশ গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়।

কমিশন এখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে। এসব প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা থাকলে বিইআরসি তাদের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির (টিইসি) মাধ্যমে তা খতিয়ে দেখবে। এরপর গণশুনানির মাধ্যমে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হবে।

জ্বালানিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের হাতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব চলে যাওয়ার পর বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাব বিশ্লেষণ একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এখানে কমিশন কাজ করলেও জোরালো কোনো ভূমিকা নেই ভোক্তাদের।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক . শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বিইআরসি আইন সংশোধন করে সরকার প্রক্রিয়া নিজের হাতে নেয়ায় কমিশনকে কার্যত অকার্যকর করা হলো। বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে ভোক্তার কোনো জবাবদিহিতা থাকল না। একই সঙ্গে লাইসেন্সিদের জবাবদিহিতা রহিত করা হলো। এখন কমিশন যেসব কাজ করবে সেটি এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০০৩- স্বাক্ষর করেছেন, সেই অধ্যাদেশের মূল সংশোধনে বলা হয়েছে, আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুদকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন