নতুন গন্তব্য ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া

চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে জাপানি পোশাক প্রস্তুতকারকরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে একটি পোশাক কারখানা ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘদিন ধরে জিরো কভিড নীতি বজায় রেখেছে চীন। সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় আরোপ করা হচ্ছে লকডাউনসহ কঠোর বিধিনিষেধ। ফলে দেশটিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। অবস্থায় দেশটি থেকে উৎপাদন কার্যক্রম সরিয়ে নিচ্ছে জাপানের কয়েকটি প্রধান পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান শ্রম ব্যয়ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করছে। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম কম্বোডিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় উৎপাদন স্থানান্তরিত করছে সংস্থাগুলো।

নিক্কেই এশিয়ার খবর অনুসারে, ডলারের বিপরীতে ইয়েনের বিনিময় হারে পতন, জিরো কভিড নীতি এবং ক্রমবর্ধমান কাঁচামাল শ্রম ব্যয় চীনে উৎপাদন কার্যক্রমকে অনেক ব্যয়বহুল করে তুলছে। এমন পরিস্থিতি জাপানি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনে উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রাখা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে। গত জানুয়ারিতে এশিয়া-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তি রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) স্বাক্ষর হয়েছিল। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম বাড়াতে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করছে। 

অ্যাডাস্ট্রিয়া, আয়োইয়ামা ট্রেডিং ইউনিক্লোর মতো প্রধান জাপানি পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল আমদানি শুল্ক হ্রাস বা ছাড়ের সুবিধা নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরসিইপি সদস্য দেশগুলোয় উৎপাদন কার্যক্রম স্থানান্তরিত করছে। গ্লোবাল ওয়ার্কসহ জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মালিক অ্যাডাস্ট্রিয়া চলতি বছর কম্বোডিয়া ভিয়েতনামে উৎপাদন বাড়িয়েছে। পরিমাণের হিসাবে গত আগস্টে সংস্থাটির মোট পোশাক উৎপাদনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। হার এক বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

প্রতিষ্ঠানটি ইন্দোনেশিয়া অন্য দেশগুলোয় উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণেরও পরিকল্পনা করছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ সংস্থাটি মোট উৎপাদনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। জাপানে আমদানি করা প্রতিষ্ঠানটির পোশাকের মধ্যে চীনে উৎপাদন হওয়ার পরিমাণ গত বছর ৫৯ শতাংশে নেমেছে। এক দশক আগে যা ৮১ শতাংশে ছিল।

এরই মধ্যে জাপানে পুরুষদের পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আয়োইয়ামা ট্রেডিং ইন্দোনেশিয়া ভিয়েতনাম থেকে পণ্য সংগ্রহ বাড়াতে শুরু করেছে। ২০২১ অর্থবছরে সংস্থাটির চীন থেকে আমদানি করা পোশাকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। হার আগের অর্থবছরের তুলনায় শতাংশ কম। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ওসামু আয়োইয়ামা বলেন, মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের চীনে উৎপাদনের অনুপাত আরো কমে যাবে।

ইউনিক্লোর সাবসিডিয়ারি ফাস্ট রিটেইলিংয়ে চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহ করে মাতসুওকা করপোরেশন। ২০২২ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে সংস্থাটির সরবরাহ করা পোশাকের ৫০ শতাংশ উৎপাদন হয়েছিল চীনে। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে সংস্থাটি হার ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সময়ে সংস্থাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে চায়। লক্ষ্যে সংস্থাটি চলতি অর্থবছর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে লাখ ৪০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করছে।

পোশাক শিল্পের অনেক প্রক্রিয়া এখনো মানুষের হাতের ওপর নির্ভরশীল। কারণ সেলাইয়ের কাজ স্বয়ংক্রিয় করা কঠিন হতে পারে। অবস্থায় কাঁচামাল ছাড়াও ক্রমবর্ধমান শ্রম ব্যয় উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তুলছে। আশির দশক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো সস্তা শ্রমের সন্ধানে জাপান থেকে চীনে উৎপাদন স্থানান্তর শুরু করে। কিন্তু ২০১০ সালের দিকে চীনে শ্রম ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সংস্থাগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন প্রসারিত করতে মনোযোগ বাড়ায়।

জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের মতে, চীনের গুয়াংজুতে একজন কারখানা শ্রমিকের গড় মাসিক বেতন প্রায় ৬৭০ ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে বেতনের পরিমাণ প্রায় ২৭০ ডলার।

কেবল পোশাক শিল্পই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম বিস্তৃত করছে তা কিন্তু নয়। আসবাবপত্র গৃহস্থালি জিনিসপত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে। জাপানের ফার্নিচার হোমওয়্যার জায়ান্ট নিটোরি উৎপাদন বিস্তৃত করতে ভিয়েতনামে একটি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এছাড়া অফিস আসবাবপত্র প্রস্তুতকারক ওকামুরা চীনের বাইরের কাঁচামাল ব্যবহারের সুযোগ খুঁজছে।

তবে জাপানি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীন এখনো গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশ। ভৌগোলিক অবস্থানগত নৈকট্যের দিক বিবেচনা করলেও সংস্থাগুলোর জন্য চীন থেকে পুরোপুরি উৎপাদন কার্যক্রম সরিয়ে নেয়া কঠিন। মাতসুওকা করপোরেশনের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হিরোইউক কানেকো বলেন, চীনে উচ্চপ্রযুক্তিগত সুবিধা এবং কাপড়ের মতো কাঁচামালের জন্য উন্নত সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। সুবিধাগুলো অন্যান্য দেশে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন