পদ্মা সেতুর প্রভাব

যশোর-ঢাকা রুটে বিমানে যাত্রী কমেছে ৫০ শতাংশ

আবদুল কাদের, যশোর

পদ্মা সেতু চালুর পর যশোর-ঢাকা রুটে আকাশপথে ৫০ শতাংশ যাত্রী কমেছে। বাধ্য হয়ে ফ্লাইটের সংখ্যাও অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। তার পরও বিমানগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর ছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট নড়াইল জেলার যাত্রীরা যশোর বিমানবন্দর দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করত। একসময় যশোর-ঢাকা রুটে নিয়মিত ১৫টি ফ্লাইট যাতায়াত করত। প্রতিদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা নভোএয়ারের একাধিক ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করত। যশোর-ঢাকা ছাড়াও যশোর-চট্টগ্রাম এবং যশোর-কক্সবাজার রুটেও একদিন পরপর ফ্লাইট ছিল। বিমানের টিকিটও সহজলভ্য ছিল না। বাড়তি চাহিদার কারণে কখনো কখনো টিকিটের দাম দ্বিগুণ হয়ে যেত।

কিন্তু গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গিয়েছে দৃশ্যপট। আগের মতো বিমানবন্দরে ভিড় দেখা যাচ্ছে না। যোগাযোগ সহজ হয়ে যাওয়ায় অনেকে সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করছে। ফেরির কারণে ঢাকায় পৌঁছাতে আগে -১২ ঘণ্টা লাগলেও এখন - ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব। ফলে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পাঁচ মাসের মধ্যে যশোর থেকে বিমানের যাত্রী ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে।

বিমানবন্দরের ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম মাসুদ জানান, যশোরে বিমানের যাত্রী কমেছে; কারণে ফ্লাইটের সংখ্যাও কমেছে। আগে যশোর-ঢাকা, যশোর-চট্টগ্রাম, যশোর-কক্সবাজার রুটে সব মিলিয়ে ১৫-১৮টি পর্যন্ত ফ্লাইট চলেছে। এখন সেখানে যশোর-ঢাকা রুটে সাতটি ফ্লাইট চলছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুটি, নভোএয়ারের দুটি ইউএস-বাংলার তিনটি।

যশোর-চট্টগ্রাম, যশোর-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট বন্ধ ছিল। সম্প্রতি যশোর-কক্সবাজার রুটে নভোএয়ার সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালু করেছে।

সূত্র আরো জানায়, ইউএস-বাংলা নভোএয়ারের সাতটি ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ইউএস-বাংলার সাতটি ফ্লাইটের তিনটি নভোএয়ারের পাঁচটির মধ্যে চলাচল করছে দুটি। বেসরকারি এয়ারলাইনস দুটিতে আগে সর্বনিম্ন ভাড়া চার হাজারের ওপরে থাকলেও এখন সেটি হাজার ২০০ টাকায় নেমে এসেছে।

ইউএস-বাংলার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার রথি শিকদার জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যশোর-ঢাকা রুটে ছয়টি ফ্লাইট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আরো তিনটি ফ্লাইট চলাচল করত। এখন সেখানে বর্তমানে শুধু ঢাকা-যশোর রুটে তিনটি ফ্লাইট চালু রয়েছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যশোরের ম্যানেজার সাব্বির হোসেন বলেন, বিমানের যাত্রী কমেছে। তাই ফ্লাইটের সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। যশোর-ঢাকা রুটে অন্তত ৫০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। খুলনার যাত্রী কমেছে অনেক।

নভোএয়ারের যশোরের এক্সিকিউটিভ অফিসার সুমন হালদার জানান, আগে যশোর-ঢাকা রুটে আমাদের চার-পাঁচটি ফ্লাইট যাতায়াত করত। এখন দুটি ফ্লাইট চালু রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী অনেক কমেছে। তবে সম্প্রতি যশোর-কক্সবাজার রুটে একটি ফ্লাইট চালু হয়েছে। ভাড়া সাড়ে হাজার টাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন খুলনা বাগেরহাটের যাত্রীরা। নড়াইল সাতক্ষীরার যাত্রীরাও আসতেন। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এসব জেলার যাত্রীরা আর আসছেন না। কারণ খুলনা থেকে বাসযোগে আসতে এক-দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। বিমানবন্দরে কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে আসতে হয়। ঢাকায় পৌঁছাতে সব মিলিয়ে - ঘণ্টা সময় লাগছে। যে কারণে কম টাকায় একই সময়ে এসি গাড়িতে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। আমার জানা মতে, এখন শুধু যশোরের যাত্রীরা বিমানে চলাচল করছেন। খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে বিমানের টিকিটের দাম আরো কমাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন