ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

ব্যাংকে টাকা আছে গুজবে কান দেবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ছবি: পিআইডি

ব্যাংকে টাকা না থাকার বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই। দেশের প্রতিটি ব্যাংকে টাকা আছে।

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কথা আমি বলতে চাই, কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নাই, টাকা নাই বলে মানুষ টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা আমি আগেও বলেছি এখনো বলি, এদের চোরের সঙ্গে কোনো সমঝোতা আছে কিনা। যেন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো হয়, চোর চুরি করে খেতে পারে।

তিনি বলেন, আমি এসডিজি সচিব, অর্থ সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। আজ সকালে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। কাজেই আমি বলব, গুজবে কেউ কান দেবেন না। এসব মিথ্যা কথা বলে, ভাঁওতাবাজি করে কেউ কেউ বিভ্রান্ত করতে চায়। একটা শ্রেণী আছে, তারা এটা করছে, কারণ মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী।

উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে গিয়েছে। মানুষের খাবারের অভাব নেই। প্রচুর পরিমাণে খাবার আছে। আল্লাহর রহমতে উৎপাদনও ভালো হয়েছে। প্রত্যেকটা বিষয় আমরা আগে থেকে লক্ষ রাখি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। উন্নত দেশগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সে অবস্থায় বাংলাদেশ তো অনেক ভালো আছে।

তবে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে বাংলাদেশেও তার ধাক্কা লাগবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। সেজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কাজেই খাদ্য যেমন উৎপাদন করতে হবে, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রত্যেককে আমি বলব, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুইচটা অফ করতে হবে। মোবাইল বা ল্যাপটপ চার্জারের সুইচটা অফ করে দিতে হবে। প্রত্যেকে এভাবে সাশ্রয়ী হতে হবে। আগামী দিনে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা, সে ধাক্কা যেন বাংলাদেশে না লাগে। এদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগ যেন প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের মেধা বিকাশের একটা সুযোগ পায় এবং সে অনুযায়ী কাজকর্ম করতে পারে সেটাই আমি চাই।

বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা। পরে পায়রা অবমুক্ত করে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। সময় ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত গাওয়া হয়।

এছাড়া গতকাল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো মনে করি পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ আমরা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সব ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানে ব্যবস্থা আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগবান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি অবকাঠামোর বিস্তৃতি সাধন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা-পরিষেবা অনুমোদনের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। তার পরও এখানে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়। সেগুলো যাতে না হয়, অচিরেই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেটা সমাধান করে দেব।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে যেখান থেকে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ রচনা করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হলো দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা। আমরা নিজেদের দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি, তাদের কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছি। তার ফলে আমাদের নিজস্ব একটা মার্কেট যেমন তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা যোগাযোগের ব্যবস্থা নিয়েছি।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার বিদ্যমান।

দেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হচ্ছে জমিগুলো সুনির্দিষ্ট করা। যে জমিতে খুব বেশি ফসল হয় না, সে ধরনের জমি আমরা বেছে নিয়েছি। দেশের ৬৪ জেলায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিই। এরই মধ্যে প্রায় ৯৭টি জায়গা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ২৬টির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ১০টি সেখানে সম্পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করেছে।

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন যদি করি, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের দেশে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন উৎপাদনও হয়। যে অঞ্চলে যা উৎপাদন হবে, সেগুলো আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারব। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যখনই বড় হতে থাকবে, আমাদের যুবসমাজ বা তরুণ সমাজ তারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, জাপান সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে। আমরাও সবসময় জাপানের সঙ্গে একটা চমত্কার সম্পর্ক রেখে যাচ্ছি। আমাদের বন্ধুত্ব অটুট।

সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। গত তিন বছরে অনেক অবদান রাখায় ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে শুভকামনাও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন