কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল

স্পেনকে বিদায় করে মরক্কোর ইতিহাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্বকাপে গতকাল স্পেনের বিপক্ষে মরক্কোর জয়ের নায়ক গোলকিপার ইয়াসিন বোনোকে নিয়ে আনন্দ সতীর্থদের ছবি: ফিফা

সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ল মরক্কো। গতকাল রাতে আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে জিব্রাল্টার প্রণালির দুই পারের দেশ দুটির লড়াই দারুণ জমে ওঠে। ১২০ মিনিটের দীর্ঘ লড়াই গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে - গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে টিকে থাকা একমাত্র দেশটি। স্পেন তাদের তিন শটের একটিও গোল করতে পারেনি। মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বোনো দুটি শট সেভ করেন। এরপর পিএসজি তারকা আচরাফ হাকিমি পানেনকা শটে মরক্কোর জয় নিশ্চিত করেন।

শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের মুখোমুখি হবে মরক্কো। গতকাল রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে - গোলে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট পায় পর্তুগিজরা। ২০০৬ সালের পর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল পর্তুগাল। জার্মানিতে সেবার তারা চতুর্থ হয়েছিল।

এর আগে বিশ্বকাপে মরক্কোর সর্বোচ্চ অর্জন ছিল শেষ ষোলো। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো আসরে তারা শেষ ষোলোয় খেলেছে। বিশ্বকাপে ষষ্ঠবারের অংশগ্রহণে নিয়ে দ্বিতীয়বার নকআউটে খেলছে তারা এবং ২২তম আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ল আফ্রিকান-আরব দেশটি। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপে আফ্রিকার কোনো দেশ সেমিফাইনাল খেলেনি। এবার মরক্কোর সামনে সেই অর্জনের হাতছানি। এদিকে, টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় ঘটল ২০১০ আসরের চ্যাম্পিয়নদের।

পুরো ম্যাচেই উত্তর আফ্রিকার দলটির সমর্থকরা গান চেয়ে, চিত্কার করে ড্রাম বাজিয়ে আচরাফ হাকিমি, হাকিম জিয়েশদের উৎসাহ দিয়ে গেছেন। যদিও ম্যাচে আধিপত্য করছিল স্পেন, আর মরক্কানরা নিচের দিকটা আটকে দিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাই তো হাজার ১৯টি পাস দিয়েও গোল পায়নি স্পেন। এর আগে হাজার ৫৮ পাস খেলেও জাপানের কাছে হেরেছে এনরিকের দল। অন্যদিকে, মরক্কোও তিনটি দারুণ সুযোগ নষ্ট করে, সুযোগ নষ্ট করে স্পেনও।

টাইব্রেকারে সেভিয়ায় খেলা গোলকিপার বোনো স্পেনের পাওলো সারাবিয়া, কার্লোস সোলার সার্জিও বুসকেটসের শট সেভ করে ম্যাচের নায়ক। মরক্কোর হয়ে পেনাল্টি শুটআউটে গোল করেন আবদেলহামিদ সাবিরি, হাকিম জিয়েশ আচরাফ হাকিমি। মরক্কানদের মধ্যে পেনাল্টি মিস করেন বদর বেনোন। এর আগে ১২৩ মিনিটে সারাবিয়ার ডান পায়ের শট পোস্টে লাগলে অল্পের জন্য জয়বঞ্চিত হয় স্পেন। এর আগে দুই দলই গোলের সুযোগ নষ্ট করে। এরপর টাইব্রেকারে স্নায়ুর পরীক্ষায় হার মানে লা রোজারা।

অতিরিক্ত সময়ের ১৪তম মিনিটে ম্যাচের সেরা সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। যদিও আজ্জেদিন ওনাহির পাস থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ১০ গজ দূর থেকে শট নিয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন ওয়ালিদ চেদ্দিরা। তার শট সোজাসুজি স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমনের পায়ে লাগে। এতে বড় বাঁচা বেঁচে যায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

এর আগে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো তিনটি নকআউট ম্যাচেই হেরেছে মরক্কো। দুটি আফ্রিকান নেশন্স কাপে একটি আরব কাপে। এবার বিশ্বকাপে ভাগ্য পরীক্ষায় উতরে গেল আফ্রিকানরা। অন্যদিকে, স্পেনের সর্বশেষ তিনটি বিশ্বকাপ নকআউট ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াল। ২০১০ সালের ফাইনালে তারা - গোলে হারায় নেদারল্যান্ডসকে, ২০১৮ সালে শেষ ষোলোয় হেরেছে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে। কাতারের মাঠে তারা হারল মরক্কোর কাছে।

কাল নির্ধারিত ৯০ মিনিটে সবকিছুতে এগিয়ে থাকলেও শুধু গোলই পাওয়া হয়নি স্পেনের। সময় ৭৭ শতাংশ বল দখলে রাখে লুই এনরিকের দল, মরক্কোর পায়ে ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ। উল্লেখ্য, গ্রুপ পর্বে ৭৮ শতাংশ বল দখলে রেখেও জাপানের কাছে হেরেছিল স্পেন। কাল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা মরক্কোর গোলমুখে ১৩টি শট নেয়, যার মধ্যে মাত্র একটি ছিল অন টার্গেট। অন্যদিকে, মরক্কোর ৬টি শটের মধ্যে দুটি ছিল অন টার্গেটে। স্পেনের ৯টি কর্নারের বিপরীতে মরক্কানরা কোনো কর্নারই পায়নি!

অপরাজিত থেকে গ্রুপ এফ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউটে ওঠে মরক্কো, অন্যদিকে স্পেন গ্রুপে রানার্সআপ হয়েছে। ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা জাপানের কাছে হেরেছে।

ইউরোপিয়ান জায়ান্ট স্পেন নিয়ে টানা তিনটি বিশ্বকাপ আসরে ব্যর্থ হলো। ২০১৪ সালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে নেমে তারা বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে, আর গতবার শেষ ষোলোয় স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে হেরে বিদায় ঘটে তাদের।

এদিকে, লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে গনসালো রামোসের হ্যাটট্রিকে ভর করে সুইজারল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে পর্তুগাল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জায়গায় মূল একাদশে খেলার সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন রামোস। ম্যাচের ১৭, ৫১ ৬৭ মিনিটে দুর্দান্ত তিনটি গোল করেন তিনি। ৩৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার পেপে ৩৩ মিনিটে উড়ন্ত হেডে গোল করেন। ৫৬ মিনিটে ব্যবধান - করেন রাফায়েল গেরেরো। এর দুই মিনিট পর ম্যানুয়েল আকানজি ব্যবধান কমান (-) এর পর রামোস হ্যাটট্রিক করে সুইসদের সব আশা শেষ করে দেন। যোগ করা সময়ে (৯২ মিনিট) বদলি খেলোয়াড় রাফায়েল লিয়াও পর্তুগালের হয়ে ষষ্ঠ গোল করেন।

উল্লেখ্য, পর্তুগালের হয়ে মূল একাদশে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে হ্যাটট্রিক করলেন ২১ বছর বয়সী গনসালো রামোস।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন