ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ শেষ করেছে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার। চীনে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা এবং মার্কিন ফেডের চেয়ারম্যান জেরোমি পয়েলের এক বিবৃতির পর বেশির ভাগ পণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। খবর আনাদোলু এজেন্সি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সপ্তাহের শুরুর দিকে চীনে করোনা প্রতিরোধে আরোপিত বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। ফলে নেতিবাচক দিকে মোড় নেয় পণ্যবাজার। মূলত চীনের উইঘুর প্রদেশে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হলে দেশটিতে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। এর পরই বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয় বেইজিং। এমন সিদ্ধান্তের প্রভাবে বাড়তে শুরু করে পণ্যের দাম।
এদিকে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল সম্প্রতি সুদের হার স্বল্পমাত্রায় কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে মুদ্রানীতি যথেষ্ট সংকুচিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি ফেডের বেশির ভাগ কর্মকর্তাই সুদের হার বৃদ্ধির মাত্রা কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এতে পণ্যের দাম আবারো ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ২ দশমিক ৪ শতাংশ, রৌপ্যের ৭ দশমিক ৯, প্যালাডিয়ামের ২ দশমিক ৩ ও প্লাটিনামের দাম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া তামার দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ, সিসার ১ দশমিক ৯, অ্যালুমিনিয়ামের ৪ দশমিক ২, নিকেলের ১০ দশমিক ৩ ও দস্তার দাম ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
জ্বালানি পণ্যের মধ্যে গত সপ্তাহে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ১০ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের চাহিদা কমার উদ্বেগ প্রশমিত হয়েছে, যা ব্রেন্টের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে জ্বালানি জুগিয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ কমে যাওয়ার আশঙ্কাও দাম বাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা সম্প্রতি লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। তবে ঊর্ধ্বমুখী প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের কারণে পণ্যটির দাম কমেছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে কৃষিপণ্যের বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে গমের দাম ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ভুট্টার ৩ দশমিক ৭ ও চালের দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। তবে সয়াবিনের দাম বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ।
তুলার দাম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, চিনির ২ দশমিক ১ ও কোকোর দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে কফির দাম ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। বিশ্বজুড়ে তুলা উৎপাদন কমার পূর্বাভাস পণ্যটির দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে। এছাড়া জৈব জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে সয়াবিনের দাম। কৃষ্ণসাগরীয় শস্য রফতানি চুক্তি সম্প্রসারণের প্রভাবে গম ও ভুট্টার দাম কমেছে। উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনায় চালের দাম কমেছে।