স্পেনের নিকটবর্তী প্রতিবেশী ও সাবেক নিয়ন্ত্রিত দেশ মরক্কো। ১৯৫৬ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভের পরে কিছুকাল স্পেনের নিয়ন্ত্রণেও ছিল আফ্রিকার দেশটি। এ দুটি দেশকে দুদিকে ঠেলে দিয়ে মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে জিব্রাল্টার প্রণালী। এই প্রণালীর দুই পাড়ে আজ উৎসব। কাতার বিশ্বকাপে মুখোমুখি স্পেন ও মরক্কো।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বমঞ্চে মুখোমুখি দুটি দেশ। আগের দেখায় ড্র হলেও এবার নকআউট বলে যেভাবেই হোক ফল আসবেই।
এ ম্যাচটি জিব্রাল্টার প্রণালীর উভয় পাড়ের কয়েক লাখ ভক্তকে বার কিংবা বসার ঘরে পর্দার সামনে একত্র করবে। কোন দেশটি শেষ পর্যন্ত গৌরবময় বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
উত্তর-আফ্রিকার সেউতা স্পেনের অংশ। এ অঞ্চলে আজকের ম্যাচে সমর্থন করা নিয়ে দ্বিধাদ্বদ্ব অনেকের মাঝে। কেননা এ অঞ্চলটির জনগোষ্ঠীর জাতীয় ও ধর্মীয় উভয় পরিচয়ই মরক্কোর অধিবাসীদের সঙ্গে অনেক মিল।
সেউতার সুলাইকা হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি নিজেকে শতভাগ স্প্যানিশ ভাবেন। তবু কাতারে আজ খেলা শুরু হলে, তার সহানুভূতি পিতামহের (দাদার) দেশ মরক্কোর দিকে ঝুঁকবে। তিনি বলেন, আমি একজন স্প্যানিশ। চাই স্পেন জিতুক, কিন্তু আমি মরক্কোকে সমর্থন করছি। যখন মরক্কো খেলে, তখন আমার মনে নাড়া দেয়। তাদের জিততে দিন, যাতে লোকেরা বলতে পারে, দেখুন, মরক্কো শুধু একটি দরিদ্র দেশ নয়।
বিশ্বকাপের কিছু খেলা রাজনৈতিক প্রতীক হয়ে ওঠে। যেমন ৩০ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের ম্যাচটি। স্পেন ও মরক্কো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বদ্বী নয়। তবে তাদের দীর্ঘ ও জটিল সম্পর্ক আজ আল রাইয়ানের এজুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ম্যাচটিকে নিঃসন্দেহে প্রভাবিত করবে।
সেউতা ১৫৮০ সাল থেকে স্প্যানিশ দখলে রয়েছে। এখানে খ্রিস্টান ও মুসলমান জনগোষ্ঠী বাস করে থাকে। স্প্যানিশ ও মরক্কোর বাসিন্দারা সম্প্র্রীতি বজায় রেখে এখানে বসবাস করেন। ইইউর অভিবাসন ঢল ঠেকাতে ১৯৯৩ সাল থেকে মরক্কোর সঙ্গে সেউতা সীমান্তে বেড়া দেয়া হয়।
সুলাইকার মতো আরো অনেকেই আছেন যারা সেউতায় বাস করেন বা কাজ করেন। তবে খেলা তাদের দুভাগে বিভক্ত করে দেবে না। বরং এটা একটা উইন-উইন সিনারিও। স্পেন কিংবা মরক্কো যেই জিতুক না কেন, কাতার থেকে বিশ্ব শিরোপা নিয়ে আসতে পারলেই তারা খুশি।
ইত তোজানি নামের একজন মরক্কোর বাসিন্দা জানিয়েছেন, আমি ১৫ বছর স্পেনের বিভিন্ন অংশে বাস করেছি। এটা আমার বাড়ির মতো মনে হয়।
তিনি স্প্যানিশ বন্ধুদের সঙ্গে সেউতার ক্রিস্টান বারে বসে খেলা দেখার পরিকল্পনা করে রেখেছেন। ইত তোজানি বলেন, ফুটবলের জায়গায় ফুটবল, আর রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি। তাই ভালো ফুটবল খেলা উপভোগ করে ভালো সময় কাটাতে যাচ্ছি, তবে অবশ্যই পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে। যা অত্যন্ত জরুরি। মরক্কোর পতাকা লাল-সবুজ এবং স্পেনের লাল-হলুদ। এ দুই পতাকায় কিছুটা মিল আমাদের আছে।