ফুটবল মাঠে চিরবৈরী ১০ দল

আহমেদ দীন রুমি

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। সব ছবি: রয়টার্স

বিদ্যুৎ নিয়ে নিকোলা টেসলা ও থমাস এডিসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার খবর কে না জানে! কিংবা ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তারে পেপসি ও কোকাকোলার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই!

যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা এমন কিছু প্রতিযোগিতা রয়েছে ফুটবল মাঠেও। যেহেতু আন্তর্জাতিক আসরে ফুটবল মানে শুধু বাইশজন খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হওয়া নয়, দুটি দেশেরও মুখোমুখি হওয়া। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের পূর্বে ও পরে রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকে। দুই দেশের ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে থাকে বাড়তি উত্তেজনা। ম্যাচের ফলাফলে প্রভাবিত হয় তাদের সম্পর্ক। তেমন কয়েকটি দল খবর জেনে নিন।

আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল

ফুটবলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাসে সবার আগে আলোচনায় আসতে পারে এ দুটি দল। ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। আগের কিছু সূত্র ধরে দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যেই তখন যথেষ্ট জাত্যাভিমান বিরাজ করছিল। খেলা শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ত্যাগ করে ব্রাজিল, আর সে দিন জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।

তারপর ১৯৩৯ সালে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সেবাস্টিয়ানের আহত হওয়া, ১৯৪৬ সালে মুখোমুখি হলে অধিনায়ক হোসে সলোমনের দুই স্থানে হাড় ভেঙে যাওয়া এবং ১৯৯০ সালের ‘হোলি ওয়াটার’ ঘটনা সেই দীর্ঘ ঐতিহ্যের কয়েকটি নমুনা মাত্র।

মূলত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সব সময়ই শক্তিশালী দল হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর শাসন করেছে। এক দলে ছিল গারিঞ্চা, জার্জিনহো, পেলে ও রোনালদোর মতো তারকা। অন্য দলে ম্যারাডোনা, স্টেফানো, মারিও ক্যামপেস ও লিওনেল মেসি। ফলে দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার মানেই ভরা স্টেডিয়ামের সামনে নতুন কোন জাদুর আসর। 

ইংল্যান্ড বনাম স্কটল্যান্ড

আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। সীমান্তের দুই পাশের শিশুরাও সেখানে বেড়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তরাধিকার নিয়ে।

১৮৭২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই মুখোমুখি হয়েছে দল দুটি। প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নতুন মাত্রা পেয়েছে ফুটবলের মাঠে। এই ম্যাচগুলো ছিল প্রতিপক্ষকে কাবু করার মোক্ষম সুযোগ। ১৯২৮ সালে ৫-১ ব্যবধান নিয়ে স্কটল্যান্ডের কিংবা ১৯৬১ সালে ৯-৩ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের বিজয়কে বিজয়ী দেশ উদযাপন করেছে বিশ্বকাপ জয়ের মতো।

১৯৯৯ সালের পর ক্রমে স্কটিশ ফুটবলের অবক্ষয় এবং ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক আসরে মনোযোগ দেয়া এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে।

মেক্সিকো বনাম যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যকার খেলা দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে প্রভাবিত। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বিষয়ক নীতি ও প্রতিবেশী দেশটির প্রতি কূটনৈতিক আচরণ সেই প্রতিযোগিতাসুলভ মনোভাবকে নতুন মাত্রা দেয়।

১৯৩৪ সালে প্রথম মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ৪-২ ব্যবধানে জয়লাভ করলেও পরবর্তী দীর্ঘ ৪০ বছর জয়ের দেখা পায়নি। একচেটিয়াভাবে জয় পেয়েছে মেক্সিকো। ১৯৯০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলে অগ্রগতি দেখাতে শুরু করে। দর্শকদেরও আকর্ষণ করতে থাকে। মেক্সিকান ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও দেখাতে থাকে প্রতিক্রিয়া।

জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাঁচ বছরের জন্য নেদারল্যান্ডস দখল করে রেখেছিল নাৎসি বাহিনী। সেই সময়েই সেখানে জার্মানবিদ্বেষী মনোভাব গড়ে ওঠে। যা শেষ পর্যন্ত ফুটবল মাঠ অবধি গড়ায়। সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা তৈরি হয় ১৯৭৪ সালে। বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই দল।

নেদারল্যান্ডস একাদশ দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার মতো করে জয় তুলে নিল জার্মানি। ফলাফলে যেন জাতীয় শোক নেমে আসে। সেই শোক দূর হয় ১৯৮৮ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। জার্মানিকে সেমিফাইনালে পরাজিত করতে পেরে হাওয়া লাগে জাতীয়তাবাদী চেতনায়। এখনো ইউরোপীয় ম্যাচ কিংবা বিশ্বকাপে দুই দেশ মুখোমুখি হলে বাড়তি আমেজ পায় ফুটবল দুনিয়া।

ফ্রান্স বনাম ইতালি

দুটিই বিশ্বের সেরা ফুটবল দলের কাতারে। বিশ্বকাপের আসরে অন্তত পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে তারা। ১৯১০ সালে ডার্বি ডি’ ইউরোপাতে মুখোমুখি হয়েছিল। সেই প্রতিযোগিতার রেশ গড়িয়েছে অন্য আসরেও। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় পায় ইতালি। অন্যদিকে ২০০০ সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে জয় তুলে নেয় ফ্রান্স। পরিসংখ্যান বলছে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৩৯ বার। সেখানে ইতালি ১৮ বার জয়ী হয়েছে, ফ্রান্স হয়েছে ১১ বার। ১০ ম্যাচ ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দুই দল।

এর বাইরে জাপান বনাম দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব বনাম ইরান, ক্রোয়েশিয়া বনাম সার্বিয়া ম্যাচগুলোও পৃথক অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে ফুটবল দুনিয়ায়। ইতিহাসে তাদের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ। দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছড়িয়ে পড়েছে ফুটবলের মাঠেও। ফুটবলের আন্তর্জাতিক আসরে দর্শকমুখর ম্যাচগুলোর বড় একটা অংশ মূলত চিরায়ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন