বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কিছু নেই অর্থনীতি স্থিতিশীল —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনীতি নিয়ে একটি মহলের অপপ্রচারে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে কিছু কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে, অনেকে বিভ্রান্ত হতে পারেন। সেখানে আমি বলব যে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কিছু নেই। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য যে যখনই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশটা অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়, সবার কাছে তা পছন্দ হয় না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২২-এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন।

করোনা মহামারীর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এর জেরে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব অর্থনীতি যখন ধুঁকছে তখন দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, কভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। তার ওপর আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের সঙ্গে আবার পাল্টাপাল্টি স্যাংশন। ফলে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশগুলো বা ধনী দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, তারা হিমশিম খাচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ, জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সে অবস্থায় আমি বলতে পারি, বাংলাদেশকে এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

একটি মহল সম্পর্কে সচেতন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা একটা মহল করে যাচ্ছে। সেখানে আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, যখন আমি সরকার গঠন করেছিলাম ১৯৯৬ সালে তখন আমি রিজার্ভ পেয়েছিলাম মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয়বার যখন সরকার গঠন করি ২০০৯- তখন পেয়েছি মাত্র বিলিয়ন ডলার। আমরা সেই বিলিয়নকে ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।

রিজার্ভ কীভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে সবখানে যাতায়াত বন্ধ ছিল, বিদেশ গমন বন্ধ ছিল, আমদানি বন্ধ ছিল, অন্য দেশগুলোতেও যখন একই অবস্থা, সে কারণে এটা হয়েছিল। আমরা কিন্তু সেখানে থেমে থাকিনি। আমরা ভ্যাকসিন কিনে বিনামূল্যে দেশের মানুষকে দিয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশও কিন্তু বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়নি।

ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন প্রয়োগের সরঞ্জাম ক্রয়, পরিবহন, সংরক্ষণেও বিপুল অর্থ খরচ হলেও জনগণকে তা বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য করোনাকে আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছি, অর্থনীতিকে ধরে রাখতে পেরেছি।

যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ সামনে এনে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখানে কোনো কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচ করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। আমরা করেছি। কিন্তু তার পরও আমাদের আমদানি-রফতানি বেড়েছে, বিনিয়োগ হচ্ছে। সার থেকে শুরু করে সবকিছু আমাদের কৃষকদের স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি।

জমি অনাবাদি না রেখে কিছু না কিছু উৎপাদনের ব্যাপারে আবারো তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যে মন্দাটা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে খাদ্যমন্দা, সেটা যেন আমাদের দেশে কখনো না আসে।

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা হলেও নিজেদের সীমিত গ্যাস আমদানিনির্ভরতার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ধীরে ধীরে সমস্যারও উত্তরণ ঘটিয়েছি।

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো রকম বিলাসিতা চলবে না। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ধাক্কাটা আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং পড়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ সারা বিশ্ব হচ্ছে এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্ব হচ্ছে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সেটা মাথায় রেখে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাব। সাশ্রয়ী হয়ে দেশ, দেশের সম্পদ রক্ষা করে চলতে হবে।

যুদ্ধ-সংঘাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের একটা প্রতিরক্ষা নীতিমালা দিয়ে গিয়েছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেটা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কারো সঙ্গে কোনো সমস্যা থাকলে আমরা তা সমাধান করি নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে।

উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোনো বিরোধ ছাড়াই সমুদ্রসীমা স্থলসীমা নির্ধারণ ছিটমহল বিনিময়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের উন্নয়নে সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে যদি আমরা স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে না পারি, তাহলে আমাদের যে স্বাধীনতা স্বাধীনতার যে চেতনা, সেটা আমরা ধরে রাখতে পারব না। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন