মাৎস্যবিজ্ঞান

সঠিক সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব

অধ্যাপক . কাজী আহসান হাবীব শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে মাৎস্যবিজ্ঞানের গুরুত্ব, ক্যারিয়ার মৎস্য খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শাহাদাত বিপ্লব

মাৎস্যবিজ্ঞান কেন গুরুত্বপূর্ণ? কী কী বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে?

মাৎস্যবিজ্ঞান একটি প্রায়োগিক বিষয়। বাংলাদেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মাৎস্যবিজ্ঞানে স্নাতক স্নাতকোত্তরে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। মাছ, জলজ প্রাণী অ্যাকুয়াটিক জলজ উদ্ভিদ সবই মাৎস্যবিজ্ঞানের অংশ। অর্থাৎ সমুদ্র স্বাদু পানিতে যা থাকে তাই মাৎস্যবিজ্ঞান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয় খোলা হয়। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে -সংক্রান্ত বিষয় খোলা হয়েছে। ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস, অ্যাকুয়াকালচার, ফিশিং অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি, অ্যাকুয়াটিক অ্যানিমেল হেলথ ম্যানেজমেন্ট, মেরিন ফিশারিজ সমুদ্রবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক স্নাতকোত্তর করা যায়। প্রায়োগিক বিষয় হওয়ায় বহুমুখী ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। আর সবকিছুই শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিকের মাধ্যমে শিখছেন। পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ, রিসার্চ থিসিসের কারণে বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মাঠ পর্যায়ের ধারণাও তৈরি হয়।

মাৎস্যবিজ্ঞান পড়াশোনায় সীমাবদ্ধতাগুলো কী?

মাৎস্যবিজ্ঞান পুরোই ব্যবহারিক বিষয়। বরাদ্দের অভাবে কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। যেমন প্রায়োগিক বিষয় হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কীভাবে মাছ উৎপাদন করা হয় সেগুলো শেখাতে হয়। আবার উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাতে হয়। এজন্য গবেষণাগারে বরাদ্দ বাড়ানো এবং সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে দেশীয় জাতের অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। অনেক জাত বিলুপ্তির পথে। এর কারণ কী? কীভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে?

উন্মুক্ত জলাধার, যেমন খাল-বিল, নদী-নালায় আগে অনেক মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণের ফলে উন্মুক্ত জলাধার অনেক কমে গিয়েছে। আবার কৃষিজমিতে কীটনাশক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা খাল-বিল, নদী-নালার পানিতে মিশে যাওয়ার কারণে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মাছের বৈচিত্র্য কমেছে।  অন্যদিকে চাষের মাছ অনেক বেড়েছে। মাছে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রযুক্তির উন্নয়নের অবদান রয়েছে। তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ইলিশ সংরক্ষণের ফলে শুধু ইলিশ নয় পাঙাশের উৎপাদনও বেড়েছে। উন্মুক্ত জলাধার সংরক্ষণ, মাছের অভয়াশ্রম তৈরি এসব রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে দেশীয় মাছ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আবার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে মাছের প্রজাতি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে এসব উদ্যোগ নিয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও উদ্যোগ নিয়েছে।

মাছ রফতানি মূলত চিংড়িনির্ভর। অন্যান্য দেশীয় মাছ রফতানি বৃদ্ধিতে কী করা যেতে পারে?

মান নিশ্চিতের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। এখন রফতানি অনেকটা চিংড়িনির্ভর। আগে দেখা যেত, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিংড়ির মধ্যে জেলি ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। তবে এটা এখন কমে গিয়েছে। উৎপাদনের প্রথম স্তর থেকে হারভেস্ট হওয়া পর্যন্ত সব স্তরে মান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমরা সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারে আরো শক্ত অবস্থান করতে পারব।

মৎস্য খাতের বর্তমান সংকট কী?

বর্তমানে প্রচুর মাছ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দাম পড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে মৎস্যচাষীদের ওপর। মৎস্যখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। খাদ্য উপাদানগুলোর দাম কমানোর জন্য ভর্তুকি কিংবা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনেক সময় কোম্পানিগুলো সুযোগ-সুবিধা পেলেও তা চাষী পর্যায়ে পৌঁছে না। মাছের ক্ষেত্রে আমাদের রফতানিমুখী হতে হবে। প্রক্রিয়াজাতে আমরা অনেক পিছিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তেলাপিয়া পাঙাশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো ধরতে পারছি না। ভিয়েতনাম এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। মাছের কৌটা বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা এখনো সেভাবে করতে পারিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন