মাৎস্যবিজ্ঞান

২৪০ প্রজাতির মাছের সংগ্রহশালা

ফিচার প্রতিবেদক

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশ মিউজিয়াম অ্যান্ড জার্মপ্লাজম সেন্টার ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মাছে-ভাতে বাঙালিবাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে উপমা বহুল প্রচলিত। নদীমাতৃক দেশে মাছের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক যেমন বহুকালের তেমনি এটি সংস্কৃতিরও অংশ। মাছ নিয়ে একাডেমিক গবেষণার পাশাপাশি সম্পর্ককে কালের সাক্ষী করে রেখেছে এক জাদুঘর। কত রকম মাছ! বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) স্থাপিত ফিশ মিউজিয়াম অ্যান্ড জার্মপ্লাজম সেন্টার, যা মাছ জাদুঘর হিসেবেই সমধিক পরিচিত। প্রায় ২৪০ প্রজাতির দেশীয় মাছ নিয়ে ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বাংলাদেশের প্রথম মাছ জাদুঘর। মৎস্য গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিলুপ্ত বিলুপ্তপ্রায় স্বাদু পানি এবং সামুদ্রিক মাছ জলজ প্রাণীর সংগ্রহশালা ফিশ মিউজিয়াম অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি সেন্টার নামে প্রথমে এর যাত্রা শুরু হয়। সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১০ সালে।

দেশের ৩০০ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করতেই হবে’—এমন পণ নিয়ে ৬৪ জেলা চষে বেড়িয়েছেন বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক . মোস্তফা আলী রেজা হোসেন। শুরুটা প্রায় দুই দশক আগে। জীবিত বা মৃত মাছের ছবি তুলে সংরক্ষণ করা ছিল শখ। দেশের সবকটি জেলা ঘুরে সংগ্রহ করেছেন নানা প্রজাতির মাছ।

বর্তমানে প্রায় ২৪০ প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ দেশীয় মাছ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর নমুনার এক বিশাল সংগ্রহশালা জাদুঘর। এখানে সিলুরিফরমিস গ্যালারি অংশে সংগৃহীত রয়েছে ৫৩ প্রজাতির মাছ। ক্যাটফিশ নামে পরিচিত গোত্রের অন্তর্ভুক্ত টেংরা, আইড়, বোয়াল, মাগুর, শিং, বাগাড়, কাজুলী, বাতাসী, পাবদা, রিটা ইত্যাদি। জাদুঘরের সিপ্রিনিফরমিস গ্যালারিতে ৮১ প্রজাতির মাছ সংগৃহীত রয়েছে। স্বাদু পানির মাছের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা এটি। এর মধ্যে রয়েছে কার্প, পুঁটি, গুতুম, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, মলা, চেলা, দারকিনা ইত্যাদি।

এখানে দেখা যাবে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিলুপ্ত মাছ জলজ প্রাণীর জীবাশ্মের প্রতিলিপি। হাঙরের চামড়া, ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া দুই দাঁতবিশিষ্ট বাঘের কঙ্কাল, ৫৪ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত জলজ প্রাণী গারপাইক, হর্সগ্রাস, স্ট্রিং-রের জীবাশ্ম, ১৫ মিলিয়ন বছর আগের বিলুপ্ত হাঙরের চোয়াল দাঁত, ৩৫ কোটি বছর আগে বিলুপ্ত কোরালের জীবাশ্মসহ প্রায় ৪০টি জীবাশ্ম কঙ্কাল জাদুঘরে সংগৃহীত রয়েছে।

মাছ জাদুঘরের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক . মোস্তফা আলী রেজা হোসেন বলেন, দেশের সব প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করতে ছুটে বেড়িয়েছি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। মাছগুলো মানুষের সঙ্গে পরিচিত করা দরকার। অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রাণী বিপন্ন হলে তার হিসাব থাকে, কিন্তু পানির নিচে কী হারিয়ে যাচ্ছে সেটা আমরা কেউ জানি না। বিপন্ন মাছগুলো সংরক্ষণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া উচিত।

জাদুঘরটি স্থাপনে সহযোগিতা করেছেন যুক্তরাজ্যের স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এনডি সিন। জাদুঘরের বিভিন্ন নমুনা যুক্তরাজ্যের স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে ২০১৮ সালে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন