মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহর কাছে গতকাল শপথ নিয়েছেন দুই উপপ্রধানমন্ত্রী ও ২৫ জন মন্ত্রী। ইস্তানা নেগারায় আয়োজিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এছাড়া পুলিশ ও বিমান বাহিনী প্রধানসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
শপথ নেয়া দুই উপপ্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আহমদ জাহিদ হামিদি ও ফাদিল্লাহ ইউসুফ। শুক্রবার আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় তার নিয়ন্ত্রণেই থাকছে। উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে মাহাথির মুহাম্মদের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। কিন্তু এশীয় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা নিয়ে ভিন্নমতের কারণে ১৯৯৮ সালে তাকে বাহিষ্কৃত করেছিলেন ‘ডক্টর এম’
হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রনায়ক।
আনোয়ার ইব্রাহিমের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চ্যাং লিহ ক্যাং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জামব্রি আবদ কাদির। আগামীকাল নতুন মন্ত্রিসভার বিশেষ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও রাজার হস্তক্ষেপে প্রত্যাশিত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদে গত সপ্তাহে শপথ নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। ঝুলন্ত পার্লামেন্ট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে মালয়েশিয়াকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা তা-ই দেখার বিষয়।
তিন দশক ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতির ট্র্যাজিক হিরোর ভাবমূর্তি ছিল আনোয়ার ইব্রাহিমের। এবার কাঙ্ক্ষিত দায়িত্ব পেয়ে তিনি কি পারবেন কঠিন সময়ে দেশকে সামলাতে। গতকাল মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার বলেন, তার সরকারের মূল ফোকাস থাকবে অর্থনীতি এবং তা পুনরুজ্জীবিত করতে সম্ভব সব পদক্ষেপই নেবেন।
তিনি আরো জানান, নতুন সরকারের প্রথম কাজ হবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এরই মধ্যে নাভিশ্বাস উঠে গেছে সাধারণ মানুষের। বিষয়টিতে তিনি যে গুরুত্ব দিচ্ছেন তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে তার নেয়া পদক্ষেপে।
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন আনোয়ার। এর মাধ্যমে তাদের নগদ অর্থসহায়তা দেয়া হবে, যাতে জীবনমানের ব্যয় কমে এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা দেখা দেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর এক ঘোষণায় মালয়েশিয়ার নয়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব নাগরিককেই ভর্তুকি দেয়া হবে।
আগে থেকেই জ্বালানি তেল ও রান্নার তেলে ভর্তুকি দেয় মালয়েশিয়া সরকার। বিদ্যুৎ, চিনি ও ময়দায়ও ভর্তুকি দেয়া হয়। আনোয়ার ইব্রাহিম এতে সংস্কার আনতে চান। গত সপ্তাহে বলেন, ভর্তুকি হতে হবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে। অন্যথায় নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি ধনীরাও এ সুবিধা ঘরে নেবে।
যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগে ভর্তুকি পায়নি সেগুলোকে নতুন বিবেচনায় আনা হবে বলে জানান আনোয়ার ইব্রাহিম। এক বছরে মালয়েশিয়া সরকার ভর্তুকির পেছনে ৭ হাজার ৭৭০ কোটি রিঙ্গিত বা ১ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে।
আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে বানানো মন্ত্রিসভা নিয়ে এগোনো। এ পলিসি কতটুকু সাফল্য দেখবে তা নিয়ে এরই মধ্যে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মালয়েশিয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠ এডমন্ড টেরেন্স গোমেজ বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভার কারণে এমনিতেই আনোয়ার ইব্রাহিমের হাত-পা বাঁধা থাকবে। এমন লোকদের নিয়ে মন্ত্রিসভা করতে হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে তিন দশক ধরে আন্দোলন করে এসেছেন।
গোমেজের সমালোচনার জায়গা প্রধানমন্ত্রীর অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ। ফ্রিমালয়েশিয়াটুডেকে তিনি বলেন, সুশাসন ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতে এ অর্থ মন্ত্রণালয় পৃথক থাকা উত্তম।