গৌতম আদানি: স্কুল ড্রপআউট থেকে এশিয়ার শীর্ষ ধনী

বণিক বার্তা অনলাইন

গৌতম আদানি ছবি: রয়টার্স

২৬ নভেম্বর ২০০৮, গৌতম আদানি তখন ভারতের ১০তম ধনী ব্যক্তি। মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল তাজ মহল হোটেলে ডিনার (রাতের খাবার) করছিলেন তিনি, সেসময় তিনি বন্দুকধারীদের হোটেলে ঢুকতে দেখেন। এরপর শুরু হয় চারদিকে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়া। 

সেই রাতে অস্ত্রধারী ১০ পাকিস্তানি জঙ্গি সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ে ঢুকে গাড়ি ছিনতাই এবং দুটি অভিজাত হোটেলে হামলা চালায়। মুম্বাই শহর ৬০ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণে ছিল তাদের এবং ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে আরো অবনতি ঘটে। 

আদানি পরে ইন্ডিয়া টুডেকে বলেছিলেন, হোটেলকর্মীরা তাকে দ্রুত কয়েকঘণ্টার জন্য বেসমেন্টে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বাইরের রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্যেও পরে তাকে ওপরতলার একটি হলে নিয়ে গিয়েছিলেন। হলটিতে ১০০ জন অতিথি লুকিয়ে ছিলেন। কেউ কেউ সোফার নিচে লুকিয়ে তাদের জীবনের জন্য প্রার্থনা করছেন। 

আদানি সেই পরিস্থিতির বর্ণনায় জানিয়েছিলেন, তিনি একটি সোফায় বসেছিলেন, আটকেপড়া অতিথিদের ‘সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস’ রাখতে বলেছিলেন। তার চালক ও নিরাপত্তারক্ষীরা বাইরে গাড়িতে তার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন। আদানি তার জন্ম শহর আহমেদাবাদে (মুম্বাই থেকে ৫০০ কিমি দূরে) তার পরিবারকে ফোনকল করেছিলেন। পরদিন সকালে কমান্ডোরা হোটেলটি ঘেরাও করার পর আদানি ও অন্য জিম্মিদের পেছনের প্রবেশদ্বার দিয়ে বের করে আনা হয়। তিনি ব্যক্তিগত উড়োযানে আহমেদাবাদে ফেরার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি মাত্র ১৫ ফুট (প্রায় ৫ মিটার) দূরত্বে মৃত্যু দেখেছি’। 

১৪ বছর পর গৌতম আদানি (৬০) এখন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। ইলোন মাস্ক ও জেফ বেজোসের পর তার অবস্থান। তিনি সাতটি পাবলিক ট্রেড কোম্পানি, ২৩ হাজার কর্মী ও ২৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজার মূলধন নিয়ে বন্দর থেকে জ্বালানি ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন। এশিয়ার এই ধনকুবের কয়েকদিন ধরে খবরের শিরোনামে রয়েছেন। ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিউজ নেটওয়ার্ক এনডিটিভি এখন তার দখলে। 

বিলিয়নেয়ার হয়ে ওঠার আগে স্কুল থেকে ঝরে পড়া (ড্রপআউট) আদানির ঝুঁকি নেয়ার দুর্দমনীয় নেশা ছিল। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে আহমেদাবাদে একদল অপহরণকারী তাকে ও তার এক সহযোগীকে বন্দুকের মুখে মুক্তিপণের জন্য জিম্মি করে। 

ব্যবসায়ী হিসেবে আদানি প্রায়শই নিজেকে লো-প্রফাইল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য এই ঘটনাগুলো সম্পর্কে খুব বেশি কথা বলেন না। শুধু একজন সাংবাদিককে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে দুই বা তিনটি খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে’।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে আদানি ব্যবসা করতে মুম্বাই চলে যান। সেখানে তিনি হীরার ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকের তার এই ব্যবসা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দুই বছর পর তিনি তার নিজ রাজ্য গুজরাটে ফিরে যান। সেখানে তিনি তার ভাইয়ের মাধ্যমে একটি প্যাকেজিং কারখানা চালানো শুরু করেন। 

আদানি মধ্যবিত্ত টেক্সটাইল ব্যবসায়ী পরিবার থেকে এসেছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি কারখানা চালু করার পরে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তী ২৪ বছরে তার ব্যবসা বন্দর, খনি, রেলপথ, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও রিয়েল এস্টেটে বিস্তৃত করেছে। একজন ভাষ্যকার তাকে ‘ভারতের নতুন প্রজন্মের ধনকুবেরের মধ্যে সবেচেয়ে আগ্রাসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

আজ আদানি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট কোম্পানি পরিচালনা করেন। পশ্চিম উপকূলীয় শহর মুন্দ্রায় দেশের বৃহত্তম বন্দরসহ ১২টি বন্দর ও সাতটি বিমানবন্দর পরিচালনা করেন। তিনি দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মধ্যে ভারতের দীর্ঘতম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছেন।

বেসরকারিভাবে ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি। তার ছয়টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। তিনি ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কয়লা খনিও কিনেছেন।  

এতকিছুর পরও গৌতম আদানিকে ঘিরে বিতর্কও রয়েছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই সময় থেকে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এ কারণে হরহামেশাই বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। এ ছাড়া তার ব্যবসাকে পুঁজিবাদের নেতিবাচক রূপের উদাহরণ হিসেবেও দেখা হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন