৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা কর আদায়

রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা বা রিটার্ন জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেয়া যাবে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়কর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার থেকে মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে। গত বছর যা ছিল সাড়ে ১০ লাখ। একই সময়ে কর আদায় হয়েছে হাজার ৪২ কোটি টাকা, গত বছর যার পরিমাণ ছিল হাজার কোটি টাকা।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। সময় প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাপনা কর নেট সম্প্রসারণ: প্রাসঙ্গিক ভাবনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআর সদস্য (কর নীতি) . সামস উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০৪১ সালের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ করতে চায় এবং মোট রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদান ৫০ শতাংশে নিয়ে যেতে যায়, যা বর্তমানে ৩৪ শতাংশ। লক্ষ্যে কর সেবা আধুনিকায়ন কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনে উন্নীত করতে কাজ করছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে আয়কর আদায়ের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে আয়কর আদায়ে ১৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, রাজস্ব বাড়াতে ডিজিটাইজেশনের বিকল্প নেই। এখানে করদাতাদের ওপর আস্থা বাড়ানো এবং রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ায় মানুষের হস্তক্ষেপ কমিয়ে আনতে হবে। তবে কর ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনে দেশের বাইরের কোনো ভেন্ডরের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। যে কমিশনাররা তথ্যপ্রযুক্তির কাজে দক্ষ তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। বাইরের ভেন্ডররা সফটওয়্যার বিক্রি করে চলে যায়, এতে সঠিক উন্নতি হয় না।

অনেক সংগঠনের দাবি জনগণের সুবিধার্থে রিটার্ন জমা দেয়ার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি সবাইকে মাসের প্রথমেই রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন, যেন মাস শেষে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউকে রিটার্ন জমা দিতে না হয়।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অংশ বাড়াতে হবে। করদাতাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যদি দেশে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় জিডিপি বৃদ্ধি পায়। রাজস্ব বাড়াতে মানুষের স্বেচ্ছায় কর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ কর দেয়াকে সহজ করতে হবে। রাজস্ব বোর্ড এসব বিষয়ে কাজ করছে। আমরা কর আইন সহজ করার জন্য চেষ্টা করছি, কিন্তু কর আইন বিশ্বব্যাপী অনেক জটিল। এখানে সংস্কারের জন্য অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য কর্মকর্তাদের নিজেদের সমস্যাটা বুঝতে হবে, সে অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, প্রত্যক্ষ কর সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়ার হাতিয়ার এটা ঠিক। কিন্তু কর ধনী-গরিব সবাইকে প্রায় সমানভাবে দিতে হয়। আমি চাই মোট রাজস্বে ভ্যাট প্রত্যক্ষ কর মিলিয়ে ৯৫ শতাংশ হোক এবং কাস্টমসের অবদান কমে আসুক। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অটোমেশনের ওপর বড় বিনিয়োগ করতে হবে, তাহলে দেশের অন্যান্য সেক্টরের অটোমেশন প্রক্রিয়ায় এনবিআরের যুক্ত হওয়াটা সহজ হবে এবং কর নেট বাড়বে।

বোর্ডের আরেক সদস্য (ট্যাক্স অডিট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) প্রদ্যুৎ কুমার সরকার বলেন, ইনকাম ট্যাক্সের আইন জটিল, কিন্তু জটিলতা কমাতে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা আরো বেড়ে যায়। তাই জটিলতার অনিবার্যতা মেনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাপনায় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জড়িত। তাই বলা যায় সবাই মিলেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি মানে দেশের ঘাটতি। কর আদায়ে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাণ্ডারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, যেমন বিআরটিএ, ল্যান্ড মিনিস্ট্রি, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন ইত্যাদি। এতে করনেট বাড়িয়ে আরো বেশি কর আদায় সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন