টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের ঝুঁকিতে ‘বিশ্বকাপের দল’ খ্যাত জার্মানি। আজই কাতার বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যেতে পারে চারবারের সাবেক চ্যাম্পিয়ন, চারবারের রানার্সআপ ও চারবার তৃতীয় হওয়া দলটির! জার্মানদের নকআউটের ভাগ্য নির্ভর করছে স্পেন-জাপান ম্যাচের ফলাফলের ওপর। স্পেনের জয়ের পর নিজেরা কোস্টারিকাকে হারালেই শেষ ষোলোর টিকিট পাবে হ্যানসি ফ্লিকের দল। তাই কোস্টারিকাকে হারানোর পাশাপাশি জার্মানদের প্রার্থনা করতে হবে যেন জাপানের কাছে স্পেন হেরে না যায়। জাপান জিতলে জার্মানিকে অন্তত ৮ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে।
‘ই’ গ্রুপে দুই ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে স্পেন, ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে জাপান, সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে কোস্টারিকা তিনে ও জার্মানি ১ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে।
জার্মানরা প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে হেরে বসে ১-২ গোলে। ওই হারটিই বিপদে ফেলে দেয় ডাই ম্যানশাফটদের। পরের ম্যাচে স্পেনের সঙ্গে ড্র করে এখনো আশা বাঁচিয়ে রেখেছে তারা। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের ঝুঁকি কাটেনি। আজ তাই রাজ্যের অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করেই টমাস মুলার, লেরয় সানে ও জামাল মুসিয়ালারা নামবেন আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে।
এরই মধ্যে কোস্টারিকার আনুকূল্য পেয়েছে জার্মানি। জাপানকে তারা হারিয়ে না দিলে জার্মানির বিদায় এখন নিশ্চিত হয়ে যেত। মধ্য আমেরিকার সেই ‘উপকারী বন্ধু’কেই আজ হারাতে নামছে জার্মানরা। গত রোববার জাপানের বিপক্ষে কোস্টারিকার জয়ে এটা নিশ্চিত হয়ে যায়, স্পেনের কাছে হারলেও বিদায় ঘটছে না জার্মানদের। চাপ খানিকটা কমে যাওয়ায় সেদিন রাতে স্পেনের সঙ্গে লড়াই করে ম্যাচটি ড্র করতে সমর্থ হয় চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
সমীকরণটা স্পেনের জন্য খুব কঠিন নয়। জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে জয়বঞ্চিত হয় ২০১০ আসরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তাতে লা রোজাদের কিছু কাজ বাকি থেকে যায়। আজ জাপানের বিপক্ষে ১ পয়েন্ট পেলেই নকআউটের টিকিট নিশ্চিত, আবার হেরেও তারা উঠতে পারে শেষ ষোলোয়। তবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে জয়ই চাইবে লুই এনরিকের দল।
স্পেন বিদায়ও নিতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। তারা যদি জাপানের কাছে হেরে যায় এবং কোস্টারিকা হারিয়ে দেয় জার্মানিকে, তবে এনরিকের দল বাড়ি ফিরবে। জাপানের জয়ের পর জার্মানি যদি বড় ব্যবধানে কোস্টারিকাকে হারায়, তাতেও বিদায় ঘটবে স্পেনের। কোস্টারিকার ভাগ্য তাদের নিজেদেরই হাতে আর জার্মানির ভাগ্য সবটুকু তাদের হাতে নেই। কোস্টারিকা ড্র করেও নকআউটে উঠতে পারে, যদি স্পেনের কাছে জাপান পরাজিত হয়।
টেবিলের দিকে ইঙ্গিত করে জার্মান তারকা টমাস মুলার বলেছেন, আমাদের জন্য এটা লজ্জারই। উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু এখানে নেই।
মুলার মনে করেন, স্পেনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলটি তাদের মানসিকভাবে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে এবং নকআউটে ওঠার সুযোগ তৈরি করেছে।
রাশিয়া আসরে একই পরিস্থিতিতে পড়েছিল জার্মানি। মেক্সিকোর কাছে প্রথম ম্যাচ হারের পর সুইডেনকে হারিয়ে টিকে থাকে জার্মানি। শেষ ম্যাচে জিতলেই হতো, যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় ঘটে তাদের। এ নিয়ে মুলার বলেছেন, এবার আমাদের কাজটি করতে হবে ভিন্নভাবে। গোটা বিশ্বই জার্মানি-কোস্টারিকা ম্যাচের দিকে তাকিয়ে, মনে হয় এতে আমরাই ফেভারিট। এটা পরিষ্কার, আমাদের জিততে হবে।
কিন্তু কোস্টারিকা হয়তো সহজে ছেড়ে দেবে না। দলটির কোচ লুই ফার্নান্দেজ সুয়ারেজ যা বললেন তা জার্মানদের জন্য সতর্কবার্তাই। গতকাল তিনি বলেছেন, আমরা শুধু বসে থাকতে আর কাতারের ছবি তুলতে আসিনি।
স্পেন ম্যাচে ৮৩ মিনিটে গোল করে জার্মানিকে টিকিয়ে রাখা নিকলাস ফুলক্রুগ কোস্টারিকাকে নিয়ে মূল্যায়ন তুলে ধরলেন এভাবে, এ বিশ্বকাপে কোস্টারিকার দুটি চেহারা দেখা যায়। স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচটি মূল্যায়ন করা কঠিনই। এরপর জাপানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তারা নিজেদের ফিরে পেয়েছে। জাপান ম্যাচে তারা বলের ওপর দখল রাখে। আমরা তাদের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য তৈরি আছি।
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ জিতলে গ্রুপসেরা হবে স্পেন। এনরিকের দল যদি শেষ ষোলোয় উঠে জয়লাভ করে, তবে কোয়ার্টার ফাইনালে পাঁচবারের বিশ্বসেরা ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্পেনের মিডফিল্ডার কোকে এ নিয়ে বলেন, নকআউট রাউন্ডের প্রতিপক্ষ নিয়ে আমরা ভাবছি না। প্রথমেই জাপানকে হারাতে হবে, এরপর আমরা দেখব পরের রাউন্ডে কার বিপক্ষে খেলতে হবে। সেটি যদি ব্রাজিল হয়, তবে ঠিক আছে এবং আমরা এজন্য যথাসাধ্য প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করব।
জাপানের জন্য কাজটি সহজ নয়, কিন্তু আজ একটি জয় জাপানকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো তুলে নেবে নকআউট পর্বে। সেক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো টানা দুই আসরে নকআউট পর্বে ওঠার কৃতিত্ব দেখাবে জাপানিরা। আর হারলেই বাড়ি ফিরতে হবে ব্লু সামুরাইদের। গত বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল এশিয়ান জায়ান্টরা।
‘এফ’ গ্রুপ থেকে কানাডার বিদায় ঘটেছে। দুই টিকিটের জন্য লড়াই এখন ক্রোয়েশিয়া (৪), মরক্কো (৪) ও বেলজিয়ামের (৩) মধ্যে। বিদায় নেয়া কানাডাকে আজ হারালে কিংবা ড্র করলে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠে যাবে মরক্কো। ১৯৮৬ সালে তারা নকআউট পর্বে খেলেছিল। আজ হেরেও নকআউটে উঠতে পারে মরক্কো, সেক্ষেত্রে বেলজিয়ামকে হারতে হবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে।
ক্রোয়েশিয়া-বেলজিয়াম ম্যাচটি রূপ নিয়েছে নকআউটে। যারাই জিতবে তারা উঠবে শেষ ষোলোয়, পরাজিত দল বিদায় নেবে। ম্যাচটি ড্র হলে ক্রোয়েশিয়া পাবে নকআউটের টিকিট। তখন বেলজিয়ামের আশা টিকে থাকবে যদি মরক্কো হারে।
ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে শুরু করা মরক্কো পরের ম্যাচে বেলজিয়ামকে হারিয়ে চমক দেখায়। গোল করেন রোমাইন সাইস ও জাকারিয়া আবুখলাল। দলটির কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই বলেন, আমাদের দলটিকে এ মুহূর্তে হারানো কঠিন। আমরা বিশ্বের দুটি সেরা দলের সঙ্গে সমানে সমান লড়েছি। আমাদের এ খেলাটিই ধরে রাখতে হবে।
বিশ্বকাপে আজকের খেলা
কানাডা-মরক্কো, রাত ৯টা
ক্রোয়েশিয়া-বেলজিয়াম, রাত ৯টা
জার্মানি-কোস্টারিকা, রাত ১টা
জাপান-স্পেন, রাত ১টা