নতুন করে লকডাউন

চীনে কারখানা ও পরিষেবা কার্যক্রম ৭ মাসের সর্বনিম্নে

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের পরিষেবা খাতের কার্যক্রমের সূচক গত মাসে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। সাংহাইয়ের একটি রেস্তোরাঁ ছবি: রয়টার্স

চীনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির কারখানা পরিষেবা কার্যক্রম আবারো সংকুচিত হয়েছে। দুই খাতের কার্যক্রম সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে কভিডজনিত লকডাউন এবং বৈশ্বিক চাহিদা নিম্নমুখী হওয়ায় পুনরায় দেশটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থায় আগামী বছর দেশটির অর্থনীতি বড় ধাক্কার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে নতুন করে কভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিং বেশ কয়েকটি শহরে দীর্ঘ লকডাউন আরোপ করেছে। পদক্ষেপ দেশটিতে অ্যাপলের বিশ্বের বৃহত্তম আইফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত করছে। একজন বিশ্লেষক অনুমান করেছেন, বর্তমানের বিধিনিষেধ চীনা অর্থনীতির প্রায় এক-চতুর্থাংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে সবচেয়ে বিরল ঘটনা হলো প্রথমবারের মতো দেশটিতে কভিডজনিত লকডাউনবিরোধী প্রতিবাদ হয়েছে।

সরকারি তথ্যে দেখা গিয়েছে, গত মাসে ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ৪৮ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক অক্টোবরের ৪৯ দশমিক পয়েন্টের চেয়ে কম। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা ৪৯ পয়েন্টে নামার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এদিকে পরিষেবা খাতের কার্যক্রম গত মাসে ৪৬ দশমিক শতাংশে নেমেছে। আগের মাসেও পিএমআই ৪৮ দশমিক পয়েন্টে ছিল। সূচকও গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। পিএমআই ৫০ পয়েন্টের নিচে ওই খাতের সংকোচন এবং এর উপরে প্রসারিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মনোযোগ দিয়েছে। তবে চীন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখনো লকডাউন, গণপরীক্ষা কোয়ারেন্টিনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব পদক্ষেপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আঘাত করেছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপর্যয়ে ফেলে দিচ্ছে।

এদিকে কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুনরায় ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। অবস্থায় রেকর্ড মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে প্রধান অর্থনীতিগুলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়ানো হচ্ছে সুদের হার। তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি। সব মিলিয়ে টালমাটাল এক পরিবেশে ব্যয়ে লাগাম টেনেছে ভোক্তারা। এতে বিশ্বজুড়েই ধীর হয়ে পড়েছে চাহিদা। পরিস্থিতি রফতানিমুখী খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

কয়েক মাস ধরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি রিয়েল এস্টেট খাতের মন্দা এবং বিশ্বজুড়ে চীনা পণ্যের দুর্বল চাহিদার প্রভাবে ভুগছে। অবস্থায় নতুন করে সংক্রমণ লকডাউন দেশটিকে বাড়তি চাপে ফেলে দিয়েছে। পিএমআইয়ের তথ্য প্রকাশের পর অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতিবিদ শিনা ইউ একটি নোটে বলেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে নেতিবাচক ঝুঁকিগুলো বাড়ছে। ২০২৩ সালে অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কার মুখোমুখি হতে পারে।

কর্মসংস্থান সরবরাহকারীদের ডেলিভারির সময়সহ উৎপাদনের উপসূচকগুলোও নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় দ্রুতগতিতে সংকুচিত হয়েছে। দেশ দেশের বাইরে চীনা পণ্যের চাহিদা দুর্বল হওয়ায় নতুন ক্রয়াদেশ এবং রফতানি ক্রয়াদেশের উপসূচক উভয়ই আরো কমেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে চীনা কর্তৃপক্ষ গত মাসে বেশকিছু নীতি প্রবর্তন করে। এর মধ্যে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও কমানো এবং আবাসন খাতে অর্থায়নের বাধা শিথিল করা হয়েছে। তবে ব্যবস্থাগুলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন শিনা ইউ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক নীতি সমর্থন আবাসন খাতের মন্দা রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে মন্দার ঝুঁকির কারণে রফতানিকারকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকবে। আবার অনেক কিছুই চীনের কভিডজনিত নীতির ওপর নির্ভর করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন