প্রযুক্তি খাতে চীনের নিয়ন্ত্রণ

টোকিওতে নিভৃত জীবনযাপন করছেন ধনকুবের জ্যাক মা

বণিক বার্তা ডেস্ক

জ্যাক মা ছবি: রয়টার্স

২০২০ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন চীনা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। এর পরই প্রতিষ্ঠানটির ওপর নেমে আসে নিয়ন্ত্রকদের খড়্গ। সে সময় থেকেই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান একসময় চীনের শীর্ষ ধনী। এর মধ্যে কয়েকবার তাকে ভিডিওবার্তায় দেখা গেলেও তার অবস্থান জানা যায়নি। এখন জানা গেল নতুন খবর।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় ছয় মাস ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জাপানের টোকিওতে বসবাস করছেন জ্যাক মা। সেখানে তিনি অনেকটা নিভৃত জীবনযাপন করছেন। খুব বেশি প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও তিনি মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ভ্রমণ করেন। পাশাপাশি তিনি জাপানের গ্রামাঞ্চলে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সেখান থেকেই নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ইংরেজির শিক্ষক থেকে বিলিয়নেয়ার বনে যাওয়া জ্যাক মা।

একটা সময় পর্যন্ত জ্যাক মা ছিলেন চীনের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়িতে পুঁজিবাজারে আলিবাবার শেয়ারদরে ধস নামে। তার সম্পদ হাজার কোটি ডলার থেকে বর্তমানে হাজার ১০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, আলিবাবার মতো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এতই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছিল যে তাকে ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয় বেইজিং। পাশাপাশি জ্যাক মার স্পষ্টভাষিতাও ক্ষমতাসীনদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছিল। প্রযুক্তিবিষয়ক এক সম্মেলনে জ্যাক মা চীনের ব্যাংকগুলোর সমালোচনা করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রশংসা করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে চীনের আর্থিক খাতেরও নানা সমালোচনা করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে পুরো আর্থিক প্রযুক্তি খাতের শিল্পগুলোর ওপর কঠোর নীতি আরোপ করে চীন। দেশটির সবচেয়ে বড় ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে আলিপের কার্যক্রম সঠিক নয় বলেও দাবি করা হয়। একপর্যায়ে আলিবাবার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে চীন। বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে বাজারে নিজের অবস্থানের অপব্যবহার করেছে আলিবাবা। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়। তবে ধারণা করা হয়, চীনা আর্থিক খাত নিয়ে জ্যাক মার সমালোচনাই এসবের পেছনের কারণ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গিঞ্জা মারুনৌচির মতো শহরের ব্যক্তিগত ক্লাবগুলোতেও যাতায়াত আছে জ্যাক মার। সেখানে মূলত ধনী ব্যক্তিদের যাতায়াত রয়েছে। টোকিওতে তিনি তার দেহরক্ষী ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে তিনি একজন আধুনিক শিল্পকর্ম সংগ্রাহক হয়ে উঠেছেন।

কভিড মহামারীর শুরুতে বিভিন্ন দেশে তিনি প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী অন্যান্য পণ্য সহায়তা পাঠিয়েছেন। গত জুলাইয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জ্যাক মা চীনা নিয়ন্ত্রকদের সন্তুষ্ট করতে এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ইউনিট আলিপের আইপিও পুনরুজ্জীবিত করতে অ্যান্ট গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেও নিট লোকসানের মুখোমুখি হয়েছে আলিবাবা গ্রুপ। আয়ের ক্ষেত্রেও প্রত্যাশার তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে চীনা -কমার্স জায়ান্টটি। কারণ হিসেবে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীর এবং ভোক্তা মনোভাবে পতনকে দায়ী করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া প্রান্তিকে হাজার ৬০ কোটি ইউয়ান (২৮৭ কোটি ডলার) নিট লোকসানের কথা জানিয়েছে আলিবাবা। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ইকুইটি বিনিয়োগের বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় সংস্থাটির লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে। সময়ে সংস্থাটির আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭২০ কোটি ইউয়ানে ( হাজার ৯০০ কোটি ডলার) কভিডজনিত লকডাউন এবং গণপরীক্ষার মতো ব্যবস্থাগুলো অব্যাহত থাকায় ভোক্তারা ব্যয়ের ক্ষেত্রে লাগাম টেনেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন