কাতার বিশ্বকাপে ৩২ দলের লড়াইটা শিগগিরই নেমে আসছে ১৬ দলের মধ্যে। বেশির ভাগ গ্রুপেই শেষ রাউন্ডের ম্যাচে যেন নকআউটের উত্তাপ। শুক্রবারের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে, কারা বাড়ি ফিরবে আর কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে নকআউট ম্যাচে। দুই ম্যাচ খেলেই নকআউটের টিকিট নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও পর্তুগাল। এক ম্যাচ বকি থাকতেই বিদায় নিয়েছে কাতার ও কানাডা। গতকাল রাতে ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপ থেকে চার দলের শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত হয়েছে। বাকি ৬ গ্রুপ থেকে আরো ৯টি দল পাবে নকআউটের টিকিট।
‘ডি’ গ্রুপ থেকে সবার আগে নকআউটে খেলা নিশ্চিত করেছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। এখন বাকি একটি টিকিটের জন্য লড়াই হবে তিন দলের—অস্ট্রেলিয়া (৩ পয়েন্ট), ডেনমার্ক (১ পয়েন্ট) ও তিউনিশিয়া (১ পয়েন্ট)। আজ গ্রুপের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে ডেনমার্কের, ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়া। দুটি ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
ফরাসিরা ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পথে গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচ জিতেছিল। এরপর কখনই আর পারেনি। এবার দিদিয়ের দেশমের দলের সামনে তৃতীয় জয় তুলে নেয়ার সুযোগ। অন্যদিকে, তিউনিশিয়া বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচও জেতেনি। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে আজ তাদের অবশ্যই হারাতে হবে ফ্রান্সকে। তিউনিশিয়ার কোচ জালেল কাদরি উত্তাপ টেরও পাচ্ছেন।
ফ্রান্স কোচ দেশম বলেন, আমি কিন্তু কাদরির অবস্থানে নেই। জানি, তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কাদরি বলছিলেন, দলকে নকআউট পর্বে নিয়ে যাওয়ার ‘ব্যক্তিগত মিশনে’ তিনি। আগেই ইঙ্গিত দিয়েছে, গ্রুপ পর্ব থেকে তিউনিশিয়া বিদায় নিলে তিনিও বিদায় নেবেন।
ফরাসি ব্লুজরা এরই মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ‘ডি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে মাত্র এক পয়েন্ট প্রয়োজন তাদের। এক ম্যাচ হাতে রেখেই নকআউটের টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় অনেকটা নির্ভার ফরাসিরা। কোচ দেশম তাই আজকের একাদশ নির্বাচনে বিলাসিতাও দেখাতে পারেন, বিশ্রাম দিতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনকে। এ নিয়ে দেশম বলেন, পরিবর্তন তো আসবেই। প্রত্যেকেই খেলতে তৈরি।
প্যারিস সেন্ট জার্মেই সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে দুই ম্যাচেই করেছেন তিন গোল। দলের এই দামি খেলোয়াড় যদি জেদ করে বসেন এই বলে, ‘তিনি খেলবেনই’ কিংবা ‘তার বিশ্রাম প্রয়োজন’ তবে কী করবেন দেশম? উত্তরে বিষয়টি অনেকটা এড়িয়েই গেলেন দেশম। তিনি বলেন, শারীরিকভাবে সে ভালো আছে। কিলিয়ানের খুব বেশি অহম নেই। সে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এবং ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেয়। কিন্তু দলের প্রয়োজনটা সে সবসময়ই মেনে নেয়।
এমবাপ্পে বিশ্রাম নিলে আতোয়াঁ গ্রিজম্যানের ভূমিকায় আসতে পারে পরিবর্তন। নতুন ভূমিকায় তিনি খেলেন রাইট মিডফিল্ডে। কিন্তু এমবাপ্পে যদি না থাকেন, তাহলে গ্রিজম্যানকে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে পারেন দেশম, সেক্ষেত্রে তিনি জুটি বাঁধবেন অলিভিয়ার জিরুর সঙ্গে। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলের মালিক হতে আর মাত্র এক গোল করতে হবে জিরুকে। বর্তমানে ৫১ গোল করে থিয়েরি অঁরির সঙ্গে রেকর্ড ভাগাভাগি করছেন তিনি। ফ্রান্সের হয়ে ৪২ গোল ও ২৬টি অ্যাসিস্ট করা নিঃস্বার্থ গ্রিজম্যানকে প্রশংসায় ভাসালেন দেশম। তিনি বলেন, সে কারো জন্য গোল তৈরি করে দিয়েই আনন্দ পায়। সে সবসময়ই এমন।
দুই দলের মধ্যে তফাতটা আকাশ-পাতাল। ফ্রান্স দুই ম্যাচে করেছে ছয় গোল—এমবাপ্পে তিনটি, জিরু দুটি ও রাবিও একটি গোল করেন। অন্যদিকে, তিউনিশিয়া কোনো গোল করতে পারেনি। ডেনমার্কের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা হেরেছে ১-০ গোলে।
আগে পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলে কখনই গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি তিউনিশিয়া। তাদের দুটি জয়ও এসেছে ৪০ বছরের ব্যবধানে: ১৯৭৮ সালের জয়টি আসে মেক্সিকোর বিপক্ষে, ২০১৮ সালে তিউনিশিয়া হারায় পানামাকে।
ভালো টেকনিক্যাল সামর্থ্য থাকার পরও গোল আদায় করে নেয়ার মতো খেলোয়াড়ের অভাব আফ্রিকান দলটিতে। রাশিয়ায় দুটি গোল করা ওয়াহাব খাজরি ও নাইম স্লিথি না থাকায় তাদের অভাব ফুটে উঠছে।
যদিও ফ্রান্স দলের আক্রমণভাগ নিয়ে কোনো সংকট নেই। করিম বেনজেমা ইনজুরিতে পড়লেও কাকে রেখে কাকে খেলাবেন, তা নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েন দেশম। বাম প্রান্তে এমবাপ্পে ও ডান প্রান্তে ওসমান দেম্বেলের ভয়ংকর গতিতে প্রতিপক্ষ রক্ষণ বিপাকেই পড়েন। আর মার্কসম্যান হিসেবে জিরু ক্রসগুলোর সুবিধা নেন। দেম্বেলেকে তুলে নেয়া হলে বায়ার্ন তারকা কিংসলে কোমানকে খেলাতে পারছেন দেশম।
আজ ‘ডি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে লড়বে ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়া। দুই দলেরই সুযোগ আছে নকআউটে ওঠার, তবে এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সকারুরা ড্র করলেই নকআউটের টিকিট পেতে পারে, যদি আরেক ম্যাচে তিউনিশিয়া হেরে যায়।