নিজে লেখাপড়া জানেন না—সেই আক্ষেপ ছিল মনে। বিষয়টি পীড়াও দিত সবসময়। উচ্চশিক্ষিত মেয়ের প্রেরণায় নতুন করে লেখাপড়ার ইচ্ছা জাগে ৫২ বছর বয়সী আব্দুল মতিন মহসীনের, পেশায় যিনি একজন কৃষক। প্রবাদ
আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সেই প্রবাদকে আরেকবার সত্য প্রমাণ করে বসেছিলেন এবারের এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায়। কৃতিত্বের সঙ্গে সফলও হয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের খরখড়িয়া গ্রামের মৃত জোমশের আলী ভূঁইয়ার ছেলে মহসীন। গত সোমবার প্রকাশিত ফলে জিপিএ ৪ দশমিক ৬১ পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আব্দুল মতিন মহসীন জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম
শ্রেণীতে প্রথম হওয়া
মেয়ের অনুপ্রেরণায় তিনি নতুন করে লেখাপড়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। ভর্তি হন তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বি নাজাতুল্লাহ আয়েশা মেমোরিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সে প্রতিষ্ঠান থেকেই এবার কম্পিউটার ট্রেডে কারিগরি বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার মোট ৩৭ পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে ৩০ জন পাস করেছে। এর মধ্যে মহসিন নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে পাসও করেছেন।
অধ্যক্ষ মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা শুনেই আমরা মহসীনকে উৎসাহিত করেছি। তার মেয়ে অলিভা আক্তার মায়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সেই মেয়ের অনুপ্রেরণাতেই তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি পাস করায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।
আব্দুল মতিন মহসীন বলেন,
সংসারে অভাব থাকায় বাবা-মা তাকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। এদিকে শিক্ষাগতযোগ্যতা কম থাকায় অনেক সময় নিজেকে ছোট মনে হতো। আমি কৃষিকাজ করে মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েকে যখন ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় সেখানে অভিভাবক হিসেবে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ডাকা হয়। তখনই আমি শিক্ষার মূল্যটা বুঝেছি। তখনই ভাবলাম আমি পড়াশোনা করব।
অলিভা আক্তার মায়া বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেয়ার পরই বাবা স্কুলে ভর্তি হতে চান। প্রথমদিকে বিষয়টি বিব্রতকর মনে হয়েছিল। কেননা এ বয়সে লেখাপড়ার রীতি আমাদের সমাজে তেমন নেই, তাই মানুষ হাসাহাসি করবে—প্রথমে এমনটা মনে হলেও পরে বাবাকে উৎসাহিত করেছি। তিনি নিজের ইচ্ছাশক্তি ও প্রচেষ্টায় এসএসসি পাস করেছেন।