বিনিয়োগ ২ হাজার কোটি রুপি

তেইশে ঘুরবে বলিউডের ভাগ্যের চাকা?

চলতি বছরটা বলিউডের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। সহজ কথায় বলা যায়, মিশ্র একটা অভিজ্ঞতা ছিল ভারতের প্রধান এ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য। তবে দক্ষিণী সিনেমার তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে অনেকটাই আলো হারিয়েছে বলিউড। কিন্তু ২০২৩ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন ধারা ও বিগ বাজেটের সিনেমা নিয়ে ফিরছে বলিউড। এ বছরের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে আগামী বছর আবার বলিউডের ম্যাজিক দেখানোর চেষ্টা থাকছে ইন্ডাস্ট্রির নির্মাতা, অভিনেতা ও বিনিয়োগকারীদের। আর সে লক্ষ্যে বলিউডের সিনেমার মোট বিনিয়োগ প্রায় ২ হাজার কোটি রুপি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বলিউড ২০২২ সালে পেয়েছে কিছু ব্যবসাসফল সিনেমা। লাল সিং চাড্ডা, বচ্চন পান্ডে, সম্রাট পৃথ্বীরাজ, শমসেরা বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও ব্যবসার পাশাপাশি দর্শক প্রশংসা পেয়েছে ভুল ভুলাইয়া টু, দ্য কাশ্মীর ফাইলস, ব্রহ্মাস্ত্র ও দৃশ্যম টু। বছরের শেষটা ভেড়িয়া ও সার্কাস সুন্দরভাবে শেষ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামী বছরের জন্য বলিউডের হাতে আছে পাঠান, ভোলা, কিসি কা ভাই কিসি কি জান, টাইগার থ্রি, ডাঙ্কি ও জাওয়ান। আমির খান বিরতি নেয়ার কথা বলেছেন এবং সিনেমার লাইনআপ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ২০২৩-এর মূল চাপ থাকবে শাহরুখ ও সালমানের ওপর। সঙ্গে থাকবেন অজয় দেবগনও। শাহরুখ, সালমান ও অজয় সবার সিনেমাই বিগ বাজেটের।

বলিউডের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নির্মাতা, শিল্পী-বাণিজ্য বিশ্লেষক সবাই শঙ্কিত। সম্ভাবনাময় সিনেমাগুলো ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে, কোনগুলোকে সম্ভাবনাময় বলা হচ্ছে। এখনো বড় স্টারদের সিনেমা সম্ভাবনাময় ধরা হয়। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে স্টার পাওয়ারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। এখন সিনেমা চলে গল্পের জন্য। কেবল তারকাদের কারণেই সিনেমা ব্যবসা করবে, এ কথা মনে করা ঠিক নয়। মুকেশ ভাট এ নিয়ে বলেন, ‘‌একটা সময় ছিল, বড় বড় স্টার থাকলেই সিনেমা হিট হতো। কিন্তু এখন ভালো কনটেন্ট না হলে সেগুলো দর্শক গ্রহণ করবে না।’ বছরের শেষে এসে দৃশ্যম টু সফল হওয়ার পর এর প্রযোজক কুমার মঙ্গত বলেন, ‘‌দর্শক জানে তারা কী চায়। আমি থিয়েটারে দর্শকের সঙ্গে বসে দৃশ্যম টু দেখেছি। তারা তালি দিচ্ছিল ও শিস বাজাচ্ছিল। আমরা যদি দর্শকের চাহিদার ৮০-৯০ ভাগও দিতে পারি, তাহলে তারা সে কনটেন্ট গ্রহণ করবে।’

বর্তমানে বলিউডের নির্মাতারা নানাভাবে চাপের মধ্যে আছেন। প্রথমত তাদের বুঝতে হবে দর্শকের চাহিদা। দ্বিতীয়ত তাদের সক্ষমতা। এরপর মনেযোগ দিতে হবে নির্মাণের দিকে। এখানে নির্মাতা বলতে কেবল পরিচালকের কথা বলা হচ্ছে না। প্রযোজকরাও এর মধ্যে পড়েন। এমনকি বলিউডসহ অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতারাও প্রযোজক-পরিচালক। একজন ব্যক্তি যদি একাধিক দায়িত্ব পালন করেন, তবে তার ওপর চাপ বেশি পড়ে। এছাড়া প্রত্যেক ভাগে দায়িত্বশীলদের ওপর চাপ থাকে, সিনেমার সফলতার জন্য। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বলিউডের নির্মাতারা সিনেমার বক্স অফিস সাফল্যের দিকেই নজর দিচ্ছেন। কনটেন্টের দিকে নজর তাদের তুলনামূলক কম। সেদিকে আরো যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। মুকেশ ভাট ও কুমার মঙ্গতের কথা এ বিষয়েরই প্রতিধ্বনি করে। কিন্তু তার পরও বলিউড তার নির্মাণে বাজেটকেই প্রধান করে তুলছে। 

২০২৩ সালে বেশকিছু বিগ বাজেট সিনেমা রয়েছে। পাঠান (১৭৫ কোটি), ময়দান (১০০ কোটি), সেলফিই (৭০ কোটি), কিসি কা ভাই... (১২০ কোটি), জাওয়ান (১২০ কোটি), ডাঙ্কি ১২৫ কোটি রুপির আনুমানিক বাজেট নিয়ে কাজ করছে। তবে সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা ওম রাউতের ‘‌আদিপুরুষ’। ৬০০ কোটি রুপি এর আনুমানিক বাজেট। ভিএফএক্সনির্ভর এ সিনেমা ছাড়াও সালমানের ‘‌টাইগার থ্রির বাজেট’ ৩০০ কোটি রুপি। এ থেকে একটা বিষয় বোঝা যায়, ফিরে আসতে পয়সা খরচে কসুর করবে না বলিউড। কিন্তু আশা আছে কতটা?

কুমার মঙ্গত বলেন, ‘‌২০২৩ সাল অসাধারণ হবে। ভালো সিনেমা দিয়ে আমরা বছরটা শুরু করছি।’ বাজেটের পাশাপাশি বলিউড এবার ভালো কনটেন্ট নিয়ে আসছে। সমালোচক ও বাণিজ্য বিশ্লেষক কোমল নাহথা বলেন, ‘‌আমি ২০২৩ সালের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি, কেননা কনটেন্টগুলো ভালো। নির্মাতারাও নিশ্চয় এর মধ্যে বুঝতে পেরেছেন ভালো কনটেন্টের গুরুত্ব।’ অতুল মোহন, রাজ বনশলের মতো বিশ্লেষকরা মনে করেন স্টার পাওয়ার এখনো কাজ করে। যে কারণে ২০২৩ সালের অনেক কিছুই নির্ভর করবে শাহরুখ খান ও সালমান খানের ওপর। শাহরুখের ওপর ১ হাজার কোটি ও সালমানের কাছ থেকে অন্তত ৬০০ কোটি রুপির ব্যবসা আশা করছে বলিউড। ভিন্ন তিনটি জনরা নিয়ে আসছেন শাহরুখ। টাইগার থ্রি নিয়েও আত্মবিশ্বাসী সালমান।

কেবল বাজেট নয়, কনটেন্ট নিয়েও নতুন করে ভাবছে বলিউড। আগামী বছরের লাইনআপে আছে কনটেন্টের বৈচিত্র্যও। এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখছেন বিশ্লেষকরাও। তাই আশা করা যায়, তেইশে ঘুরে দাঁড়াবে বলিউড।


টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন