রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথ

বিআইডব্লিউটিএর অব্যবস্থাপনায় বন্ধের পথে স্পিডবোট সেবা

আল ফাতাহ মামুন

নাব্য সংকটে এভাবেই অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে আছে গাজীপুরের উলুখোলা স্পিডবোট ঘাট ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত ১০ সেপ্টেম্বর চালু হয় রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথ। প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে মোট চারটি রুটে স্পিডবোটের যাত্রী পারাপার সেবার উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। স্পিডবোট সেবা কেন্দ্র করে রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে গতি ফেরার পাশাপাশি শহরের অভ্যন্তরীণ যানজট হ্রাসের যে স্বপ্ন দেখছিল নগরবাসী তা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দুই মাস না যেতেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অব্যবস্থাপনায় বন্ধের পথে স্পীডবোট সেবা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বৃত্তাকার নৌপথে বেসরকারি বিনিয়োগ এসেছে, উদ্যোগটি বন্ধ হলে এর দায়ভার বিআইডব্লিউটিএকেই নিতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএর তথ্যমতে, মোট চারটি রুটে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের কথা ছিল। প্রথম পর্যায়ে টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর-কড্ডা এবং টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর উলুখোলা দুই রুটে যাত্রী পারাপার শুরু হলেও বর্তমানে একটি রুটেই যাত্রী পারাপার চালু রয়েছে। প্রথম পর্যায়ের দুটি রুটে স্পিটবোড চলাচল শুরু হলেও আলোর মুখ দেখেনি দ্বিতীয় পর্যায়ের দুটি রুট। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দুটি রুট সফল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে কড্ডা-গাবতলী এবং গাবতলী-সদরঘাটেও স্পিডবোট চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর অসহযোগিতার ফলে ধীরে ধীরে বন্ধ হচ্ছে সর্বশেষ রুটটিও।

প্রথম পর্যায়ে চালু হওয়া টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর-কড্ডা রুটে যাত্রীদের ওঠানামার জন্য পন্টুনই স্থাপন করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। শুধু তা- নয়, বর্তমানে সচল নৌ রুটটির পন্টুনও নাব্য সংকটে পাড়ে আটকে আছে। সম্প্রতি রুটেও যাত্রীসংখ্যা কমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে অল্প দিনের মাথায় রুটটিও বন্ধ হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে তুরাগের নাব্যতা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে চলমান রুটটির পন্টুন পাড়ে ঠেকে যাওয়ায় যাত্রী পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। গত সপ্তাহেও রুটে দৈনিক তিন-চারশ যাত্রী আসা-যাওয়া করতেন। চলতি সপ্তাহে সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০- এসে ঠেকেছে। জানতে চাইলে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি মেরিটাইমের স্বত্বাধিকারী মিঞা ভাই বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক আশা নিয়ে বৃত্তাকার নৌপথে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছি। যেভাবে বিআইডব্লিউটিএ থেকে সহযোগিতা পাব ভেবেছিলাম সেভাবে পাচ্ছি না। সংস্থাটির চেয়ারম্যান সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও অন্য কর্মকর্তারা সাড়া দিচ্ছেন না। অনেকে ফোনও ধরছেন না। কারো কারো অমার্জিত আচরণ খুবই কষ্ট দিচ্ছে।

স্পিডবোট সেবা দেয়ার জন্য আটটি বোট আনলেও চলাচল করছে চারটি। বাকি চারটি অচল পড়ে আছে। মূলত তুরাগের শিল্পবর্জ্যের কারণে স্পিডবোট চলাচল করতে পারছে না বলে মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পুরো নদীতেই ব্যাপক পলিথিন শিল্পবর্জ্যে ঠাসা। এসব বর্জ্য স্পিডবোটের ইঞ্জিনে আটকে বারবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আক্ষেপ করে মালিক বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি ঠিক তবে আমাদের তো আরো কাজও আছে। যদি লাভ উঠে না আসে তাহলে তো বেশি দিন লোকসান দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না।

তবে নদীতে শিল্পবর্জ্য পলিথিনের কথা অস্বীকার করেছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, শুরুর দিকে আমি গিয়েছিলাম। খুব ভালোভাবেই বোট চলেছে। তখন পলিথিন বা বর্জ্যের সমস্যা দেখিনি। সম্প্রতি শুনেছি প্রচুর কচুরিপানা সমস্যা করছে। কচুরিপানা পরিষ্কার করা তো আর আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না। আমরা নাব্যতার সমস্যা নিয়ে কাজ করি।

পন্টুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একসঙ্গে তো সব ঘাটে পন্টুন দিতে পারব না। ক্রমে সব ঘাটেই পন্টুনের ব্যবস্থা করা হবে।

তুরাগে বৃত্তাকার নৌপথে স্পিডবোট চলাচল ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব নৌপথ গবেষক আমিনুর রসুল বাবুল বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আগেই বলেছি, সমীক্ষা ছাড়াই মন চাইল আর স্পিডবোট নামিয়ে ফেললাম, বিআইডব্লিউটিএর ধরনের উদ্যোগ সফল হবে না। বাস্তবেও তা- হচ্ছে। প্রতিটি কাজের আগেই নিয়ে সমীক্ষা করা দরকার। বিআইডব্লিউটিএ তা করেনি। শুধু তা- নয়, গত ১৪ বছরে বারবার বলার পরও বৃত্তাকার নৌপথ চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ। চলমান উদ্যোগের দায়ভার পুরোটাই বিআইডব্লিউটিএকে নিতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তবে সময়ে নদীর পানি কমে যায়। কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো মোকাবেলা করতেই হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন