উদ্যোগের অভাবে যুক্তরাজ্যে চিপ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত

বণিক বার্তা ডেস্ক

চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে এখন বিশ্বের অনেক অঞ্চলই উদ্যোগ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ আলাদা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তহবিলও বরাদ্দ করছে। তবে এদিক থেকে যুক্তরাজ্য এখনো অনেক পিছিয়ে। দেশটির সংসদ সদস্যরা জানান, সরকারের সহযোগিতার অভাবে দ্রুতবর্ধনশীল সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে দেশটি অন্যদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন খাতে ক্রমাগত বিনিয়োগ করে যাচ্ছে তখন যুক্তরাজ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সম্প্রতি দেশটির সংসদ সদস্যদের বিজনেস কমিটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি সেমিকন্ডাক্টর কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সরবরাহ চেইনে যুক্তরাজ্যকে অন্যতম দেশে পরিণত করতে মিত্রদের সঙ্গে চুক্তি করার কথাও বলা হয়েছে।

২০২১ সালে উৎপাদনকারীরা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থেকে শুরু করে গাড়ি আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার তৈরিতে এক ট্রিলিয়নের বেশি চিপ ব্যবহার করেছে। দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বে উন্নত সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের চাহিদা ক্রমাগত বাড়বে। কভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকে চিপের যে সংকট শুরু হয়েছে সেটি অর্থনৈতিক দুর্দশা তৈরিতেও সক্ষম।

সংসদ সদস্যরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প অনেকাংশেই বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। সরকার যদি কোনো পদক্ষেপই না নেয় তাহলে ভবিষ্যতেও অবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। তাই নতুন ফ্যাব (সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কারখানা) তৈরিতে সরকারের সমর্থন জানানো উচিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার বর্তমানে যে সহায়তা দিচ্ছে সেটি আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা কিংবা মন্ত্রীদের কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত নয়। যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছিল, ২০২২ সালের শরতে তারা একটি সেমিকন্ডাক্টর কৌশল প্রকাশ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু বাস্তবায়িত হয়নি।

কমিটির প্রধান যুক্তরাজ্যের শ্রমমন্ত্রী ড্যারেন জোনস বলেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার যুত্তরাজ্যকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশ যখন তাদের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিনিয়োগ করছে তখন যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা নির্ধারিত সময়ে কৌশলই প্রকাশ করতে পারছেন না।

চলতি মাসে দেশটির অন্যতম সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যক্রম বিক্রি করে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছে। এর পর পরই সংসদ সদস্যরা বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু করেন। চীনের কনগ্লোমারেট প্রতিষ্ঠান উইংটেকের মালিকানাধীন ডাচ কোম্পানি নেক্সপেরিয়া যুক্তরাজ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে নির্দেশনার বিপরীতে সর্বশেষ আপিলের চেষ্টা করছে।

সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টিকে অনেক পর্যবেক্ষক ইতিবাচক মনে করছেণ। তাদের যুক্তি, অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে যুক্তরাজ্যে চীনের প্রবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সরকারি নির্দেশের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন ম্যানেজমেন্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে ক্ষোভ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্যদের অবস্থানের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে নেক্সপেরিয়া।

প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে চাই। পাশাপাশি নিউপোর্টে আমাদের যে ৬০০ কর্মী রয়েছেন তাদেরও আমরা সহযোগিতা করবে। এদের অনেকেই কারখানায় বছরের পর বছর কাজ করেছেন।

বর্তমানে সর্বাধুনিক চিপ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি। স্যামসাং তাইওয়ানের টিএসএমসি চিপ সরবরাহের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন আধুনিক উন্নত চিপ তৈরিতে নিজস্ব কারখানা স্থাপনের কথা ভাবছে। এদিক থেকে যুক্তরাজ্য একেবারেই শিশু। তাদের উন্নত চিপ তৈরির সক্ষমতাও নেই। তাই প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যকে উৎপাদনে মনোনিবেশের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার জন্য চুক্তি সম্পাদনের কথা জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প পরিচালনায় সম্মতি দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এর মাধ্যমে ইইউর অন্তর্গত ২৭টি দেশ সেমিকন্ডাক্টরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাবে। এর আগে ইইউর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন