বিক্ষোভের জেরে চীনে আবার মন্দার শঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

সোমবার প্রায় জনমানবশূন্য বেইজিংয়ের ব্যস্ততম সেন্ট্রাল বিজনেস ডিসট্রিক্ট ছবি: এপি

মহামারীর মন্দা কাটিয়ে ওঠার সুযোগই পাচ্ছে না চীনের অর্থনীতি। যে মুহূর্তেই মনে করা হয় যে এই বুঝি পরিস্থিতি সামলে উঠছে দেশটি, ঠিক সে সময়ই নতুন কিছু ঘটছে। হয় সেটা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া, অথবা বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি শ্লথ হয়েছে। এর পেছনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কঠোর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের কথাও বলা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, অক্টোবর থেকেই চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীরে চলছিল। নভেম্বরে এসে সংকোচন আরো বেড়েছে। অন্যদিকে দেশটির বড় বড় শহরে আবারো বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। গুয়াংঝৌ, বেইজিং ঝেংঝৌয়ের মতো বড় এবং গুরুত্ব্বপূর্ণ শহরে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। সীমিত করে দেয়া হচ্ছে নাগরিকদের চলাচল। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগের মতোই কঠোর হতে শুরু করেছে চীন।

গোল্ডম্যান স্যাকস, ম্যাকওয়ার গ্রুপ এবং হ্যাং সেং ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কভিড-১৯-এর সংক্রমণ কমাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সরকারকে। ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ কমিয়েও আনা হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি আবারো খারাপ হয়ে যাওয়ায় নতুন বিধিনিষেধ আরোপে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে দেশের অনেক মানুষ। বেইজিং সাংহাইয়ের মতো শহরে সপ্তাহান্তে রাস্তায় নেমেছিলেন বিক্ষুব্ধ নগরবাসী। অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতি আরো বাধার মুখে পড়বে।

বিশ্লেষকরা আগে থেকেই অর্থনীতির ধীরগতির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, প্রয়োজনীয় প্রণোদনাও দিতে শুরু করেছে। চলতি বছর মাত্র দশমিক শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের মহামারীর বছর বাদ দিলে প্রবৃদ্ধি ১০৭০ সালের পর সর্বনিম্ন।

দ্য পিপলস ব্যাংক অব চায়না জানিয়েছে, ব্যাংকের জন্য রিজার্ভের প্রয়োজনীয় অনুপাত ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে অর্থনীতিতে ৫০ হাজার কোটি ইউয়ান প্রবেশ করানো হবে। ব্যাংকগুলো যেন কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোকে আরো বেশি ঋণ দিতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে। পাশাপাশি প্রপার্টি মার্কেটকে শক্তিশালী করতেও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ছোট ব্যবসাগুলোর ওপর। টানা দ্বিতীয় মাসের মতো পরিষেবা খাতে সংকোচন দেখা দিয়েছে, যার ফলে মে মাসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে খাতটিতে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের তথ্য বলছে, যেসব ব্যবসা মূলত চীনভিত্তিক সেগুলো বেশি খারাপ সময় পার হচ্ছে। সে তুলনায় ভালো আছে রফতানিভিত্তিক ব্যবসাগুলো। যদিও ভালো থাকা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।

ব্যাংকটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাঁচ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি জরিপ চালায়। সেখানে দেখা যায়, হোটেল ক্যাটারিং খাতের ব্যবসাগুলো নভেম্বরে পতনের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও মন্দায়। শীর্ষ চার শহরে বাড়ি বিক্রির পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ। চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহেই অবস্থা দেখা গিয়েছে। শুধু তা- নয়, গাড়ি বিক্রিও পড়েছে মন্দার মুখে। অথচ সরকারের নানা প্রণোদনার কারণে খাতটি হয়ে উঠেছিল চীনের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া নানা বিধিনিষেধের কারণে স্থানীয়দের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয়েছে। যার কারণে শহরের ভেতরে বা দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে পারছেন না চীনারা। স্বাভাবিকভাবেই বেইজিং, চংকিং গুয়াংঝৌ শহরে সাবওয়ে বা পাতাল রেল ব্যবহারের পরিমাণও কমে গিয়েছে। রেস্তোরাঁ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অফিস বন্ধ থাকার কারণে বড় ব্যস্ত শহরগুলোয় কমেছে যানজট।

সংক্রমণের কারণে শিল্প উৎপাদন কমেছে। চীনের আইফোন কারখানায় সম্প্রতি বিক্ষোভের ঘটনা এটা প্রমাণ করে যে পরিস্থিতিতেও উৎপাদন চালিয়ে যেতে চায় কারখানাগুলো। সেজন্য আইফোনের মতো অনেক কারখানায় কর্মীদের রেখে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ইস্পাত কারখানাগুলোয় উৎপাদন কমেছে। বড় বড় কারখানাও ৩০ শতাংশ বা তার বেশি হারে উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। শুধু যে দেশের ভেতরেই ব্যবসার মন্দা তা নয়। বহির্বিশ্বে রফতানি বাণিজ্যেও মন্দা দেখা দিয়েছে। আমদানি-রফতানি দুই খাতেই চলতি মাসে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন