বিশ্বের শীর্ষ দুই গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির একটি হলেও চীনে তরুণ গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে ফক্সওয়াগন। বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি বাজারে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তৈরি গ্যাজেটনির্ভর বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
চীনের বাজার হিস্যা হারাচ্ছে জার্মান গাড়ি নির্মাতা জায়ান্টটি। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিক্রি কিছুটা বাড়লেও চলতি বছরে ফক্সওয়াগনের বাজার হিস্যা ১৬ শতাংশ থাকতে পারে। ২০১৯ সালের তুলনায় ফক্সওয়াগনের গাড়ি বিক্রি প্রায় এক-পঞ্চমাংশ কমেছে। ভোক্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান জাটো ডিনামিকসের উপাত্তে দেখা গেছে, ওই সময়ে জার্মান গাড়ি নির্মাতা জায়ান্টটির হিস্যা ছিল ২০ শতাংশ।
বিদেশী গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি হিসেবে চীনে এখনো সর্বোচ্চ বাজার হিস্যা ফক্সওয়াগনের। তাদের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তালিকায় রয়েছে ভিডব্লিউ, স্কোডা, পোরশে, আউডি ও বেন্টলি। বাজার হিস্যা হ্রাস পাওয়াই কেবল ফক্সওয়াগন নতুন সিইও অলিভার ব্লিউমের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নয়, বরং তার সামনে আরো কিছু সংকট এসে জমা হয়েছে। গাড়ি বাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি ব্যয়, অব্যাহত সরবরাহ চেইন সংকট ও ইন-হাউজ সফটওয়্যার সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে চীনের বাজার ছিল ফক্সওয়াগনের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাঁস। কিন্তু সাম্প্রতিক বাজার হিস্যা সংকোচন উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছর বিশ্বে যতগুলো নতুন গাড়ি বিক্রি হয়েছে তার ৩৭ শতাংশ চীনের বাজারে। স্পষ্টত এ বাজারে দৃষ্টি থাকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গাড়ি নির্মাতা ব্র্যান্ডগুলোর।
চীনে ৪০টির মতো কারখানা রয়েছে ফক্সওয়াগনের যেগুলো জয়েন্ট ভেঞ্চার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। চীন নির্ভরতার কারণে কোম্পানিটির সাবেক সিইও হার্বার্ট ডিয়েজ ফক্সওয়াগনকে ‘চীনা কোম্পানি’ বলতো। রোডিয়াম গ্রুপ নামে এক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছর চীনে সর্ববৃহৎ বিদেশী বিনিয়োগকারী কোম্পানি ছিল ফক্সওয়াগন।
রোডিয়ামের ইউরোপ-চীন বিশেষজ্ঞ নোয়া বারকিন বলেন, ফক্সওয়াগনের জন্য চীন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আবার কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকিও বটে।
বার্নস্টেইন রিসার্চের গবেষণায় বলা হয়, চীনে ফক্সওয়াগনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টেসলা। চীনে ইভি ভোক্তাদের কাছে সবচেয়ে আধুনিক ও আকর্ষণীয় গাড়ি উপহার দিচ্ছে ইলোন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি।
ইভি ভলিউমস ডটকম নামে একটি বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বরাতে জানা গেছে, চীনের সার্বিক গাড়িবাজারে টেসলার হিস্যা মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ হলেও ইভি সেগমেন্টে নেতৃত্বে রয়েছে তারা। ২০২১ সালে চীনে বিক্রি হওয়া নতুন ইভির ১১ দশমিক ৬ শতাংশই ছিল টেসলার। এ সময়ে ফক্সওয়াগনের ইভি হিস্যা যেখানে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে চীনে ফক্সওয়াগনের ইভি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ ইউনিট। যেখানে স্থানীয় ইভি নির্মাতা কোম্পানি বিওয়াইডির ইভি বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৬৮ ইউনিট। গিলি ও ডংফেং মোটরের মতো চীনা ব্র্যান্ডের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে ফক্সওয়াগন।