সারা দেশে নৌ-ধর্মঘটে বিঘ্নিত পণ্য পরিবহন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ। বহির্নোঙরেও অচলাবস্থা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে যত পণ্য পরিবহন হয়, তার ৪৪ দশমিক শতাংশই হয় নৌপথে। ফলে শনিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া লাগাতার নৌ-ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের পণ্য পরিবহন খাতে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নদীপথে সারা দেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য নৌপথও রয়েছে একই অবস্থায়। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যশস্য, রাসায়নিক সার, কয়লাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘটের প্রভাবে দুর্ভোগে পড়ছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরাও। সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদানসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার রাত ১২টায় লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন নৌ-পরিবহন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশে আমদানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের বড় অংশই আসে জাহাজে। এর মধ্যে অন্যতম রাসায়নিক সার, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল গম। এর বাইরে কয়লা, ফ্লাই অ্যাশ, চিনি, ভোজ্যতেল, লবণ, ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত স্ক্র্যাপ, সিরামিক তৈরির কাঁচামাল, জিপসাম, পাথরের মতো বিভিন্ন বাল্ক কমোডিটি পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কনটেইনারও নৌপথে পরিবহন করা হয়। একইভাবে বালি-পাথরের মতো নির্মাণ খাতের বিভিন্ন উপকরণ পরিবহনও নৌপথের ওপর নির্ভরশীল। ধর্মঘটের কারণে এসব পণ্য পরিবহন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) সাগরে রেখে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়। এরপর এসব লাইটার জাহাজে করে পরে পণ্য দেশের নানা ঘাটে নিয়ে খালাস করা হয়। ধর্মঘটের কারণে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে সারা দেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর হচ্ছে না। আবার চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে না। অন্য নৌপথগুলোতেও বিরাজ করছে অচলাবস্থা।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা না হলে ভোগ্যপণ্য, খাদ্যশস্য, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ সংকট তৈরির শঙ্কা করছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে নৌপথই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। নৌপথে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হলে সরাসরি তার প্রভাব পড়তে শুরু করবে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। একইভাবে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, নির্মাণ উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নৌপথে পরিবহন করা হয়। সঠিক সময়ে কাঁচামাল সরবরাহ না হলে শিল্পোৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করবে। এমন প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত সম্ভব নৌ-পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

যদিও ধর্মঘট আহ্বান করা সংগঠন নৌ-পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল ইসলাম গতকাল রাতে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার বা স্থগিত করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কারো সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রস্তাব দেয়া হলেও সেগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে আসেনি। তাই আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছি। এতে দেশের পণ্য যাত্রী পরিবহনে কিছুটা সমস্যা হলেও নৌ-পরিবহন শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণের জন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাব।

এর আগে ২০১৬ সালে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। সে হিসেবে গত বছরের জুনে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর কথা ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন