সেমিনারে অধ্যাপক তিতুমীর

রাষ্ট্র সৃষ্টি থেকেই দমনমূলক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাবির মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের আটটি বই নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে লেখকসহ অতিথিরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাষ্ট্র সৃষ্টি থেকেই দমনমূলক। এটাকে চ্যালেঞ্জ করতে হলে অধিকাংশ সর্বজনের কাছে ক্ষমতা থাকতে হবে। তাহলে রাষ্ট্র কখনো স্বৈরতান্ত্রিক হতে পারবে না। নিজের আট বই নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন মো. জোবায়ের হোসেন এবং সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তৈয়ুবুর রহমান।

অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সংকট দুষ্ট চক্রের মতো চলতে থাকে বলেও মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, রাষ্ট্র কেন্দ্রীকরণ হলে কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসে না। ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমাদের ইতিবাচক নির্দেশকগুলো ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক নির্দেশকগুলো ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। অবস্থা নির্ভর করছে রাজনৈতিক সেটেলমেন্টের ওপর। অধ্যাপক তিতুমীর আরো বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৌশল বহিঃস্থ কোনো ধাক্কা নিতে পারে কিনা, উন্নয়ন পুঁজির মাধ্যমে হয়েছে কিনা, বর্তমান সংকটের কারণগুলো কীএসব বিষয় আমার লেখা বইগুলোয় আলোচনা করা হয়েছে।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের লেখা আটটি বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা পুনর্মূল্যায়ন করেছেন, যারা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা হলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জুয়েল আহমেদ সরকার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বায়োজিদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবিএম উমর ফারুক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষক শশীস সামী কামাল, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেয়ামত আলী এনায়েত, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জোবায়ের হোসেন।

নিজের বইগুলো সম্পর্কে অধ্যাপক তিতুমীর বলেন, আমার বইগুলোয় মূলত চারটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, বিনিয়োগ থেকে প্রবৃদ্ধি না ঘটলে অর্থনীতি টেকসই হয় না। আমাদের অর্থনীতিটা ভোগ-ব্যয়ের মাধ্যমে হয়েছে। ফলে অর্থনীতিটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ায়নি। এতে বহিঃস্থ ধাক্কা সহ্য করার ক্ষমতা কম। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যখন অধিকাংশ মানুষের থাকে না তখন গোষ্ঠীতন্ত্র গেড়ে বসে। সে জন্যই ব্যাংক অন্যান্য ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে, অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানহীনতা রাজনৈতিক এককেন্দ্রীকরণ। ফলে সে প্রতিষ্ঠান আর নাগরিক সেবা দিতে পারে না। তৃতীয়ত, প্রান্তিক মানুষ প্রবৃদ্ধি তৈরি করেছে কিন্তু পুঁজির রিটার্ন বেশি এবং শ্রমের রিটার্ন কম হওয়ায় বৈষম্যটা তৈরি হয়েছে। আর চতুর্থত, বৈষম্য প্রান্তিক মানুষের ওপর বড় রকমের ধাক্কা দিচ্ছে। দারিদ্র্য কমার হার কমে গিয়েছে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। আর এগুলো উন্নয়নশীল দেশের প্রবণতা। তবে যেখানে কেন্দ্রীভবন বেশি হচ্ছে, যেমন বাংলাদেশ, শ্রীলংকা পাকিস্তানে ঝুঁকির মাত্রাটা বেশি।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের আটটি বইয়ের মধ্যে ফিসক্যাল অ্যান্ড মনিটারি পলিসি ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: স্টেট, সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সমাজের পলিসিগুলো কীভাবে নেয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়েছে রাষ্ট্র নাগরিকদের সম্পর্কে। দেশে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের প্রাধান্য দিয়ে রাজস্ব আর্থিক পরিকল্পনা নেয়া হয়। সাম্রাজ্যবাদের সময় আমাদের দেশ থেকে সম্পদ উত্তোলন করে নিয়ে যেত। সম্পদ উত্তোলনের জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী বা এলিট ক্লাস তৈরি করা হয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদ শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো আমাদের দেশে সেই শ্রেণীটা আছে। কারো কাছে তাদের জবাবদিহিতা নেই।

সুন্দরবন অ্যান্ড ইটস ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস: ট্র্যাডিশনাল নলেজ, কাস্টমারি সাসটেইনেবল ইউজ অ্যান্ড কমিউনিটি বেজড ইননোভেশন বইয়ে স্থানীয় জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান, সম্পদ, জীববৈচিত্র্য নষ্টের কারণ প্রতিকারসহ আরো কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়। লেখক দেখিয়েছেন সুন্দরবনকে রক্ষার মাধ্যমে আমরা কীভাবে কতটুকু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। একই সঙ্গে নানা পদক্ষেপের কারণে বনের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে।

হোয়ায় এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি ফলস: দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব এগ্রারিয়ান ট্রানজিশন ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ বইয়ে লেখক বিশ্লেষণ করেছেন আমাদের কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি। এখানকার ভূমি প্রক্রিয়া, রাজনীতি, অকৃষি খাতের প্রভাবসহ আরো কিছু বিষয় কৃষি উৎপাদন কমার জন্য দায়ী বলে তিনি তুলে ধরেছেন। নাম্বার অ্যান্ড নেরেটিভস অব বাংলাদেশেস ইকোনমিকস ডেভেলপমেন্ট বইয়ে ওঠে আসে কীভাবে আমাদের এখানকার উন্নয়নের ধারণাগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে। ক্লায়েন্ট বা পোষকের হাতে ক্ষমতা সম্পদ একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া লেখক বিশ্লেষণ করেছেন যুদ্ধোত্তর থেকে করোনাকাল: বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক অর্থনীতি বইতে। লেখক তার স্টেট বিল্ডিং অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসিস ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব ডেভেলপমেন্ট, ন্যাচারাল রিসোর্স ডিগ্রেডেশন অব হিউম্যান-নেচার ওয়েলবিং: কেইসেস অব বায়োডাইভারসিটি রিসোর্স, ওয়াটার, অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ, কভিড-নাইনটিন অ্যান্ড বাংলাদেশ: রেসপন্স, রাইটস অ্যান্ড রিজিলিয়েন্স বইগুলোতে বাংলাদেশের সমাজ, সম্পদ, করোনার প্রভাবসহ অন্যান্য বিষয় বিশ্লেষণ করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন