‘‌চরিত্রের হাইপোথিটিক্যাল বিষয় নিয়ে আমি ভাবি’

মোস্তফা মন্ওয়ার

‘‌গেরিলা’য় অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমায় অভিষেক হয়েছিল অভিনেতা মোস্তফা মন্ওয়ারের। ২০১৬ সালে ‘‌লাইফ ফ্রম ঢাকা’-র প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের নজর কাড়েন, আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা পান তিনি। এরপর একের পর এক অভিনয় করেছেন তিনি। সম্প্রতি নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত ‘‌ফরেনারস অনলি’তে অভিনয় করে প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। লাইট ক্যামেরার দুনিয়া ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন মোস্তফা মন্ওয়ার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিহা জামান শশী

যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে এত সাবলীলভাবে মিশে যান কীভাবে?

চরিত্রটায় অভিনয় করার আগে আমি চিত্রনাট্য কয়েক দফা পড়ি। যে চরিত্রে আমি অভিনয় করব তা নিয়ে অনেক ভাবা হয়। চিত্রনাট্যে আমার চরিত্রটা সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া আছে এর বাইরেও সে কী করে, কোথা থেকে বেড়ে উঠেছে, তার জীবনের গুরুত্ব কী, চরিত্রের এসব হাইপোথিটিক্যাল বিষয় নিয়ে আমি ভাবি। মূলত আমি চরিত্রের যাপিত জীবনটা বুঝতে চেষ্টা করি এবং তার মতো করেই ভাবি। যাতে আমি চরিত্রটার সঙ্গে ভালো মানিয়ে নিতে পারি। শুটিংয়ের সময় যেন আমার ওই চরিত্রটার ভেতরে ঢুকে যাওয়া সহজ হয়। মূলত যেকোনো সময় আমি যেন চরিত্রের ভেতর ঢুকতে পারি, তার জন্যই শুটিংয়ের আগে এত ভাবি।

গল্প নির্বাচন প্রক্রিয়াটা কেমন আপনার?

গল্পের প্রতি আমার নিজের আলাদা আগ্রহ রয়েছে। আমি নিজেও গল্প লিখি। প্রচুর গল্প পড়া বা দেখে থাকার কারণে কাজ নির্বাচন করা আমার জন্য সহজ হয়। আমি গল্প নির্বাচন করার আগে দেখি আমাকে এটা টানে কিনা। গল্পের অন্যান্য সময়ের কী হয়েছে সেটা নিয়ে আমার ভেতরে তারণা জাগে কিনা সেটা আমি খুব লক্ষ করি। আমি যে চরিত্রটা করব সেটা এক্সাইটমেন্ট হয় কিনা এসব মিলিয়ে আমি অভিনয় করি। আমার অফিস আছে তাই সব মিলিয়ে কাজ কম করা হয়। তাই আমি এমন গল্পেই অভিনয় করার চেষ্টা করি যেটা ইম্প্যাক্টফুল হয়।

আপনি একটি অ্যাড ফার্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন। অভিনয় আর চাকরি একসঙ্গে করতে হিমশিম খেতে হয় কি?

আমার অফিসের বছরে ছুটি ২২ দিন। এই ২২ দিন আমি কাজ করতে পারি। এর বাইরে আমি কোনো ছুটি নিই না। শুক্র-শনিবারের দিনগুলোয় আমি কাজ করি।

ইরেশ যাকের আর আপনি কি তবে ফরেনারস অনলির কাজ ছুটিতেই সেরেছেন?

হ্যাঁ, তবে এই ফরেনারস অনলির জন্য অফিস থেকে একদিন ছুটি নিতে হয়েছে। এটা আবার ওই ২২ দিনের ভেতরেই ছিল। এ বছরে ফরেনারস অনলি ছাড়া আর কোনো কাজ করিনি, তাই অনেক ছুটি বেঁচে আছে এ বছরে। ডিসেম্বরে হয়তো আরেকটা কাজ করতে পারি।

নুহাশ হুমায়ূনের ফরেনারস অনলি নিয়ে দর্শকের মনোভাব কী? 

এটা ভিন্ন একটি মাধ্যমে রিলিজ পেয়েছে। ইউটিউবের মতো ওপেন মাধ্যমে মুক্তি না পাওয়ায় অনেকেই এটা দেখতে পারেননি। তবে যারা দেখেছেন তারা ভালো বলছেন। এটা একটা ভিন্ন রকমের গল্প। তাই একেকজন একেকভাবে দেখছেন। তবে সব মিলিয়ে ইতিবাচক কথাই শুনছি।

এখন কোনো প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত আছেন?

আমার তিনটি সিনেমায় কাজ করার কথা রয়েছে। এ তিনটি সিনেমাই স্বাধীন, যার দুটি দেশের বাইরে থেকে ফ্যান্ডিং পেয়েছে। এর মধ্য একটা হচ্ছে স্যান সিটি, যেটা মাহাদি হাসান পরিচালনা করেছেন। এরপর সাফা নামের একটা সিনেমা হবে, পরে এটার নাম মায়া রাখা হয়েছে। এছাড়া নূর ইমরান মিঠুর একটি সিনেমায় কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী মাস থেকে হয়তো সিনেমাগুলোর কাজ শুরু হবে আশা করি। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এ সিনেমাগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া আর কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম, এগুলো কবে মুক্তি পাবে এখনো ঠিক নেই। এর মধ্যে আছে পায়ের তলায় মাটি নেই, মানুষের বাগান। এছাড়া একটা শর্টফিল্মে কাজ করেছিলাম। দেখা যাক।

২০১৪ সালে আপনার প্রথম বই প্রকাশ হয়েছে। লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?

মূলত ২০১৪ সালের দিকে ভাবছিলাম লেখালেখি করব, স্ক্রিপ্ট লিখব, কারণ তখন অভিনয় কম করছিলাম। ২০১৬ সালের পর লাইফ ফ্রম ঢাকা দেখার পর অভিনয়ের দিকে বেশি মনোযোগ চলে আসছে। সে কারণে লেখালেখির দিকে নজর কম দেয়া হয়েছে। এখন মনে হয় যে অভিনয়ের দিকে আরেকটু বেশি সময় দেয়া দরকার আর লেখালেখিটা কিছুদিন পরে আবার শুরু করলেও হবে। আমার পরিকল্পনা আছে কিছু সময় পর আমি আবারো লেখালেখি করব।

‘‌পায়ের তলায় মাটি নেই’ সিনেমাটি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। অন্যতম প্রধান চরিত্রে আপনি অভিনয় করেছেন। এ সিনেমায় সঙ্গে আপনার যাত্রাটা নিয়ে শুনতে চাই।

এ সিনেমার গল্প যখন শুনি, তখন আমার অনেক ভালো লেগেছিল। সাইফুল চরিত্রটি আমি করেছি, যে ঢাকা শহরে মাইক্রো চালায়। বিভিন্ন যাত্রী আসে। এসব যাত্রী আলাদা গল্প আছে। সাইফুলের একজন স্ত্রী আছে গ্রামে। সে যত গ্রামে ফিরে যেতে চায়, শহরে আরো আটকে পড়ে। একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে তার জীবনে। শহরেও এক পর্যায়ে সে বিয়ে করে ফেলে। ঢাকা শহর, এখানকার বউ, চাকরি সব মিলিয়ে শহরে আটকে যেতে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন