কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিলের পর উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহনের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আগামী ২০ বছরে এয়ার কার্গো ট্রাফিক দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং।
দ্য ন্যাশনালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ২০ বছরে বিশ্বজুড়ে কার্গো উড়োজাহাজের বহর ৫৭ শতাংশ বাড়বে। সব মিলিয়ে পণ্য পরিবহনকারী উড়োজাহাজের সংখ্যা ৩ হাজার ৬০০-তে দাঁড়াবে। বোয়িং জানিয়েছে, ২০৪১ সাল পর্যন্ত নতুন ও প্রতিস্থাপনের কারণে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কার্গো উড়োজাহাজের প্রয়োজন হবে।
উড়োজাহাজগুলোর এক-তৃতীয়াংশ হবে নতুন জেট। বাকিগুলো আসবে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে কার্গোতে রূপান্তর থেকে। এগুলো এয়ারলাইনসকে বিদ্যমান ও উদীয়মান বাজারে সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
বোয়িংয়ের বাণিজ্যিক বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যারেন হালস্ট বলেন, মহামারীর মধ্যে অন্যান্য খাতে মন্দা তৈরি হলেও এয়ার কার্গো ঐতিহাসিক চাহিদা উপভোগ করেছে। এখন খাতটির চাহিদা আরো স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসছে। এক্সপ্রেস নেটওয়ার্কের বৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এবং নতুন বাজারের মতো কাঠামোগত কারণগুলো পণ্যবাহী উড়োজাহাজের চাহিদা ত্বরান্বিত করছে।
কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ চলাচল স্থবির হয়ে গেলেও এয়ার কার্গো উজ্জ্বল স্থানে রয়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতি অনেক প্রতিষ্ঠানকে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে পণ্যবাহী জেটে রূপান্তর এবং নতুন কার্গো উড়োজাহাজে বিনিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছিল। তবে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি এ খাতের চাহিদা কমিয়ে দিচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) সর্বশেষ মাসিক আপডেটে জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে বৈশ্বিক এয়ার কার্গোর চাহিদা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। যদিও সেটা প্রাক-কভিড স্তরের কাছাকাছি রয়ে গিয়েছে। এ সময়ে এয়ার কার্গোর সক্ষমতা এক বছর আগের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে সক্ষমতা এখনো প্রাক-কভিড ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে কার্গো ভাড়া স্থিতিশীল হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে চাহিদার ভিত্তিতে কিছুটা কমতেও পারে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইমার্ক গ্রুপের প্রাক্কলন অনুসারে, ২০২৭ সালে বৈশ্বিক এয়ার কার্গো ভাড়ার বাজার প্রায় ৩৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। ২০২১ সালে বাজারটির আকার ছিল ২৭ হাজার কোটি ডলার। এরপর বাজারটি বার্ষিক ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়বে।
বোয়িংয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল নতুন ও রূপান্তরিত জেটসহ সব পণ্যবাহী উড়োজাহাজের প্রায় ৪০ শতাংশের সরবরাহ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বোয়িং জানিয়েছে, কার্গো এয়ারলাইনসগুলোকে নিজেদের বহর বৈশ্বিক মান ও টেকসই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরো পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। যদিও দুই বছর মহামারীর বিপর্যস্ত প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপগুলোকে পিছিয়ে দিয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।