কুমিল্লার গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল

দুর্বার আন্দোলনে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কুমিল্লা

কুমিল্লার টাউন হল মাঠে গতকাল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে আর ২০১৪ সালের বিনা ভোট ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোটের মতো নির্বাচন হবে না। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। কুমিল্লা টাউন হল মাঠে গতকাল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নস্যাৎ করতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারসহ হয়রানি করছে। অথচ আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের অধিকার গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করে আসছি। ঢাকার সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দেয়া হবে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন। অথচ নিজেরা আগুন দিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। আগের মতোই এখনো রাজশাহীতে ১১ দিনে গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে ১০৪টি।

বর্তমান বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ আজ ন্যায়বিচার পায় না। আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে রাখা হয়েছে গৃহবন্দি করে। আমাদের ওপর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটা দানবীয় সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। সরকারের কারণে মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তবে বাংলার মানুষ গান গাইতে শিখেছেআগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না... সরকার রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। এখন বাংলার মানুষ তাদের বিদায় ঘণ্টা দেখতে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের জামানতও থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, রিজার্ভ নাকি তিনি চিবিয়ে খাননি, আমরা বলিরিজার্ভ তিনি গিলে খেয়ে ফেলেছেন। আগামী তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করার মতো টাকা নেই। দেশে ডলার সংকট। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করে দিয়েছে তারা।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা মানুষকে হত্যা গুম করছে। সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, কুমিল্লার লাকসামের সাইফুল ইসলাম হিরু হুমায়ুনের পরিবার আজও জানে না, কী ঘটেছে নিখোঁজ স্বজনদের ভাগ্যে। বাঞ্ছারামপুরের নয়নকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ। তার স্ত্রী স্বজনরা এখনো আহাজারি করে। তবে মানুষ আজ জেগে উঠেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজ গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য . খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিনা ভোটের সরকার গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লাকসামের দুজনসহ আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। হত্যা করেছে এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। মধ্যবিত্ত গরিব হচ্ছে, দারিদ্র্যসীমা ২০ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণের মাধ্যমে সরকার ফরমায়েশি রায়ে খালেদা জিয়া তারেক রহমানকে সাজা দিতে বাধ্য করেছে। আমেরিকা ব্যাখ্যা দিয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ নয়, এটা হাইব্রিড দেশ।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কুমিল্লার নামে বিভাগ না হলে জনগণ মেনে নেবে না। সরকার কুমিল্লাকে পছন্দ করে না। এখন যে নামেই হোক না কেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ করা হবে। ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলার জনগণ সরকারের অন্যায় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি সমাবেশের মাধ্যমে তা দেখিয়ে দিয়েছে। সরকার নৈশভোটের সরকার, দৈত্যকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। স্থায়ী কমিটির নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের মানুষের উপার্জন না বাড়লেও প্রতিদিন পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে। প্রতিবাদ করলে সরকার গুলি করে মানুষ মারে। খালেদা জিয়া তারেক রহমান কোনো অপরাধ করেননি। সরকার তাদের ভয় পায় বলে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়েছে, আমরা রায় মানি না।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, রুমিন ফারহানা এমপি, অধ্যাপক . শাহেদা রফিক, বোরহান উদ্দিন, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন, দলের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দলের আহ্বায়ক কাইমুল হক রিংকু, বাঞ্ছারামপুরে গুলিতে নিহত নয়নের বাবা রহমত উল্ল্যাহ, লাকসামের নিখোঁজ নেতা সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান ইসলাম হুমায়ুনের ছেলে শাহরিয়ার কবির রতন প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান বিপ্লব।

এর আগে বেলা ১১টায় শুরু হয় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত সেই সমাবেশস্থলে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সমাবেশ শুরুর আগেই দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান অনুসারী নেতাদের ছবিসংবলিত রঙ-বেরঙের টি-শার্ট, গেঞ্জি, ক্যাপ পরে এসে জড়ো হন। ধীরে ধীরে নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় আশপাশের এলাকাও লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন