মুদ্রা হলো বিনিময়ের
একটি মাধ্যম।
বিনিময়ের মাধ্যম
হিসেবে মুদ্রা
আবির্ভাবের আগে মানুষ অনেক রকমের দুষ্প্রাপ্য বস্তু যেমন কড়ি, মূল্যবান পাথর ইত্যাদি ব্যবহার
করত। শুরুতে
ধাতব মুদ্রার
প্রচলন বেশি থাকলেও কালের
বিবর্তনে মানুষ
কাগজী মুদ্রার
দিকে ব্যাপকভাবে
ঝুঁকতে থাকে।
অতিসম্প্রতি, ডিজিটাল
মুদ্রা কাগজী
মুদ্রার জায়গা
নেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করলেও এর সম্ভাবনা নিয়ে রয়েছে এখনো যথেষ্ট সংশয়।
তাই কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের অনুমোদিত
কাগজী ও ধাতব মুদ্রাই
আপাতত বিনিময়ের
সর্বোত্তম মাধ্যম
হিসেবে কাজ করছে। বিনিময়ের
মাধ্যম ছাড়াও
কাগজী মুদ্রার
আরো কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য
রয়েছে। যেমন কাগজী মুদ্রা
সংরক্ষণ ও বহন সুবিধাজনক।
অধিকন্তু কাগজী
মুদ্রা অতি ক্ষুদ্র এককে বিভাজন করা যায়।
তবে সব দেশের কাগজী মুদ্রার ক্ষমতা এক নয়। যেমন পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় সব দেশই তাদের নিজস্ব মুদ্রার পরিবর্তে ফ্রান্সের মুদ্রা ব্যবহার করে থাকে। আবার পূর্ব ক্যারিবিয়ান দেশগুলো মার্কিন ডলারে বিনিময় করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় লাওস এবং কম্বোডিয়ায় নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন থাকলেও মার্কিন ডলারে সেখানকার লোকেরা বিনিময় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ নিজস্ব মুদ্রার মান অতিমাত্রায় অস্থিতিশীল।
তবে কোনো দেশের
অভ্যন্তরে নিজের
মুদ্রার প্রচলন
দিয়ে মুদ্রার
প্রকৃত ক্ষমতা
বোঝা যায় না। যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে
জনবহুল দেশ চীন এবং দ্বিতীয় ভারত।
কিন্তু চীনের
রেনমিনবি বা ভারতের রুপি পৃথিবীর সবচেয়ে
বেশি ব্যবহূত
মুদ্রা নয়। বরং মার্কিন
ডলারের ব্যবহারই
বিশ্বে সবচেয়ে
বেশি। ইউরোপীয়
দেশগুলোর বাইরে
আন্তর্জাতিক লেনদেনে
মার্কিন ডলারের
ব্যবহার একচেটিয়া।
আন্তর্জাতিক লেনদেনে
অভ্যস্ত ব্যবসায়ীরা
ডলারকে একটি নিরাপদ আশ্রয়
হিসাবে বিবেচনা
করে। কারণ ডলারের দামের
ওঠানামা বিদ্যমান
অন্য যেকোনো
মুদ্রার চেয়ে স্থিতিশীল।
তবে গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববাজারে ডলারে
রিজার্ভের পরিমাণ
কমেছে। আরো স্পষ্ট করে বললে, গত দুই দশকে বিশ্বে মার্কিন
ডলারের রিজার্ভ
৭০ শতাংশ
থেকে কমে ৬০ শতাংশে
নেমেছে। সুইফটের
বিশ্বব্যাপী অর্থ প্রদানের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে মার্কিন
ডলারের মাধ্যমে
অর্থের আদান-প্রদান ৩৯ শতাংশের কমে ঠেকেছে। ডলারের
এ শূন্যস্থান
পূরণ করেছে
চীনের রেনমিনবি
এবং অন্যান্য
মুদ্রা। সে সঙ্গে সম্প্রতি
বিশ্বের ভূরাজনৈতিক
কিছু ঘটনা ও রাজনৈতিক
পট পরিবর্তন
একটি প্রশ্নের
জন্ম দিয়েছে,
আন্তর্জাতিক বাজারে
মার্কিন ডলারের
একচেটিয়া কর্তৃত্ব
কি হুমকির
মুখে? আপাতদৃষ্টিতে সে রকম কিছু মনে না হলেও কিছু বিষয় ডলারের
চাহিদা কমাবে
সে কথা বলা যায়।
প্রথমত, বড় চারটি মুদ্রার বাইরে অন্যান্য মুদ্রার তারল্য বৃদ্ধি। মার্কিন ডলারের সঙ্গে অন্য তিনটি বহুল প্রচলিত মুদ্রা হলো ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানিজ ইয়েন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহূত ইউরো।
ঐতিহাসিকভাবে, এ চার মুদ্রা
ব্যতিরেকে অন্যান্য
মুদ্রার বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের প্রচুর সরবরাহ
ছিল না বাজারে, যার কারণে লেনদেনে
খরচ পড়ত অনেক বেশি।
কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার
ও ব্যবহার
যেমন ইলেকট্রনিক
ট্রেডিং প্লাটফর্ম,
স্বয়ংক্রিয় লেনদেন
ব্যবস্থা অন্যান্য
মুদ্রার তারল্যকে
বাড়িয়েছে বহু গুণে। ফলে লেনদেনপ্রতি খরচ কমেছে আগের তুলনায় অনেক গুণ। দেশগুলো
এখন মূল চারটি মুদ্রার
বাইরে অন্য মুদ্রায় স্বাচ্ছন্দ্যে লেনদেন করতে পারে এবং রিজার্ভ
বাড়াতে আগ্রহী।
সহজ কথায়, প্রযুক্তির উদ্ভাবন
ও মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক আইনের
সমন্বয় অন্যান্য
মুদ্রার ব্যবহার
অনেক সহজ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ
ম্যানেজাররা আগের তুলনায় বর্তমানে
রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি দক্ষ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিলের ৫৫টি উদীয়মান বাজার
অর্থনীতির মধ্যে
রিজার্ভ পর্যাপ্ততা
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ৩০টি দেশের রিজার্ভ
ন্যূনতম দরকারি
মাত্রার চেয়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বেশি।
এ অতিরিক্ত
রিজার্ভের অর্থ দেশগুলো বিনিয়োগ
শ্রেণীর সম্পদে
কাজে লাগাতে
পারে।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বিনিয়োগ শ্রেণীর সম্পদের জন্য প্রথাগত ডলার গোত্রের বাইরে অনেক সম্পদের আবির্ভাব হয়েছে যেখানে অতিরিক্ত রিজার্ভের তহবিল বিনিয়োগ করতে দেশগুলো আগ্রহী। এতে করে ডলারের চাহিদা নিম্নমুখী হবে বলেই অনেকের ধারণা।
দ্বিতীয়ত,
রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ। ডলারের
অধিপত্যের প্রশ্নটি
এ মুহূর্তে
সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে
ইউক্রেনে রাশিয়ার
সামরিক আগ্রাসন
এবং তা থেকে উদ্ভূত
পরিস্থিতির কারণে।
রাশিয়ার আগ্রাসনের
বদলা হিসেবে
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র
দেশগুলো রাশিয়ার
ওপর অনেক ধরনের অর্থনৈতিক
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন
ব্যাংকে (বিশেষ
করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র
দেশগুলোয়) জমা থাকা রাশিয়ার
রিজার্ভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। ধারণা
করা হয় যে এ রিজার্ভের পরিমাণ
প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার, যা রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের
এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। অধিকন্তু, সুইফট
ব্যবহারে রাশিয়ান
ব্যাংকের ওপর আন্তর্জাতিক কমিউনিটির
নিষেধাজ্ঞা ডলারে
লেনদেনের ওপর আরেকটি খড়্গ।
স্বভাবতই রাশিয়া চাইছে ডলারের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। আর তা বাস্তবায়নে দেশটি সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন রাশিয়া তুলনামূলক অবন্ধুসুলভ দেশগুলোকে তার তেল এবং গ্যাসের মূল্য রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে পরিশোধের জন্য এরই মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশ এ দাবি মেনে না নিলেও কেউ কেউ এ শর্তে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনতে রাজি।
তৃতীয়ত, রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে নতুন মুদ্রার আবির্ভাব। এ বছরের জুনে ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকার নামের প্রথম অক্ষর নিলে হয় ব্রিকস) ফোরামে ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্রিকস একটি নতুন মুদ্রা চালু করবে। এ মুদ্রা ঝুড়ি (কারেন্সি বাস্কেট) গঠন হবে ব্রিকসের সব দেশের মুদ্রার সমন্বয়ে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটের (এসডিআর) বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এসডিআর হলো আন্তর্জাতিক রিজার্ভ সম্পদ যা আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর সরকারি রিজার্ভের পরিপূরক ধরা হয়। এটি নিজে কোনো মুদ্রা নয়, কিন্তু আইএমএফ সদস্যদের ব্যবহারযোগ্য মুদ্রার একটি সম্ভাব্য দাবি, অর্থাৎ এসডিআর একটি দেশকে তারল্য প্রদান করতে পারে। ঠিক এমনই একটি ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে ব্রিকসের প্রবর্তিত সম্ভাব্য নতুন মুদ্রা নিয়ে। এ ব্যবস্থা ব্রিকসের রিজার্ভকে মার্কিন ডলার থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করবে, অর্থাৎ ডলারের চাহিদা কমাবে। তবে এ পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক বিবৃতি মাত্র। ব্রিকস তাদের রিজার্ভ ডলার থেকে নতুন বাস্কেট কারেন্সিতে স্থানান্তরের ঝুঁকি নেবে কিনা তা পরিষ্কার নয়। তবে নতুন বাস্কেট কারেন্সির পরিবর্তে স্বর্ণমানে (গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড) স্থানান্তরের ঝুঁকি কম ও সহজতর।
বর্তমানে রাশিয়ার অফিশিয়াল রিজার্ভের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি হচ্ছে স্বর্ণ। যেহেতু স্বর্ণের বহন ও স্থানান্তর কাগজী মুদ্রার মতো সহজ নয়, এটা এখনো দেখার বিষয় যে সোনা অথবা ব্রিকস বাস্কেট ডলারের জায়গা নিতে পারে কিনা। তবে নিকট ভবিষ্যতে এমন কোনো সম্ভাবনা কম।
চতুর্থত, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন। আর্থিক জগতে বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়ের একটি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি, যার অন্যতম হলো বিটকয়েন। প্রচলিত কাগজী ও ধাতব মুদ্রা বা ফিয়াট মানির ওপর সরকারের একটা প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এ নিয়ন্ত্রণ দূর করার অভিপ্রায়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির আবির্ভাব, অন্তত ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবক সাতোশি নাকামোতোসহ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে যারা বিশ্বাস করেন তাদের ধারণা এমনই। ফিয়াট মানির নিয়ন্ত্রণ যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীভূত, ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে সেটা একেবারেই বিপরীত, বিকেন্দ্রীভূত। গতানুগতিক নিয়মে অর্থ লেনদেন করতে হলে কোনো ব্যাংকে অবশ্যই অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে। আর ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যম হয়ে যেতে হবে না। অনেকের ধারণা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে লেনদেন শুরু হলে শুধু মার্কিন ডলার নয়, যেকোনো ফিয়াট মানির আধিপত্য কমে যাবে। অনেকে অবশ্য আরো এককাঠি বাড়িয়ে বলেছেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সির আবির্ভাবই মার্কিন ডলারের দুর্বলতার ফল।
অন্যদিকে বিশ্বের অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে নিজেদের ডিজিটাল মুদ্রা প্রবর্তনের। যদিও নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে ডিজিটাল মুদ্রা ফিয়াট মানির চেয়ে আলাদা নয়, কিন্তু ডিজিটাল মুদ্রাবাজারের অন্যান্য সমস্যা, যেমন কম খরচে দ্রুত ট্রান্সফার, লেনদেনের অধিকতর সুরক্ষা এবং মুদ্রামানের ওঠানামা কমাবে বহুলাংশে। যদি তা-ই হয়, তবে ডলারের বাইরে অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার বাড়বে। তাই বলা যায় যে ক্রিপ্টোকারেন্সির সুদিন বা ডিজিটাল মুদ্রার আবির্ভাব ডলারের আধিপত্য কমাবে।
পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক লেনদেনে চীনের আধিপত্য বিস্তার। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অন্যান্য দেশের ওপর একটি চাপ তৈরি করেছে। জনমনে এমন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে যে মার্কিন মুলুকের সঙ্গে মতবিরোধ হলে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ওপরও একইভাবে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এ চিন্তাটা চীনের জন্যই সবচেয়ে বেশি। কারণ বৈদেশিক বাণিজ্যের বিরোধ ছাড়াও তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পূর্ব-পশ্চিমে। তাই চীন চাইছে ডলারের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে। চীন এরই মধ্যে বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাদের সঙ্গে চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জোরদার রয়েছে, তাদের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে চীন। এর ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব তেল রফতানির মূল্য চীনের মুদ্রায় গ্রহণ করতে অসুবিধা না থাকার কথা জানিয়েছে। চীন যদি তার সঙ্গে বাণিজ্যের অংশীদারদের রেনমিনবিতে লেনদেনে কিছুটা সুবিধা দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো অনেক দেশই চীনের এ প্রস্তাবে রাজি হবে। এর প্রভাব অবশ্যই ডলারের চাহিদার ওপর নেতিবাচক হবে।
ডলারের
আধিপত্য কি তাহলে শেষের
শুরু? উল্লিখিত
আলোচনাসাপেক্ষে বলা যায় যে বিভিন্নমুখী চাপ আন্তর্জাতিক লেনদেনে
ডলারের রাজত্বকে
অবশ্যই ঝুঁকির
মুখে ফেলবে।
কিন্তু প্রশ্ন
হচ্ছে, ডলারকে
প্রতিস্থাপনের জুতসই
কোনো বিকল্প
আছে কিনা।
প্রথমত, ডলার এখনো বিশ্বের
সবচেয়ে তরল (লিকুইড) মুদ্রা।
আর এটি সম্ভব হয়েছে
মার্কিন আর্থিক
বাজারের গভীরতা
ও তারল্যের
কারণে।
এছাড়া
মার্কিন ট্রেজারি
বন্ডের ইল্ড বা রিটার্ন
সবসময় ধনাত্মক।
ফলে ডলারে
বিন্যস্ত রিজার্ভের
সত্যিকারের বিকল্প
খুঁজে পাওয়া
কঠিন। বন্ডের
বিশ্ববাজারে ডলারে
ইস্যু করা বন্ডের পরিমাণ
অন্য যেকোনো
মুদ্রায় ইস্যু
করা বন্ডের
চেয়ে অনেক বেশি।
দ্বিতীয়ত, কোনো মুদ্রার আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেনের উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য দরকার সহজে অন্য মুদ্রায় রূপান্তরের বৈশিষ্ট্য। এর জন্য দরকার দেশের শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের জবাবদিহিতা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা সবার বিশ্বাস যে এসব গুণাবলি অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে মার্কিন মুলুকের বেশি রয়েছে। সুশাসনের দিক থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থা সবার সমান নয়, রাশিয়া ও চীন সরকারের জবাবদিহিতার প্রশ্নে অনেক পিছিয়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে একটি মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতার জন্য যতটুকু সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সমমানের অন্য কোনো দেশ তা এখনো অর্জন করতে পারেনি।
পরিশেষে,
অনেক দীর্ঘ
সময় ধরে আন্তর্জাতিক লেনদেনে
মার্কিন ডলারের
ব্যবহার বিশ্বজুড়ে
একটি সহনশীল
ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো বা ইকোসিস্টেম
তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।
নতুন একটি মুদ্রা তার গ্রহণযোগ্য অবকাঠামো
তৈরি করতে বিস্তর সময়ের
প্রয়োজন। তাই আপাতত ডলারের
জায়গা নিতে অন্য কোনো মুদ্রাই অগ্রগামী
নয়। তবে আগামী দুই দশকে ডলারের
আধিপত্য কমে আসবে উল্লেখযোগ্যভাবে এমনটা বিশ্বাস করেন খোদ মার্কিন
নীতিনির্ধারকের অনেকেই।
ড. মোহাম্মদ দুলাল মিয়া: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফাইন্যান্স ও অর্থনীতি বিভাগ, নিজওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওমান