পাকিস্তানে তৈরি ফুটবলের বিশ্বকাপ যাত্রা

বণিক বার্তা অনলাইন

এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ ভ্রমণ শেষ করে ১৩৫৪ সালে ইবনে বতুতা ঘরে ফেরেন। দীর্ঘ সফরের গল্প লিপিবদ্ধ করেন তিনি, বইটি পরবর্তীতে ‘রিহলা-ই ইবনে বতুতা’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। প্রায় সাতশো বছর পর সেই নামকে স্মরণ করিয়ে দিল কাতার বিশ্বকাপ।

এবারের আসরে ফুটবলের নাম রাখা হয়েছে আল-রিহলা। আরবি রিহলা শব্দের অর্থ ভ্রমণ। তবে কাতার বিশ্বকাপের এই বল সেখানে ভ্রমণ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান থেকে।

পাকিস্তানের শিয়ালকোটে অবস্থিত কোম্পানি ফরোয়ার্ড স্পোর্টস। খাজা মাসুদ আখতার হাত ধরে খেলাধুলার সরঞ্জামাদি, বিশেষ করে ফুটবল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা ১৯৯১ সালে। এর তিন বছর পর ১৯৯৪ সালে বিখ্যাত জার্মান সংস্থা এডিডাসের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আসরের জন্য ফুটবল সরবরাহ করে আসছে।

এবার নিয়ে বিশ্বকাপের আসরে টানা তৃতীয়বারের মতো বল সরবরাহ করছে ফরোয়ার্ড স্পোর্টস। ২০১৪ সালের ব্রাজুকা, ২০১৮ সালের টেলস্টার আর এবারের আল-রিহলা বল তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে।

ফুটবলের চাহিদায় বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে ফরোয়ার্ড। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি। ২০০৩ সালকে তাদের জন্য মাইলফলক হিসেবে ধরা যেতে পারে। ওই বছর তারা প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। দেখা যায়, একজন দক্ষ শ্রমিক দিনে বেশি বল তৈরি করতে পারে না। অথচ প্রযুক্তির সহযোগিতায় অনায়াসে ছাপিয়ে যাওয়া যায় সেই সীমাবদ্ধতা। সঙ্গে নিজেরাও তৈরি করল প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

ফরোয়ার্ডের কারখানা থেকে উন্নততর প্রযুক্তিতে প্রথম বলটি তৈরি হয় ২০০৯ সালে। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন হাতে তৈরির প্রয়োজন পড়ে না। উৎপাদন ২০০৫-০৬ সালের চেয়ে দ্বিগুণ এখন। যদিও শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়নি। আগে তিন হাজার শ্রমিক ছিল, বর্তমানে ৪ হাজার ২০০।

এডিডাসসহ বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের জন্য প্রতিমাসে তাদের প্রস্তুতকৃত বলের সংখ্যা সাড়ে ৭ লাখের বেশি।

সাধারণত দুই ধরনের বল প্রস্তুত করে ফরোয়ার্ড স্পোর্টস। প্রথমটি আন্তর্জাতিক আসরের খেলোয়াড়দের জন্য, দ্বিতীয়টি ছাড়া হয় খোলা বাজারে। বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বলের ৩৫ শতাংশ সরবরাহ করছে ফরোয়ার্ড স্পোর্টস। তবে খোলা বাজারে ছাড়া বলের ৭০ শতাংশই থাকবে তাদের।

ফুটবল তৈরিতে ফরোয়ার্ড স্পোর্টসের সঙ্গ একটি চীনা প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠান মিলে ফিফার জন্য ৩ লাখ বল তৈরির চুক্তিতে আবদ্ধ। আর খোলা বাজারে ছাড়া হবে ১ কোটি বল।      

পানিভিত্তিক আঠা ও কালি দিয়ে তৈরি প্রথম বল আল-রিহলা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। নকশায় ওঠে এসেছে কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ঐতিহ্যবাহী নৌকা ও পতাকার ছবি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নও ঘটেছে। অফসাইড নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আল-রিহলা। বলের ঠিক মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ইনারশিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (আইএমইউ) সেন্সর। এই সেন্সর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ ডেটা পাঠাতে সক্ষম।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন