মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হলেন আনোয়ার ইব্রাহিম

বণিক বার্তা ডেস্ক

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। ২৪ বছর আগে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন তিনি। দীর্ঘ লড়াই আর রাজনৈতিক বাঁকবদলের মাধ্যমে গতকাল তিনি মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মালয়েশিয়ায় গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। ভোটাভুটিতে আনোয়ার ইব্রাহিম সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন নেতৃত্বাধীন প্রধান দুই জোটের কেউই পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তৈরি হয় ঝুলন্ত অবস্থা। অবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হন মালয়েশিয়ার রাজা আল সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ। কাউন্সিলকে তিনি বুধবার আলোচনার জন্য আহ্বান জানান। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিমের নাম ঘোষণা করা হয়।

আনোয়ার ইব্রাহিম তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আলোচনা-সমালোচনার তীর সামলেছেন সমানতালে। কারাবরণ করেছেন। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে নতুন দল গঠন করেন। শত দহন সয়ে বারবার আগুনপাখির মতো নিজেকে মেলে ধরেছেন।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময় নামে আখ্যায়িত হতো মালয়েশিয়া। উন্নয়নযজ্ঞে দেশটির দুজন রাজনীতিকের নাম উচ্চারিত হয় জোরেশোরে, যাদের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী . মাহাথির মোহাম্মদ। অন্যজন আনোয়ার ইব্রাহিম। মূলত তিনি ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠজন। তারা দুজন মিলেই তিলে তিলে গড়েছিলেন আধুনিক মালয়েশিয়াকে। নব্বইয়ের দশকে বলা হতো, মাহাথিরের পর আনোয়ারই দেশটির হাল ধরবেন। সে সময় উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়াও আনোয়ার ইব্রাহিম অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু ছেদ পড়ে সে যূথবদ্ধতায়। ১৯৯৮ সালে হঠাৎ বরখাস্ত হন। সমকামিতা দুর্নীতির অভিযোগে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে দণ্ডিত হন বিচক্ষণ রাজনীতিক আনোয়ার ইব্রাহিম।

প্রায় ২২ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে মাহাথির মোহাম্মদ ২০০৩ সালে অবসর নিলে পরের বছর কারাবাস থেকে মুক্তি মেলে আনোয়ারের। নতুন করে তিনি শুরু করেন। মাহাথিরের বারিসান ন্যাসিওনালের (বিএন) বিরুদ্ধে জনমত গড়তে মাঠে নামেন। ছোট ছোট দল নিয়ে গড়েন পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট। সেই জোটকে শক্তিশালী করে ২০০৮ সালে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন।

২০০৯ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নাজিব রাজাক। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নাজিবের দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবি হয়। সে নির্বাচনে জয়ী হয় ইউএমএনওর সাবেক নেতা মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন নতুন জোট পিএইচ। ইতিহাসের কী অদ্ভুত পুনরাবৃত্তি। আনোয়ারের দলের সঙ্গে জোট বেঁধেই ২০১৮ সালে সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথির আবারো মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসেন। তবে জোটের অংশ হিসেবে দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে শিষ্য আনোয়ারের হাতেই ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। হঠাৎ পদত্যাগ করেন মাহাথির। মূলত সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাহাথিরের দলের নেতা মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বিরোধী দল ইউএমএনওর সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসেন। তার নেতৃত্বও টেকসই হয়নি মালয়েশিয়ার মসনদে। ক্ষমতাসীন জোটের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনও পদত্যাগ করেন।

মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আবদুল্লাহ এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবকে। তবে সবকিছুর যবনিকাপাত শেষে আনোয়ার ইব্রাহিমই এখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন