ঋষভের বয়ানে কানতারার দুনিয়া

শানজিদ অর্ণব

দক্ষিণী সিনেমার সর্বশেষ চমক কানতারা। কন্নড় ভাষার এ সিনেমা দর্শককে নতুন গল্প ও নির্মাণের স্বাদ দিয়েছে। কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিতে যশের কেজিএফ যেমন বাণিজ্যিক ধারায় ইতিহাস বদলে দিয়েছে, তেমনি ঋষভ শেঠির কানতারা দর্শকের পাশাপাশি সমালোচকেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। 

কর্ণাটকের সংস্কৃতি ও লোককথানির্ভর এ সিনেমার শক্তি এর গল্পে। স্থানীয় লোককথায় যে জাদুবাস্তবতার শক্তিশালী উপস্থিতি থাকে, তার নিদর্শন হয়ে উঠেছে এ সিনেমা। পরিচালক ঋষভ তার সাফল্যের পেছনে সিনেমার গল্পকেই প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করেন। একই সঙ্গে তিনি মুখ্য চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি ঋষভ শেঠি এক সাক্ষাৎকারে তার সিনেমার অন্তর্নিহিত দর্শন-ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন; জানিয়েছেন, শুরুতে ছবিটি বিভিন্ন ভাষায় মুক্তি দেয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না তাদের। ঋষভের কথায়, ‘‌এটা পরবর্তী সময়ে নির্ধারণ করা হয়। আমি আমাদের মাটি, ঐতিহ্য ও কর্ণাটকের উপকূলের সংস্কৃতি নিয়ে একটা সিনেমা নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম, যা নিয়ে কর্ণাটকের বাকি অংশের মানুষও সচেতন নয়। আমি বিশ্বাস করি কোনো কিছু যত বেশি আঞ্চলিক, ততটাই সর্বজনীন। আমি ‘‘‌ দেইব’’ ঐতিহ্যের মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতির লড়াইকে তলিয়ে দেখতে চেয়েছি। আমি আমাদের কৃষির গল্পও বলতে চেয়েছি। কৃষিজীবীদের জীবন যেন কন্নড় সিনেমায় উঠে আসে, সেটা চেয়েছি। শুরুতে আমরা বড় কোনো আশা করিনি। মনে হয়েছিল আমাদের হয়তো ওটিটিতে যেতে হবে। কিন্তু তারপর তো সিনেমাটা খুব ভালো করল।’

কানতারার কেন্দ্রে ছিল স্থানীয় দেইব বিশ্বাস। আর তার গুরুত্বপূর্ণ আচার দেইব কোলা নৃত্য। এ বিশ্বাস, নাচ ঋষভ দেখে দেখে বড় হয়েছেন। তিনি তার নিজের জন্মভূমি, ভাষা ও সংস্কৃতির গল্প তুলে ধরতে চেয়েছেন। ‘‌‌আমি শিশু বয়স থেকেই  দেইব কোলা দেখছি। আমার পরিবারও এ বিশ্বাসের অংশ। জীবনে যা দেখেছি, তাই কানতারায় দেখাতে চেয়েছি। এটা আমার গ্রামের ঘটনা। একে আমি আমার কল্পনার দুনিয়ায় নির্মাণ করেছি।’

কানতারার গল্প ঋষভের লেখা, ছবিটির পরিচালক ও মুখ্য অভিনেতাও তিনি। এ ছবিতে তিনি যেমন চরিত্রে কাজ করেছেন তেমন করা তার স্বপ্ন ছিল। তাই নিজের ছবিতে সে সুযোগ কাজে লাগাতে দুবার ভাবেননি। তিনি মনে করেন, এ সিনেমার জন্য অন্য কোনো পরিচালক নিলে তিনি সব ঠিক করে তুলে আনতে পারতেন না, যেমনটা এখন পেরেছেন। 

কানতারা কুসংস্কার উসকে দিচ্ছে কিনা তেমন প্রশ্ন-সমালোচনাও সামনে এসেছে। কিন্তু ঋষভ জানিয়েছেন, তিনি তা-ই দেখিয়েছেন, যা নিজে দেখেছেন, বিশ্বাস করেন। তার কথায়, ‘‌কানতারার মূল বার্তা হচ্ছে—প্রকৃতির সামনে সবাই সমান।’ ঋষভ সিনেমা নির্মাণের সময় দেইবে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ করেছেন, যেন গল্প ও উপস্থাপনায় কোনো ভুল না থাকে। তাই তিনি মনে করেন, কুসংস্কারের প্রশ্নটি নিয়ে তার কিছু করার নেই। অনেকটা এসব কারণেই ঋষভ মনে করেন কানতারার হিন্দি রিমেক তৈরি ঠিক হবে না। ভিন্ন সংস্কৃতিতে তার গল্প ঠিকঠাক উঠে আসবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন