ইলোন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের পর অনেকেই জনপ্রিয় এ মাইক্রোব্লগিং সাইট থেকে বিদায় নিচ্ছে। এতে বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে মাস্টোডন ও কাউন্টারসোশ্যালের পোয়াবারো। তবে সম্প্রতি আরেকটি প্লাটফর্ম আলোচনায় জায়গা করে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ স্টোরে শীর্ষ ২০ অ্যাপে স্থান করে নিয়েছে হাইভ।
২২ বছর বয়সী ক্যাসান্ড্রা পপ ২০১৯ সালে হাইভ প্রতিষ্ঠা করেন। সরাসরি টুইটারের ক্লোন না হয়ে জেন জি প্রজন্মের সোশ্যাল অ্যাপ হিসেবে জায়গা করে নিতে চেয়েছে হাইভ। এতে ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও মাইস্পেসের মতো বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপের ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। হাইভের চমত্কার দিক হচ্ছে প্রোফাইলে মিউজিক যুক্ত করার ফিচার, যা পরবর্তী সময়ে অনেক সাইট অনুকরণ করেছে।
অ্যাপটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি টুইটারের মতো স্রেফ টাইমলাইনভিত্তিক নয়। মেইন ফিডের পাশাপাশি এতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গাড়ি, মিউজিক, ফ্যাশন, পোষা প্রাণী, ক্র্যাফট, বই, ভ্রমণ, গেমিং, আর্ট, ফুড ও অন্যান্য টপিকের কনটেন্ট উপভোগের সুযোগ পাবে ব্যবহারকারীরা। এছাড়া কোনো পোস্টে লাইক, কমেন্ট ও রিপোস্ট করার পাশাপাশি হ্যাশট্যাগের সুযোগও রয়েছে হাইভে।
বেশকিছু দিক থেকে টুইটারের পুরনো ব্যবহারকারীরা বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করে হাইভে। পরিচিত ও সহজ নেভিগেশন ফিচারের কারণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করা আরামদায়ক। পোস্ট করার বাটনটি একেবারে সামনে থাকায়
নতুন পোস্ট করতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হবে না ব্যবহারকারীর।
ফেসবুকের মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের মডেল অনুসরণ না করে টুইটারের ফলোয়ারভিত্তিক মডেল অনুসরণ করে হাইভ।
অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের চেয়ে হাইভ ভিন্ন আরেকটি জায়গায়। অন্যদের মতো পার্সোনালাইজেশন অ্যালগরিদম ও ক্রোনোলজিভিত্তিক ফিড কিংবা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মনিটাইজ করে না হাইভ। তার বিপরীতে প্রোফাইলে বেশকিছু ফিচার যুক্ত করতে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এসব ফিচার নিতে ৯৯ সেন্ট থেকে শুরু করে ১ ডলার ৯৯ সেন্ট ব্যয় হয়।
মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণ সম্পন্নের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাইভের ব্যবহারকারী বাড়তে শুরু করে। অ্যাপ ডাটা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের মোট ৭ লাখ ৩৩ হাজার ইনস্টলের ২ লাখ ১৪ হাজারই হয়েছে গত ৩০ দিনে। আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নতুন প্রজন্মের সোশ্যাল অ্যাপটি। সেন্সর টাওয়ার বলছে, হাইভের সাম্প্রতিক ইনস্টলের ৮৬ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের।
ডাটাডট এআইয়ের উপাত্তেও সেন্সর টাওয়ারের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। তাদের প্রাক্কলনে বলা হয়, হাইভের লাইফটাইম ইনস্টল ৭ লাখ ২০ হাজার। আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে শুক্রবার থেকে হাইভের সাইন-আপ বেড়েছে এবং সপ্তাহান্তে এ অ্যাপের ইনস্টল ঊর্ধ্বমুখী। এক্ষেত্রে টুইটারে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
সেন্সর টাওয়ার বলছে, শুক্র, শনি ও রবি—তিনদিনে ১ লাখ ৪৪ হাজার ইনস্টল হয়েছে হাইভ। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২২ হাজার নতুন ইনস্টল হয়েছে। স্পষ্টত, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে অ্যাপটি।
হাইভের সাম্প্রতিক এ উত্থান আরো স্পষ্ট অ্যাপ স্টোরে। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের অ্যাপ স্টোরে হাইভের অবস্থান ছিল ৩৩৮। বর্তমানে অ্যাপ স্টোরে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় অ্যাপটির অবস্থান যথাক্রমে ১৭ ও ২৪। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সোশ্যাল অ্যাপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় স্থান হাইভের।
হাইভের প্রতিষ্ঠাতা ক্যাসান্দ্রা পপ টেক ক্রাঞ্চকে জানান, ২১ নভেম্বর দুপুর নাগাদ অ্যাপটির ব্যবহারকারী ৯ লাখ ৯৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। শিগগিরই এক মিলিয়ন বা ১০ লাখের মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের অ্যাপটি।