কোস্টারিকার জালে স্পেনের ৭ গোল

পরাশক্তি জার্মানিকে হারিয়ে জাপানের চমক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কাতার বিশ্বকাপে গতকাল হেভিওয়েট জার্মানিকে হারানোর পর জাপানিদের উদযাপন ছবি: এপি

কাতার বিশ্বকাপে পরপর দুদিন দুই অঘটন। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হারের পরদিন বিশ্বকাপের পরাশক্তি জার্মানিকে হারিয়ে দিল এশিয়ার দল জাপান। গতকাল ব্লু সামুরাইরা জিতেছে - গোলের ব্যবধানে।

আল-রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আধিপত্য করেও হেরেছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ডাই ম্যানশাফটা প্রথমার্ধে লিড নেয় এবং - ব্যবধানে প্রথমার্ধের বিরতিতে যায়। যদিও দ্বিতীয়ার্ধের জন্যই চমক জমিয়ে রেখেছিল এশিয়া কাপে চারবারের চ্যাম্পিয়ন জাপানিরা। দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে তারা দুই গোল করে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোর কৃতিত্ব দেখায়। হ্যানসি ফ্লিকের জার্মানি শেষ দিকে প্রবল চাপ তৈরি করলেও সমতাসূচক কিংবা জয়সূচক গোলের দেখা আর পায়নি। তাতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম এক বড় অঘটনের জন্ম হলো।

দুই বদলি খেলোয়াড়ের গোলে জিতেছে জাপান। ৭৫ মিনিটে রিতসু দোয়ান সমতা আনার পর আরেক বদলি খেলোয়াড় তাকুমা আসানো কোনাকুনি শটে দুর্দান্ত এক গোলে জাপানের জয় নিশ্চিত করেন। এর আগে ৩৩ মিনিটে ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড ইকাই গুন্দোয়ান পেনাল্টি থেকে গোল করে জার্মানিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে নিজেদের চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করা জার্মানি পরের আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। তাতে কোচের পদে পরিবর্তন আসে। জোয়াকিম লুভের জায়গায় দায়িত্ব পান ফ্লিক। তিনি দলটাকে গুছিয়ে এনেছিলেন। যদিও কাতারে শুভসূচনা হলো না। হারে গ্রুপ থেকে তাদের উত্তরণ ঝুঁকিতে পড়বে। ২৭ নভেম্বর পরের ম্যাচে তারা মুখোমুখি হবে শক্তিশালী স্পেনের এবং ডিসেম্বর শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ কোস্টারিকা।

জার্মানি ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ২০১৪ সালে শিরোপা জয় ছাড়াও চারবারের রানার্সআপ এবং চারবার তৃতীয় স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে, জাপান আগের ছয়বারের অংশগ্রহণে তিনবার খেলেছে শেষ ষোলোয়। 

এদিকে, গতকাল আরেক ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে মরক্কো। চার আসর বাইরে থাকার পর রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেরে মরক্কো। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় ঘটে আরব দলটির। তবে এবার কাতারে ইতিবাচক সূচনা করল উত্তর আফ্রিকার দেশটি। গতকাল আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে তারা রুখে দিয়েছে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে। কাতার বিশ্বকাপে আরব দেশগুলোর চমক চলছেই। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের ঐতিহাসিক জয়ের পর নিজ নিজ ম্যাচে ড্র করার কৃতিত্ব দেখাল আরবের দেশ তিউনিসিয়া মরক্কো।

এফ গ্রুপে ২৭ নভেম্বর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হবে মরক্কো। ডিসেম্বর শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ কানাডা। নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছে মরক্কো। বিশ্বকাপে তাদের সেরা সাফল্য শেষ ষোলো। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো আসরে তারা নকআউট পর্বে ওঠার কৃতিত্ব দেখায়।

মরোক্কান কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই গোলবারের নিচে আস্থা রাখেন ইয়াসিন বুনোর ওপর। এছাড়া ডিফেন্সের চার প্রহরী হিসেবে একাদশে রাখা হয় অধিনায়ক রোমাইন সাইস, আশরাফ হাকিমিম নায়েফ আগুয়ার্দ নুসাইর মাজরাই। আক্রমণ ব্রিগেডে ছিলেন হাকিম জিয়েখ, ইউসেফ এন-নেসিরি সোফিয়ানে বোউফল। আর আক্রমণভাগের সঙ্গে বলের সংযোগ ঘটানোর দায়িত্বে ছিলেন সোফিয়ান আমরাবাত। অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়ার সৈন্যশিবিরে ছিলেন লুকা মডরিচের মতো পরীক্ষিত তারকা, ফরোয়ার্ড ইভান পেরিসিচ আন্দ্রে ক্রামারিচ। গত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তোলা খেলোয়াড়রা অবশ্য কাতারে প্রথম ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেননি।

আল বাইত স্টেডিয়ামে মরক্কোর খেলা মন কেড়েছে সবার। সুশৃঙ্খল দলটির খেলোয়াড়রা ছিলেন প্রাণশক্তিতে ভরপুর, যারা প্রতিপক্ষের ওপর প্রেস করে খেলেছে, তেমনি দারুণভাবে রক্ষণও করেছে। আশরাফ হাকিমি হাকিম জিয়েখ অবিশ্বাস্য পারফর্ম করে ক্রোয়াটদের হতাশ করেন।

মরক্কোকে পয়েন্ট এনে দেয়ার পেছনে বড় অবদান রাখেন বুনো। প্রথমার্ধের শেষ সময়ে ভ্লাসিচের দুর্দান্ত এক প্রচেষ্টা তিনি রুখে দেন। তাতে প্রথমার্ধ গোলশূন্য রাখতে সমর্থ হয় আরব দেশটি। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরো সুশৃঙ্খলভাবে খেলে ক্রোয়েশিয়াকে হতাশ করে। সময় শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়াকে সুযোগ তৈরির কোনো সুযোগই দেয়নি তারা। মডরিচের একটি ইনসুইং শট ক্লিয়ার করেন এন-নেসিরি। অর্ধে মরক্কান গোলবারের উল্টোপাশেও উত্তেজনা ছিল। আশরাফ হাকিমি ফ্রিকিকের বলে দূরপাল্লার অনবদ্য শট নিয়েছিলেন, যা ক্রোয়াট গোলকিপার লিভাকোভিচ সেভ করেন দারুণ প্রচেষ্টায়। মাজরাইয়ের একটি শটও সেভ করেন লিভাকোভিচ।

বল দখলে ক্রোয়াটরা এগিয়ে থাকলেও মরক্কোর জমাট রক্ষণ আর আত্মবিশ্বাস জিততে দেয়নি ইউরোপের দেশটিকে। ম্যাচ থেকে পয়েন্ট অ্যাটলাস অব লায়ন্স খ্যাত মরক্কোর জন্য দারুণ ফলই বলতে হবে। 

উল্লেখ্য, রাশিয়া বিশ্বকাপে ৬৪ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি ছিল গোলশূন্য ড্র, যদিও কাতারে সর্বশেষ চার ম্যাচের তিনটিই গোলশূন্য হলো। মঙ্গলবার মেক্সিকো-পোল্যান্ড ম্যাচের পর গোলশূন্য ড্র করে তিউনিসিয়া ডেনমার্ক। কাল করল মরক্কো ক্রোয়েশিয়া। 

কোস্টারিকার জালে স্পেনের গোল: এদিকে, বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনা পেল স্পেন। গতকাল রাতে গ্রুপের ম্যাচে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা - গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকাকে। বিশ্বকাপে প্রথম কোনো দলকে সাত গোল দিল স্পেন এবং বৈশ্বিক আসরে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় জয়।

স্পেনের হয়ে গোল করেন মোট ছয়জন। ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ফেরান তোরেস (৩১ ৫৪ মিনিট) করেন জোড়া গোল। এছাড়া একটি করে গোল করেন দানি ওলমো (১১ মিনিট), মার্কো আসেনসিও (২১ মিনিট), গাভি (৭৪ মিনিট), কার্লোস সোলের (৯০ মিনিট) আলভারো মোরাতা (৯২ মিনিট)

দুর্দান্ত এক গোল করে আলোচনায় বার্সেলোনার মিডফিল্ডার গাভি। পেলে ম্যানুয়েল রোসাসের পর তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করেন তিনি। গতকাল তার বয়স ছিল ১৮ বছর ১১০ দিন। পেলে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ১৭ বছর ২৪৯ দিন রোসাস ১৮ বছর ৯৯ দিন বয়সে বিশ্বকাপে গোল করেন। তাদের দুজনের পরই এখন গাভি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন