রফতানি বাড়লে কর্মসংস্থানেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি। সম্প্রতি চামড়া চামড়াজাত শিল্পের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

দেশের চামড়াজাত শিল্পের আকার কর্মসংস্থান বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই

চামড়া শিল্পে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ রয়েছে। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। সব ট্যানারি চালু হয়নি। স্থানান্তরিত ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ১৪০টি চালু রয়েছে। এখানে ৬০ হাজার কর্মসংস্থান রয়েছে। এছাড়া চামড়াজাত শিল্পে অনেক ফ্যাক্টরি রয়েছে, সেখানেও লক্ষাধিক কর্মসংস্থানসহ সব মিলিয়ে দুই লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। করোনার আগে আমাদের ব্যবসা ভালো ছিল। করোনাকালেও খারাপ ছিল না। বর্তমানে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমরা রফতানি ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। রফতানি বাড়াতে পারলে কর্মসংস্থান আরো বাড়বে।

খাতে যে সংখ্যক জনবল প্রয়োজন হয়, তা কি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গড়ে উঠছে? এক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা রয়েছে কিনা?

চামড়া চামড়াজাত শিল্পে যে সংখ্যক জনবল প্রয়োজন তা আমরা পাচ্ছি না। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে যারা শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে এসেছে সেটা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আমি মনে করি, বিষয়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। বর্তমানে বিদেশ থেকে টেকনোলজিস্ট নিয়ে আসতে হয়। আমাদের প্রত্যেক ফ্যাক্টরিতেই বিদেশী টেকনোলজিস্ট রয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়া করার জন্য ভারত ইতালির টেকনোলজিস্টরা এখানে কাজ করছেন। আগে আমরা দেশের টেকনোলজিস্ট দিয়েই কাজগুলো সম্পন্ন করেছি কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠান থেকে যারা বের হচ্ছেন তারা অনেকেই এখানে চাকরি করছেন না। অন্য সেক্টরে চলে যাচ্ছেন। ফলে শিল্প রক্ষায় আমাদের বিদেশনির্ভর হতে হয়েছে।

পুরোপুরি কারিগরি জ্ঞাননির্ভর খাতে চাকরিপ্রার্থীদের দক্ষতা সন্তোষজনক?

এখানে যারা চাকরি করছেন তাদের কাজে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। সবাই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তবে একসময় আমরা দেশের টেকনোলজিস্ট দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে পেরেছি কিন্তু দেশীয় টেকনোলজিস্টদের আমাদের শিল্পে আগ্রহ কম থাকায় সেই জায়গায় বিদেশী টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করতে হচ্ছে।

খাতে কর্মজীবনের শুরুতে প্রকৌশলীদের কী হারে বেতন দেয়া হয়?

যারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে তাদের শুরুতে ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে কোয়ালিটি ভালো হলে এবং ভালো দক্ষতা থাকলে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে লেদার টেকনোলজিস্ট হিসেবে দেশীয় গ্র্যাজুয়েট যারা চামড়ার গুণগত মান নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তাদের আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন রয়েছে।

যেসব প্রতিষ্ঠান চামড়া পাদুকা শিল্পবিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের সঙ্গে আপনাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে?

আমরা বিভিন্ন সময়ে তাদের পরামর্শ নিয়ে থাকি। জুতার স্যাম্পল বা ডিজাইন তৈরি, চামড়া টেস্টিং করাসহ নানা বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন রয়েছে। যদিও বাংলাদেশে চামড়ার কিছু টেস্টিং হয় না সেগুলো বিদেশী কোম্পানি থেকে করতে হয়। অভ্যন্তরীণ যেসব টেস্টিং হয় সেগুলোর জন্য আমরা তাদের সঙ্গে পরামর্শ করি। যেহেতু তারা টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করে, তাই বিভিন্ন সময়ে তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়।

পরিবেশ সনদ নিয়ে খাতে এক ধরনের জটিলতা রয়েছে। বিষয়ে আপনারা কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি?

আমাদের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা (সিইটিপি) পুরোপুরি কার্যকর নয়। ১৪০টি ট্যানারির ক্যাপাসিটি সিইটিপি বহন করতে পারে না। বিশেষ করে কোরবানির সময়। আমাদের অনেক ট্যানারিকে পরিবেশ সনদ দেয়া হয়নি। পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স নবায়ন করেনি। মাত্র ১৭টি ট্যানারিকে পরিবেশ সনদ দেয়া হয়েছে। সিইটিপি নিয়ে আমরা সমস্যায় রয়েছি। আন্তর্জাতিকভাবে সবাই এখন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) ছাড়পত্র দেখতে চায়। এটি ছাড়া আমরা আমাদের চামড়ার মূল্য পাচ্ছি না। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ পাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু এর অন্তরায় সিইটিপি ডাম্পিং ইয়ার্ড। দুটি আমাদের দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন