
স্পেনের নাভার অঞ্চলে অবিশ্বাস্য এক
আবিষ্কারে নড়েচড়ে বসেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেই প্রত্নবস্তুটি হলো ব্রোঞ্জের তৈরি
হাত, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘হ্যান্ড অব ইরুলেগি’ বা ‘ইরুলেগির হাত’। যা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের
সামনে খুলে দিয়েছেন নতুন একটি দুয়ার।
দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়,
প্রাচীন স্প্যানিশ এ প্রত্নবস্তুতে ৪০টি অক্ষরে খোদাই করা আছে পাঁচটি প্রাচীন শব্দ।
এর মাধ্যমে আদি বাস্ক ভাষার উত্সমূল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে, এমনটাই ধারণা ভাষাবিজ্ঞানীদের।
কয়েক হাজার বছর ধরে টিকে থাকা বাস্ককে
বলা হয় রহস্যময় ভাষা। কারণ এটি মূল বা অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও এখনো
টিকে আছে। ভাষাবিদরা বিষয়টি নিয়ে যারপরনাই বিস্মিত।
দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের পিরেনিজ পর্বতমালার পশ্চিম কোণে অবস্থিত স্পেনের বাস্ক স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের ভাষা এটি। এখানকার আদিবাসী ভাষাগত গোষ্ঠী বাস্ক কথা বলেন এ ভাষায়। অনেকে ধারণা করেন যে, বাস্করা ১৪ হাজার বছরের প্রাচীন মানুষদের উত্তরসূরী। তবে ভাষাটি কোথা থেকে এসেছে, তা কেউ বলতে পারবেন না। প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভাষাবিদরা এ বিষয়ে গবেষণা করেও এতদিন কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
ধারণা করা হচ্ছে, হ্যান্ড অব ইরুলেগি
প্রাচীন এ ভাষার উত্স অনুসন্ধানে সহযোগিতা করবে। ২০২১ সালের জুনে নাভারের রাজধানী পামপ্লোনার
দক্ষিণ-পূর্বে ইরুলেগুইর একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষে লৌহ যুগের এ ব্রোঞ্জের হাতের হদিস
মেলে। এতদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নাভারের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান মারিয়া চিভিত সম্প্রতি
অভাবনীয় আবিষ্কারটির কথা ঘোষণা করেন।
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর ভাস্কনবাসীদের
আমলে এই হাত তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে মারিয়া চিভিত বলেন, হ্যান্ড অব ইরুলেগি
যেন সরাসরি ভাস্কানদের কণ্ঠস্বর আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
হাজার বছর আগে নাভার অঞ্চলের বাসিন্দারা এ ভাষার কথা বলত। ভাস্কানদের এ প্রত্নবস্তুর ওপর খোদাই করা পাঁচটি শব্দের প্রথমটি ‘সোরিওনেকু’ যা বর্তমান বাস্ক ভাষায় ‘জোরিওনেকো’ শব্দের সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়। এ শব্দের অর্থ ‘সৌভাগ্য’।
সোরিওনেকু শব্দটির সঙ্গে আরো চারটি
শব্দ রয়েছে যার অর্থ ততটা স্পষ্ট নয়। ভাস্কানদের মনে করা হয় লৌহযুগের উপজাতি, যাদের
ভাষা থেকে আধুনিক বাস্ক ভাষার উদ্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রান্সিসকো
ফ্রাঙ্কো স্পেনের ক্ষমতা দখলের পর প্রাচীন বাস্ক ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও বাস্কের
বাসিন্দারা তা গোপনে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
প্রসঙ্গত, সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে পূর্ব
বা ইন্দো-ইউরোপীয়রা তাদের নিজস্ব ভাষা নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন। ধারণা করা হয়, বেশিরভাগ
ইউরোপীয় ভাষার উৎস এখানে। কিন্তু বাস্ক ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় উত্স থেকে আসেনি। এটি মূলত
সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ইউরোপের একমাত্র জীবিত ভাষা— যার সঙ্গে অন্য কোনো ভাষার সম্পর্ক
নেই।