ইআরডির সেমিনারে বক্তারা

ইইউর শুল্কমুক্ত সুবিধা বহালে প্রয়োজন আগাম প্রচেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে এভরিথিং বাট আর্মস বা ইবিএ সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়ে আসছে। তবে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের তিন বছর পর থেকে বাংলাদেশ সুবিধা নাও পেতে পারে। প্রেক্ষাপটে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে ইইউর বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা ধরে রাখতে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ন্যাশনাল সেমিনার অব এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। উদ্বোধনী সমাপনী উভয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি . আহমদ কায়কাউস।

সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর আরো ছয় বছর আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে এখন থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা চালাতে হবে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া জাপানের মতো বাণিজ্য অংশীদার দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী ক্রান্তিকালীন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা যাতে পাওয়া যায়, সে ব্যাপারেও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এলডিসি গ্রুপভুক্ত অন্য দেশগুলো এরই মধ্যে সংস্থাটির কাছে উত্তরণের পর ছয় বছর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসে একটি সংশোধিত প্রস্তাব পেশ করেছে। বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত লাভের জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড় নিয়মিত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে শুধু যে উন্নততর কৌশল কর্মপরিকল্পনাই তৈরি হবে তা নয়, বরং এর ফলে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে অংশীদারত্বমূলক মনোভাব তৈরি হবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতির থেকে বেশী শক্তিশালী। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে স্থানীয় চাহিদা জোগান। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি এবং শিল্পায়নের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে, যা আমাদের অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং রফতানির বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।

সমাপনী অধিবেশনের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিজ গুয়েইন লুইস উত্তরণকে টেকসই করবার লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত, পরামর্শমূলক, সময়ভিত্তিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য মসৃণ উত্তরণ কৌশল প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালানোর ওপর তারা জোর দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন