ফেনী সদরের সুন্দরপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব লিয়াকত আলী। তার তিন সন্তানই প্রবাসী। বছর তিনেক আগেও সন্তানরা রেমিট্যান্স পাঠালে তা তোলার জন্য ফেনী শহরে যেতে হতো। এজন্য বৃদ্ধ লিয়াকত আলীর খরচ হতো ২০০ টাকার বেশি। টাকা নিয়ে ফিরতে গিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কায়ও থাকতে হতো তাকে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি একেবারেই পাল্টে গেছে। সন্তানরা রেমিট্যান্স পাঠালে এখন আর লিয়াকত আলীকে শহরে যেতে হয় না। বরং বাড়ির দরজার বাজার থেকেই টাকা তুলতে পারছেন তিনি।
বছর দুয়েক আগে সুন্দরপুর বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটির এজেন্ট ওমর ফারুক নিজেই প্রবাসী পরিবারের ঘরে ঘরে রেমিট্যান্সের অর্থ পৌঁছে দিচ্ছেন। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখছেন। শুধু ওমর ফারুকই নয়, একই বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড। ওই দুই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটও রেমিট্যান্সের অর্থ প্রবাসীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, শুরুর দিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ও সংশয় ছিল। কিন্তু পরে সব সংশয় দূর হয়ে গেছে। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ পুরুষ ও নারীরা নির্দ্বিধায় এজেন্ট আউটলেটে আসছেন। নিজেদের আগ্রহে হিসাব খুলছেন। স্বজনদের রেমিট্যান্সের অর্থ নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে বাড়ি ফিরছেন। প্রয়োজন মনে করলে আমরা নিজেরাই অনেকের বাড়ি গিয়ে রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়ে আসছি। প্রবাসী পরিবারগুলোও এজেন্টদের নিজেদের অংশ বলেই মনে করছেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগকৃত এজেন্টরা ২০ হাজার ১৭৭টি আউটলেট চালু করেছেন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৩৮৪টি আউটলেটই চালু হয়েছে দেশের গ্রামাঞ্চলে। বাকি ২ হাজার ৭৯৩টি আউটলেট শহরাঞ্চলে চালু হলেও এগুলোর অবস্থান মূলত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায়।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকগুলোর নিয়োগ করা একাধিক এজেন্ট বলেন, আমাদের কাছে এমন অনেক গ্রাহক আসছেন, যারা কোনো দিন ব্যাংক হিসাব খুলবেন বলে কল্পনাও করেননি। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ শহরে গিয়ে ব্যাংকের হিসাব খুলতে ভয় পেতেন। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর ওই গ্রাহকরা আউটলেটে এসে হিসাব খুলছেন। কেউ ভবিষ্যতের কথা ভেবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় করছেন। আমরাও সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
তবে উজ্জ্বল সম্ভাবনার মধ্যেও শঙ্কা দেখছেন এজেন্টদের কেউ কেউ। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একটি ব্যাংকের এজেন্ট বলেন, একই বাজারে চার-পাঁচটি ব্যাংক এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। এতে গ্রাহক ধরার জন্য এজেন্টদের মধ্যে অনৈতিক প্রতিযোগিতা দেখা দিচ্ছে। অনেকে মুনাফায় আসতে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। এজন্য এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো বেশি স্বচ্ছতা ও সতর্কতা দরকার।